কেশবপুর প্রতিনিধি : কেশবপুরে অতিবৃদ্ধির কারনে সৃষ্ট বন্যায় কেশবপুর উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামের ফসলের মাঠ ও রাস্তাঘাট এখনো পানির তলে। পানিতে কাঁচামালের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কাঁচামালের আকাল সহ দ্রব্যমুল্যের দাম ও হাহাকার দিন দিন বাড়ছে। ২০২৪ আগষ্টের মাঝামাঝি সময় হতে অতিবৃষ্টির পানি ও দেশের পশ্চিম-উত্তরাঞ্চল দিয়ে ভারতের পানি এদেশে প্রবেশ করায় সমগ্র দেশের ন্যায় কেশবপুরেও পানির প্রবল চাপে প্রায় ১০৬টি গ্রাম তলিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে। মাছের ঘের, ফসলের মাঠ, বাড়ি-প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনা, রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে একাকার হয়ে গেছে। ঘেরের মাছ রক্ষায় নেট ব্যবহার করলেও পানিতে কাঁচামালের শিকঁড় পচে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
কেশবপুর বাজার, মঙ্গলকোট বাজার, ভান্ডারখোলা বাজার, চিংড়া বাজার, ভালুকঘর বাজার, সরসকাটি বাজার, সাতবাড়িয়া বাজার, পাঁজিয়া বাজার, কাঁটাখালী বাজার, কলাগাছি বাজার, গৌরীঘোনা বাজার, ভরত ভায়নার কাঁচামালের বাজারগুলোতে দেখা গেছে কাঁচামালের বাজারজাত কম। এসব বাজার হতে বিভিন্ন বড় বড় শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এসে চড়াদামে কাঁচামাল কিনে শহরে যোগান দেওয়ায় এলাকার মানুষের কাঁচামালের ক্রয়ের ক্ষমতা নাই বললেই চলে। এ সমস্ত বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে কেজি প্রতি কাঁচামালের গড় দাম- বেগুন ১২০ টাকা, পটল ৬৫ টাকা, করল্লা ১২০ টাকা, ঝিংগা ৭০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, কুশি ৭০ টাকা, পেঁপে ৩৫ টাকা, কাঁচকলা ৭০ টাকা, লাউ ছোট ৫০ টাকা, পোল্লা ৪৫ টাকা, কচুর মুখি ৭০ টাকা, মেটে আলু ৮০ টাকা, ওল ৯০ টাকা, পুই শাক আটি ৩৫ টাকা, লাল/সাদা শাক ৫০ টাকা, পানি কচু একটি গাছ ২৫ টাকা, কাঁচা মরিচ (লম্বা) ২৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ (বল্টু) ২৮০ টাকা। এছাড়া শুষ্ক কাঁচামাল হিসেবে আলু ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ১২০ টাকা, রসুন (বড়) ২৮০ টাকা, রসুন (ছোট) ২৪০ টাকা, শুকনো মরিচ ৬০০ টাকা। ডিম এক হালি সাদা ৫০ টাকা, এক হালি লাল ৫২ টাকা। চাউল (বড়) ৫৫-৫৮ টাকা, চাউল (চিকন) ৬৫-৬৮ টাকা। দামের এ উর্দ্ধোগতি সাধারন মানুষের জীবন যাপনে নাগালের বাইরে।
কোন কাজ কর্ম না থাকায় কেশবপুর জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ নদী-খালের মাছ জাল-বঁর্শি দিয়ে ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার কোন মতে চালাচ্ছে। এলাকার পানি সরে গেলে কাজের অভাবে মানুষের হাহাকার আরো বাড়বে। এমনকি মানুষের কোন কাজ কর্ম, আয়-রোজগার না থাকায় রাস্তাঘাটে ছিনতাই, বাড়িতে চুরি ডাকাতি বাড়তে পারে বলে অতীতের কথা ভেবেই অনেকেই এ আংশঙ্খা করেছেন।
কেশবপুর অতীত থেকেই জলাবদ্ধ এলাকা হিসেবে এলাকার মানুষের ভোগান্তির কারন হয়েছে আছে। কেশবপুরকে ঘিরে যেসমস্ত নদী-খাল আছে জোয়ারের পলিতে তা জমে গেছে। ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে সংঘঠিত হওয়া জলাদ্ধতার কারন খতিয়ে দেখে আগামী দিনের কথা চিন্তা করে শুষ্ক মৌসুমে যদি জমা নদীগুলো খনন করা হতো তাহলে আজকের এই পরিস্থিতিতে ভুগতে হতো না কেশবপুরবাসীকে।
এছাড়া কেশবপুর জলাবদ্ধতার আরেক কারন বিলগুলিতে ছোট বড় লিজ ঘের করে নিয়ে শুষ্ক মৌসুমে ভূ-গর্ভস্থ পানিতে ভরে মাছের পোনা ছেড়ে মাছ চাষ করা। যেকারনে বিলগুলো উম্মুক্ত থাকলে এবং বর্ষাকালীন ফসল আমন ধান করলে বর্ষার পানি সংশ্লিষ্ট গেট দিয়ে জোয়ার ভাটার নদীতে পড়ত। ভাটার সময় বিলের পানি নিয়মিত সরে গিয়ে এলাকার জলাবদ্ধ সৃষ্টি করতো না। জোয়ারের সময় উঠা জমা পলি ভাটার সময় বা টানে ক্ষয়ে সরে যেত বলে এলাকার সাধারন মানুষ সহ অনেক বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন।