মোংলার মুর্তিমান আতঙ্ক নাসির হাওলাদার

প্রকাশঃ ২০২৪-০৯-২১ - ১৪:১৪

একাধিক খুন, দখলবাজি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা:  খুন,ঘুম,চাঁদাবাজি, ঘের দখল, টেন্ডারবাজিসহ একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে নাসির হাওলাদারের বিরুদ্ধে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় নিজ স্ত্রীকেও করেছেন হত্যা বলে অভিযোগ ভুক্তভোগি পরিবারের। মোংলার আতঙ্ক নাসির হাওলাদার মোংলা পৌর আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে থেকে নিয়ন্ত্রন করছেন তার সিন্ডিকেট। বর্তমানে সে খুলনায় আত্মগোপনে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।
একটি অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নাসির হাওলাদারের পিতার নাম মজিবুর হাওলাদার। মোংলা পৌর আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ পদ পাওয়ার পর থেকে প্রভাবশালী নেতা বনে যান নাসির হাওলাদার। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকার পতন হলেও আত্মগোপনে থেকে নিয়ন্ত্রন করছেন সবকিছু। গত ১৫ বছরের মধ্যে টেন্ডারবাজি, দখলবাজি করে এবং ইয়াবার ব্যবসা করে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। টেন্ডারের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ২০১৫ দিগরাজ বাজারের সমাজ সেবক ও ব্যবসায়ী খোকা তালুকদার হত্যার শিকার হন। এ হত্যাকান্ডের সাথে নাসির হাওলাদার ও তার সহযোগী তপন,আলামিন ও জোসনা জড়িত। তৎকালীন সময়ে হত্যার ঘটনা ধাঁমাচাপা দিতে থানার তদন্ত অফিসারকে , ময়না তদন্ত রিপোর্ট টাকা দিয়ে মিথ্যা রিপোর্ট বের করাসহ পিবিআইকে দুই দফায় ৬০ লাখ টাকা দিয়ে পুরো ঘটনা ধামাচাঁপা দেয় নাসির হাওলাদার বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। খোকা তালুকদারের লাশের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খোকা তালুকদারের কপালে কুরাল অথবা দায়ের কোপের দাগ ছিলো, একটা হাত তার উল্টায়ে ভাঙা ছিলো, একটা পা বাড়ি দিয়ে ভাঙা ছিলো। এ ঘটনার কিছুদিন না যেতেই জমি নিয়ে খুন হয় হাফাবাড়ি এলাকার মো. ফকিরের ছেলে রুস্তম ফকির ও হুড়কা ইঊনিয়নের ছোটু। এ হত্যাকান্ড ঘটিয়ে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয় নাসির হাওলাদার। ভুক্তভোগি পরিবারকে মামলা পর্যন্ত করতে দেয়নি নাসির হাওলাদার। রুস্তম ফকিরকে ট্রাক চাপা ও ছোটুকে শ্বাসরোধে করে মেরে ফেলে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয় বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। অন্য একটি অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে নাসির হাওলাদার তার স্ত্রী আসমা আরজকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে। নাসিরের পরকিয়া এবং অপকর্মের বিষয়ে আসমা আরজ জানতে পেরে প্রতিবাদ করলে নির্মম হত্যার শিকার হন আসমা আরজ। হত্যার পর আত্মহত্যা বলে দাবী করে নাসির। মামলা করতে গেলে বাধার মুখে পড়ে আসমা আরজের পরিবার। খুলনার একজন আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতার নিষেধের মুখে পড়েন আসমা আরোজের পরিবার।
স্থানীয়রা জানান, ১৮ বছর আগে নাসিরের কিছুই ছিল না। মিষ্টির দোকানে দুধ বিক্রি করে সংসার চালাতেন নাসির। কিন্তু হঠাৎ করেই জড়িয়ে পড়েন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে। অল্প সময়ে মোংলা পৌর আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন। এরপরই ভয়ংকর রুপ ধারন করে নাসিরের কর্মকান্ড। জমি ও ঘের দখল শুরু করে সে। এক পর্যায়ে ঠিকাদারি টাকার অর্থভাগ নিয়ে খুন করেন ব্যবসায়ী খোকাকে। এরপর তার নামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জমি—জায়গার শত্রুতা নিয়েও গুম খুন করেন একাধিক ব্যক্তিকে। তার স্ত্রীও তার হাতে খুন হন। কিন্তু এলাকাবাসী এখনো তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান। ক্ষমতার পালা বদলে তার ফিরে আশার আশংকা করছেন অনেকে।
একজন অভিযোগকারী বলেন, মোংলায় নাসিরের মতো এমন দুর্ধর্ষ কেউ নেই। তার জুলুম নির্যাতনের প্রতিবাদ করার মতো কেউ ছিলো না। এখনো সাধারন মানুষ তাকে ভয় করে। হত্যা করে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে। টাকার জোড়ের কাছে আমরা অসহায় হয়ে রয়েছি। সরকার পতনের পরও তার ভাগ্নেকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়েছেন কয়েকজনের নামে।
অন্য একটি সূত্র জানায়, কোটি কোটি টাকা, পাজারো গাড়ি, পাঁচ তলা ফ্লাট বাড়ি ৩টি, খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকায় দশ তলা ভবন গড়েছেন অবৈধ ব্যবসা করে। ২০১৯ সালের শেষের দিকে এসে নাসির হাওলাদার ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন। বিশাল এক বাহিনী গড়ে তোলেন মোংলায়। তাদের মাধ্যমেই ইয়াবার ব্যবসা পরিচালনা করতেন নাসির। ছাত্র—জনতার আন্দোলনের সময় খুলনার একজন শীর্ষ আওয়ামীলীগ নেতার নির্দেশে নাসির ২০ জন লোক এবং অস্ত্র নিয়ে খুলনায় আসেন আন্দোলন প্রতিহত করার টিমের সাথে কাজ করবে বলে। লোকজন নিয়ে সে তার সোনাডাঙ্গা বাসায় অবস্থান নেয়। আগষ্টের ২ ও ৩ তারিখ তার লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে এবং লোকজন নিয়ে মহড়াও দেয় গল্লামারি রোডসহ খুলনার বিভিন্ন স্থানে। এ বিষয়ে নাসির হাওলাদারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান তিনি মাঝে মধ্যে এলাকায় এসে আবার খুলনায় চলে যান। তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া যায়।