খুলনা : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিনের চেয়ে রাতে দালালের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তারা গভির রাত পর্যন্ত হাসপাতালে অবস্থান করেন। সুযোগ পেলেই ওয়ার্ডে যেয়ে রোগীর স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে অন্যত্র পরীক্ষা নিরিক্ষার পরামর্শ দেয় এবং মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। দালালদের দৌরাত্ম, অসাধু কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, দলবাজি, কর্তব্যে অবহেলা, ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের কারিশমা আর ডাক্তারদের বাণিজ্যিক মনোভাবে তৃণমুলের স্বাস্থ্য সেবা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। মফস্বলের সরকারী হাসপাতালে দুপুরের পর অধিকাংশ ডাক্তাররা থাকেনা। নিস্ব: অসহায় মানুষগুলো সরকারের সাপ্লাইকৃত উন্নতমানের ওষুধ পায়না। আর মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা প্রতিদিন ছুটছে ভারতে। চিকিৎসার নামে চলছে শুভংকরের ফাঁকি। প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চলছে কসাইবৃত্ত। খুলনা মেডিকেল এমনকি বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে সিরিয়ালের নামে চলছে ক্ষমতা ও লেনদেন বাণিজ্য। রোগীদের সেবা নিতে হয় অর্থের বিনিময়ে।
সূত্রমতে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীদের নিদারুন কস্ট ভোগ করতে হয়। রোগী এসে এ্যাম্বুলেন্স থেকে নামতেই শুরু হয় অর্থের লেনদেন। ট্রলিতে করে জরুরী বিভাগে রোগী নিতে হাসপাতাল কর্মচারীদের ১৫০ টাকা থেকে দুইশ টাকা দিতে হয়। আবার রোগী ভর্তির জন্য জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত সেবিকাদের টাকা দিলেই দ্রুত ভর্তি করে নেয়। রোগী তার নির্দিষ্ট বেডে নিতে আবার ট্রলি টানার জন্য ১০০ টাকা নেয়। যতবার রোগীকে উপর থেকে নিচে নেয়, ততবার একশ টাকা দেয়া লাগে। তাছাড়া জরুরী রোগীকে চিকিৎসকের নির্দেশে বিভিন্ন ব্যবস্থা দিতে আলাদা অর্থ দিতে হয়। তদবীর আর টাকা দিলেই মুহুর্তে এখানে সিট পাওয়া যায়। কয়রা উপজেলা থেকে স্টোক আক্রান্ত হয়ে শনিবার সকালে এক রোগী এখানে এসে ভর্তি হয়। তার স্বজনেরা জানান, টাকা ছাড়া এখানে কর্মরত কোন নার্স বা ওয়ার্ডবয় কাজ করেনা। টাকার অংকের উপর নির্ভর করছে রোগী কত দ্রুত সেবা পাবে। টাকা কম হলে সেবা পেতে দেরী হয়। তিনি বলেন, তার রোগীকে একটা ইনজেকশন দেয়ার জন্য নার্সকে ১০০ টাকা দেয়া হয়। তারপরও দীর্ঘ ৪৫ মিনিট পর এসে ইনজেকশন দেয়। রোগীকে উপর নীচে উঠানামা করতে প্রতিবার ১০০ থেকে ২০০ টাকা দিতে হয়।
মফস্বলের অনেক সরকারী ডাক্তারও তাদের কমিশন বাণিজ্যের কারণে পাঠিয়ে দিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল নামধারী কসাইখানাগুলোতে। আর বিবেকবর্জিত অনেক ডাক্তারই চেম্বারে বসে নানা কৌশলে নিরীহ অসহায় রোগীদের নানা টেস্টের নামে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছেন।
এক অনুসন্ধানে জানা যায়, সাধারণত প্রশাব পায়খানা, রক্ত, কফের মত পরীক্ষার জন্য রোগীর কাছ থেকে আদায় করা ফি ২০-৩০ শতাংশ কমিশন নেন চিকিৎসকরা। অন্যান্য পরীক্ষা ও প্রযুক্তিভেদে ৩০-৫০ শতাংশ কমিশন তদের দিতে হয়। হাসপাতালে রোগী পাঠানোর ক্ষেত্রে ১০-২০ শতাংশ, থেরাপির ক্ষেত্রে ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দেয়া হয়। কমিশনের টাকা কেউ নেন মাসে, কেউ সপ্তাহে আর কেউ দিনে।
খুলনার কৃতি সন্তান সাবেক বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: সুশান্ত রায় বলেন, কমিশন বাণিজ্যের জন্য কেবল চিকিৎসকদের দায়ী করলে চলবে না। সংশ্লিষ্ট সবাই এর জন্য দায়ী। তবে সংশ্লিষ্ট সব সেক্টর থেকে যার যার মত করে এ কমিশন বাণিজ্য বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে। আর সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে এ ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষ করে ডাক্তারদের নৈতিকতা চর্চার বিষয়ে বিএমডিসি, ঔষুধ কোম্পানীর ক্ষেত্রে ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, হাসপাতাল বা ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই কমিশন বাণিজ্য ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারে।