মনোজ রায় হিরু, আটোয়ারী (পঞ্চগড়) : পাওনা টাকা না দেওয়ায় এক যুবককে পরিকল্পিতভাবে কৌশলে অপহরণ করা হয়। পরে মাঝ রাস্তায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দিয়ে ওই যুবককে হত্যা করা হয়েছে বলে তার পরিবার অভিযোগ তুলেছে। নিহত ওই যুবকের নাম মোঃ সামিউল ইসলাম শয়ন (২৬)। সে উপজেলার রাধানগর ছোটদাপ এলাকার মোঃ রবিউল কবির রবি’র মেঝো ছেলে। উপজেলার ফকিরগঞ্জ বাজারে রবি কালাম নামে তাদের একটি কসমেটিকস এর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। বৃহস্পতিবার ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শয়ন মারা যায় । এর আগে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও তার অবস্থা আশঙ্কা জনক হলে ওই রাতেই রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে আইসিইউতে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখেন চিকিৎসকরা। তার মাথার খুপরির কয়েকটি স্থানে গভীর ক্ষতসহ ফেটে যায় এবং প্রচুর রক্তপাত ঘটে। সর্বশেষ, ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শয়ন সেখানেই চিকিৎসাধীন অব¯’ায় মারা যায়। জানা যায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর বিকালে পাশ্ববর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও থেকে কয়েকজন যুবক আটোয়ারীতে আসে। হাসপাতাল গেইটের সামনে শয়নসহ তাঁরা কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করে এবং টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল। শয়নের ছোট ভাই সুজন বলেন, ভাইয়ের কাছে মুন্না ও রাব্বি ৬ হাজার টাকা পেতো। ওইদিন বিকালে ভাইয়ার কাছে টাকা নিতে এসেছিল। কিন্তু টাকা সে পরের দিন দিতে চেয়েছিলেন। তাই কৌশল করে পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে চা খাওয়ার জন্য তাকে গাড়িতে উঠতে বলে৷ ভাইয়া সরল বিশ্বাসে গাড়িতে উঠে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে শুনি ভাইয়াকে মেরে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। শয়নকে কৌশলে মোটরসাইকেল উঠিয়েছিল মুন্নাসহ দুজন যুবক। তাকে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ মোড় পার হয় তারা। পরে পল্লী বিদ্যুৎ-রুহিয়া সড়কের কনপাড়া এলাকার সামনে এসে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। পরে পথচারীরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। শয়নকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার সময় একজন দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর মধ্যে লাকী বেগম প্রতিনিধিকে বলেন, আমি বাড়ির সামনে বেঞ্চে বসে ছিলাম। দেখলাম দূর থেকে একটি মোটরসাইকেল খুব দ্রুত গতিতে আসছে। এমন সময় গাড়িটা আমাদের বাড়ির কাছাকাছি এসে মাঝখানে থাকা একটি ছেলেকে ফেলে দেয়। পড়ে যাওয়ার সময় খুব জোরে একটা শব্দ হয়েছিল। আর গাড়িটাও খুব দ্রুত গতিতে ছুটে রুহিয়ার দিকে চলে যায়। শহিদুল ইসলাম নামে আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমি বাড়ির সামনে রাস্তার পাশেই ছিলাম। হঠাৎ একটা মোটরসাইকেল এসে ছেলেটাকে ফেলে দিয়ে দ্রুত চলে যায়। আমি তাদেরেকে আটকানোর চেষ্টা করি কিন্তু আমি আসার আগেই তারা চলে যায়। তাদের চেহারাও সঠিকভাবে দেখতে পাইনি৷পরে আনোয়ার নামে একজনের ভ্যানে করে ছেলেটাকে আটোয়ারী হাসপাতালে নিয়ে যাই। তিনি আরো বলেন, হঠাৎ গাড়ি থেকে একটা সুস্থ সবল মানুষকে ফেলে দেওয়া যায়না৷ নিশ্চয়ই গাড়িতে থাকা অবস্থায় ওই ছেলেটার মাথায় অনেক আঘাত করা হয়েছে। তাই গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার সময় কোন জোর-জবরদস্তি করতে পারেনি। ছেলের হত্যার বিচার দাবি করে সামিউল ইসলাম শয়নের মা মোছাঃ সেলিনা আক্তার বাদী হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর বিকালে কয়েকজনকে অজ্ঞাত ও মুন্না নামে একজনের নাম উল্লেখ করে আটোয়ারী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। জানা যায়, মুন্না ঠাকুরগাঁও জেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের জনৈক এক ব্যক্তির ছেলে। সে ঠাকুরগাঁও সদরের একটি মেবাইল শোরুমে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে বলে জানা যায়। এনিয়ে আটোয়ারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সোহেল রানা জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর বিকালে সামিউল ইসলাম শয়ন নামে এক যুবককে অপহরণ করে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে হত্যার বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি। নিহত যুবকের মা বাদী হয়ে কয়েকজনকে অজ্ঞাত ও এক জনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। প্রকৃত আসামির পরিচয়ও আমরা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে টিমওয়ারি কাজ করছি। যতদ্রুত সম্ভব প্রকৃত আসামিসহ সহযোগীদেরও আটক করতে আমরা কাজ করছি এবং মরদেহকে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চ্যল্যের সৃষ্টি করেছে।