খুলনার বাজার ভেজাল খাদ্যে সয়লাব

প্রকাশঃ ২০২৩-০২-১৯ - ১২:২১

খুলনা :  খুলনাঞ্চালে ভেজাল খাদ্যদ্রব্যে বাজার সয়লাব। খাদ্যের বিষাক্ততায় নানা ধরণের জটিল রোগ এখন প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে। তাই বাজারজাত সকল খাদ্য ও পানীয় বিষ ও ভেজালমুক্ত নিশ্চিত করা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। ভেজাল খাদ্যে বাজার ভরে থাকলেও প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের তেমান কোন মাথা ব্যথা নেই। খুলনার বিভিন্ন উপজেলার হাট- বাজারে প্রতিনিয়ত ভেজাল খাদ্য কেনা বেচা হলেও দেখার যেন কেউ নেই। নগরী এবং উপজেলা গুলোতে খাদ্য পরিদর্শকের পদ থাকলেও তাদের দায়-দায়িত্ব পরিলক্ষিত হয় না। অভিযোগ রয়েছে যথা নিয়মে মাসহারা প্রদান করলেই অফিসে বসে কাগজ কলমে কর্তব্য পালন সম্পন্ন হয়ে যায়। দীর্ঘ আন্দোলন ও ব্যাপক জনসমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ প্রণীত ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। সূত্রমতে, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে নিয়মিত সকল খাদ্য ও পানীয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ল্যাবে পরীক্ষা করে তার ফলাফল প্রকাশ করার কথা। উপজেলা এবং জেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে কর্মরত খাদ্য পরিদর্শকরা ল্যাবে নিয়মিত খাদ্য পরিদর্শন করেন না। ফলে ভেজাল খাদ্য বিক্রেতারা তাদের এ কাজ থেকে বিরত হয় না।

 খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে হাট-বাজারে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রাখা চাল, ডাল, লবণ, তেল থেকে শুরু করে প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যে নিয়মিত ভেজাল দেয়া হয়। তাছাড়া বাজারে বিক্রয়ের জন্য রাখা বিভিন্ন ফল ও শাক-সবজিতেও ব্যাপক আকারে ভেজাল দেয়া হয়ে থাকে। বাজারে খোলা অবস্থায় আয়োডিন বিহিন লবণ প্রতিনিয়ত বিক্রি করা হলেও তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সেদিকে নজর নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২০১৫ সালে ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাব ৮২টি খাদ্যপণ্য পরীক্ষা করে। এতে প্রায় গড়ে ৪০ শতাংশ খাদ্যেই মানবদেহের জন্য সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৩ থেকে ২০ গুণ বেশি নিষিদ্ধ ডিডিটি, অলড্রিন, হেপ্টাক্লোরসহ অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান পাওয়া যায়। বাজারের ৩৫ শতাংশ ফল ও ৫০ শতাংশ শাক-সবজির  নমুনাতে বিষাক্ত বিভিন্ন কীটনাশকের উপস্থিতি মেলে। চালের ১৩টি নমুনায় মাত্রাতিরিক্ত বিষক্রিয়া সম্পন্ন আর্সেনিক আর পাঁচটি নমুনায় পাওয়া যায় ক্রোমিয়াম।

খুলনা বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের (পরিদর্শক ও মান নিয়ন্ত্রক) উপ-পরিচালক আবু সাঈদ জানান, আমাদের দেশের মৎস্য ব্যবসায়ীরা সুটকি মাছে যে কীটনাশক ব্যবহার করেন তার মধ্যে ৬০ শতাংশ চরম বিষাক্ত, ৩০ শতাংশ অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত আর শুধু বাকি ১০ শতাংশ বিষমুক্ত। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে, এসবের প্রভাবে গলায় ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সার, হাঁপানি, চর্ম রোগসহ বিভিন্ন রোগ হতে পারে। ফরমালিন যুক্ত খাবারে পাকস্থলীতে প্রদাহ, লিভারের ক্ষতি, এমন কি অস্থিমজ্জা জমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব খাবারে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভারের জটিল রোগ হওয়ার আশংকা থাকে।

 খুলনা সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ বলেন, ফরমালিন যুক্ত খাবার এবং কীটনাশক ব্যবহৃত মাছ বা শাক সবজি খেলে মানব দেহের ব্যপক ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে লিভার এবং কিডনিতে বিভিন্ন ধরণের জটিল রোগ হতে পারে। কার্বাইড নার্ভ সিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর। ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড ক্যালসিয়াম কার্বাইডে বিষাক্ত আর্সেনিক ও ফসফরাস রয়েছে, যা বিষমুক্ত ফলকে বিষাক্ত ফলে রূপান্তরিত করে। এসব খাবারে কিডনি, লিভার ত্বক, মুত্রথলী কিংবা ফুসফুসে মারাত্মক রোগ হতে পারে। বাজারের চিপস, ওয়েফার, চকোলেট ও জুসে কার্বোহাইড্রেট, মেলামিন অতিমাত্রায় থাকায় শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হলেও এসব খাবারের প্রতি শিশুদের আকৃষ্ট করে তোলা হচ্ছে। যে কারণে অধিকাংশ শিশু স্থুলতা ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছে। তাছাড়াও কিডনি, লিভার, ফুসফুসসহ নানা রোগে তারা আক্রান্ত হচ্ছে।