ইন্দ্রজিৎ টিকাদার, বটিয়াঘাটা প্রতিনিধি : দীর্ঘ ৮ বছর পর খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের দিনক্ষন ঠিক হয়েছে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক এ সম্মেলন। তবে আগামী এই সম্মেলনে কারা হবেন কাউন্সিলর? এ নিয়েই উপজেলার নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের পাশাপাশি উৎসাহও বিরাজ করছে। ইতোমধ্যেই ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন বাস্তবায়ন করতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার উপজেলা আ’লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
তবে আগামী সম্মেলনের পদ নয় কাউন্সিলর হতেই স্থানীয় আওয়ামীলীগের মধ্যে চলছে লবিং গ্রুপিং। এমনকি সম্মেলনে কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে বিস্তর অভিযোগও রয়েছে। তৃণমূলের ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতারা কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে অনেকে হতাশাও প্রকাশ করছে।
এদিকে, সম্মেলনে কাউন্সিলর নির্বাচনেই উঠে এসেছে বিভিন্ন অভিযোগে, দীর্ঘ আট বছর ধরে বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে বা নেই, তা নেতা কর্মীরা আদউ জানতে পারিনি । তাহলে কিভাবে হবে এ সম্মেলনের কাউন্সিলর নির্বাচন? দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও আট বছরে এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটির দেখা মেলেনি বলে অনেক ত্যাগি নেতা-কর্মীদে মন্তব্য করেন। এমনকি সভাপতি সম্পাদক দিয়েই চলছে উপজেলা ও অধিকাংশ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটি। উপজেলা প্রায় সাতটি ইউনিয়ন কমিটির চিত্রও একই। দলীয় গঠনতন্ত্রে রয়েছে কমিটিতে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কাউন্সিলন নির্বাচন করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলর নির্বাচনে রয়েছে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, এমন তথ্যই জানালেন জেলা আওয়ামীলীগের একটি সূত্র ।
তবে স্থানীয় আওয়ামীলীগের মধ্যে অভিযোগ ও ক্ষোভ বিরাজ থাকলেও দীর্ঘ আট বছর পরে সম্মেলন হবে , তাই অভিযোগ বা ক্ষোবের মাঝে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্যনীয়। ইতিমধ্যে সম্মেলনকে ঘিরে সভা মঞ্চ তৈরি থেকে শুরু করে উপজেলা সদর সহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কেন্দ্রীয় নেতা ও এমপি দের ছবি সম্বলিত প্যানা-পোস্টে ও মাইকিং করে এলাকায় সাজ সাজ রব সৃষ্টি হয়েছে ।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে সাবেক উপজেলা আ’লীগের সভাপতি পঞ্চানন বিশ্বাস এমপির সাথে বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খানের প্রতিদন্ধীতা হলে পাঞ্চানন বিশ্বাস এমপি সম্মেলন নির্বাচন থেকে সভাপতি পদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলে উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি আশরাফুল আলম খান ও জেলা পরিষদের সদস্য দিলিপ হালদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনকে সামনে রেখে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে যাদের নাম জোরে শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, সভাপতি পদে ২ জন। বর্তমান উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান ও জলমা ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মোল্লা মোঃ মিজানুর রহমান (বাবু)। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৪ জন । তারা হলেন যথাক্রমে বর্তমান উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য দিলীপ হালদার, উপজেলা আ’লীগ নেতা ও বটিয়াঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান হুইপ তনয় পল্লব বিশ্বাস রিটু ও জলমা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিধান রায় এবং উপজেলা আ’লীগ নেতা রবীন্দ্রনাথ দত্ত । তবে সম্মেলনের দিন যতই এগিয়ে আসবে বিভিন্ন পদে প্রর্থীর সংখ্যা ততই বাড়তে পারে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যথাসময়ে সম্মেলন না হওয়ায় নেতৃত্ব তৈরিতে বাঁধা এবং হাতে গোনা কয়েকজনের কব্জায় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বৃহত্তম দলটির কার্যক্রম। মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী কিছু সংগঠনগুলোরও অবস্থা অনেকটাই একই রকম। যার ফলে হতাশায় ভুগছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
নেতাদের সঙ্গে কর্মীদের সেতু বন্ধন না থাকায় দূরত্ব তৈরি হয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে নেতৃত্বের। বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগ বিভিন্ন উপজেলা কমিটি গুলোতে সম্মেলনের পরিবেশ তৈরি করার ঘোষণা দেন। জলমা ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন হওয়ার দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর ১৭ দিন পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি দলটির সভাপতি-সম্পাদক। তারা দুজনেই দল পরিচালনা করছেন এমনটাই দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। শুধু দলই না যে কোন সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি যদি না থাকে তা হলে ওই কমিটি ব্যর্থ কমিটি বলে বিবেচিত হবে। এমনকি ওই কমিটির অস্তিত্বই আশা করা যায় না।
দলীয় সূত্রে আরো জানান যায়, নিয়মিত সম্মেলন না হওয়ায়, নেতা তৈরি না হওয়া, প্রতিযোগিতা না থাকা, নেতা ও কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে হাইব্রিড নেতারা চলে এসেছেন সামনের কাতারে। পরিক্ষীত অনেক নেতা-কর্মী চলে গেছেন পেছনের সারিতে। অতি দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে সুসংঘঠিত না করতে পারলে আগামীতে বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে হবে দলটিকে। আর এই ভুলের মাশুল দিতে হবে ত্যাগী নেতাকর্মীদের।
এছাড়াও আওয়ামীলীগের অনেক ত্যাগী কর্মীদের দাবি, আগামী সম্মেলনে যেন নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে কাউন্সিলর নির্বাচন করা হয়। আর নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে আগমী সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসবে। তাহলেই আগামী দিনে বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামীলীগের মধ্যে সাংগঠনিক বন্ধন তৈরি হবে বলে অনেকেই মনে করছেন দলীয় নেতা কর্মীরা। এমনকি জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা হাইব্রিট নেতারা যেন কাউন্সিলরে স্থান না পায় সেই দাবিও জানিয়েছেন জোরে সোরে। তাহলেই এবারের সম্মেলন হবে সার্থক ও প্রাণবন্ত।