কয়রা : অল্প সময়ে তরমুজ লাভজনক ফসল হওয়ায় লবণাক্ত উপকূলীয় অঞ্চল কয়রায় গত বছরের তুলনায় এবছর বেড়েছে তরমুজের চাষ। প্রতি বছর এ অঞ্চলের চাষিদের উৎপাদিত তরমুজ উপজেলা ও জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। তবে মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎ দমকা হাওয়ার সাথে ১০ মিনিটের শিলাবৃষ্টির আঘাতে ফলাদি গাছ ও তরমুজ নষ্ট হওয়ায় হতাশ তরমুজ চাষিরা।
কয়রা কৃষি অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, এবছর কয়রা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১২শ’ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ করা হয়। গত বছর যা ছিলো সাড়ে ৬শ’ হেক্টর। এবছর ফসলের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টপ্রতি ৬০ টন। তবে শীলা বৃষ্টি হওয়ায় ২শ’ হেক্টর জমির তরমুজ নষ্ট হয়েছে। আর দমকা হাওয়ার কারনে অনেক এলাকায় তরমুজ গাছেরও ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার কিনুকাটি, হরি কাঠি, তালবাড়িয়া, সুড়িখালি, পাটনি খালিসহ আরো কয়েকটি এলাকার তরমুজ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় শিলা বৃষ্টিতে ক্ষেত ভরা ছোট-ছোট ও কেজি ওজনের তরমুজগুলো আহত অবস্থায় পড়ে আছে গাছগুলো থেতলে গেছে তবে সবুজ খেতে এখন মাটি ছাড়া কিছু নেই। এবছর লক্ষ মাত্রা অর্জনে সংশয় রয়েছে বলে জানান স্থানীয় তরমুজ চাষিরা।
আমাদি ইউনিয়নের তরমুজ চাষী পুলকেশ বৈরাগী তিনি সমিতি থেকে লোন নিয়ে প্রতি বিষা ৭ হাজার টাকা দরে হারি নিয়ে ১০ বিঘা জমি ৭০ হাজার টাকা দিয়ে তরমুজ চাষ করেন। এপর্যন্ত আড়াই লক্ষ টাকা করচ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছিল। আশা করেছিলেন দ্বিগুণ লাভ হবে। কিছুদিন পরে তরমুজ তুলবেন এর মধ্যে বৃষ্টির সাথে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের শীলা বৃষ্টিতে সব তরমুজ নষ্ট হয়ে তার স্বপ্ন ভেঙেছে। গতো বছরও তিনি ৬ হাজার টাকা করে লিচ নিয়ে ১৮ বিঘা জমিতে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা খরচ করে তরমুজ চাষ করেন। অতিবৃষ্টির কারনে তরমুজ বিক্রি না হওয়ায় দেড় লক্ষটাকার ক্ষতি হয়।
একই এলাকার কৃষাণী চপোলা বৈরাগী এবছর প্রথম বার ৬ হাজার টাকা করে বর্গা নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেন। ফলন ভালো হওয়ায়। দ্বিগুণ লাভের আশা করেছিলেন তিনি। তবে ফল ওঠার মুখে হঠাৎ বৃষ্টির সাথে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় তার তরমুজ ক্ষেতের সব তরমুজ নষ্ট হয়েছে।
উপজেলার আমাদি ইউনিয়নের তালবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক করুণাকান্ত বৈরাগী এলাকার মহাজোনের কাছ থেকে সুধে ১লক্ষ টাকা নিয়ে পাঁচ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেন। ফলনও ভালো হয়েছিল কিছুদিন পরে বিক্রি করার উপযোগী হবে। এপর্যন্ত তিনি এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ ১০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে আমার তরমুজ ও গাছ গুলো সব থেতলে গেছে। শীলা বৃষ্টি না হলে তিনি তার ৫ বিঘা জমি চার লক্ষ টাকায় বিক্রি করতে পারতেন। গতো বছরও তিনি ৫ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেন। তবে ফল ওঠার সময় অতিবৃষ্টির কারনে তার ৫৬ হাজার টাকা লস হয়।
একই এলাকার জয়ন্ত সরদার নিজের এগারো বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেন। এপর্যন্ত সাড়ে তিন লক্ষ টাকা করচ হয়েছে পনের দিন পরে ফল ওঠার কথা থাকলেও হঠাৎ শীলাবৃষ্টিতে তার সব তরমুজ নষ্ট হয়েছে। কৃষক সুনীল সানা, দিলীপ বৈরাগী, সঞ্জয় বৈরাগী বিষ্ণু মন্ডল সহ আরো কয়েকজন কৃষক বলেন, বেশি লাভের আশায় এবছর আগে আগে চাষ করেছিলাম সব ঠিকঠাক ছিল এক সপ্তাহ ফলের বয়স কেজি কেজি ওজনের ফলগুলি তিন সপ্তাহের মধ্যে পরিপূর্ণতা হওয়ার কথা ছিল মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যে ফল উঠে যেত কিন্তু ১০ মিনিটের শিলা বৃষ্টি সব নষ্ট করে দিয়েছে ধার দেনার কারণে আমাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসিম কুমার দাস বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে দমকা হাওয়া ও শীলাবৃষ্টিতে প্রায় ২শ হেক্টরের মতো তরমুজ ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অফিসের সকল কর্মকর্তারা মাঠে যেয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনো কয়েক দিন না যাওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না লক্ষমাত্রা অর্জন হবে কিনা।