যশোর প্রতিনিধি: যশোর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের উপ—পরিচালক আসলাম হোসেনের বিরুদ্ধে ঔষধ বিক্রির একটি প্রতিষ্ঠান (পজিশন একটি) এ্যাম্পুল প্যাথেডিন ও মরফিন মাদকদ্রব্য খুচরা বিক্রয়ের লাইসেন্স আছে জেনেও নতুন করে প্যাথেডিন ও মরফিন খুচরা বিক্রির লাইসেন্স মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে নতুন নামে লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার খবর ফাঁস হয়ে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে তার কাছে এ প্রতিবেদক জানতে গেলে লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করলেও তিনি বলেছেন ওই প্রতিষ্ঠানে দু’টি পজিশন রয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে ওই ঔষধের দোকানের মালিক পজিশনের সামনে ও পূর্ব দিকের অংশে একটি নাম থাকলেও তিনি পূর্ব দিকের সামনে অংশে দু’টি নামের মধ্যে হঠাৎ করে একটি নামের প্যানা তুলে দিয়েছেন। এই কর্মকান্ড যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সামনে অবস্থিত কপোতাক্ষী ফার্মেসী ও রেবা ড্রাগ এন্ড সার্জিক্যাল সেন্টার নামক প্রতিষ্ঠান। প্যাথেডিন ও মরফিন বিক্রি লাভ জনক ব্যবসা হওয়ায় স্বামীর পর স্ত্রীর নামেও লাইসেন্স গ্রহন করা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রধান গেটের বিপরীতে কপোতাক্ষী ফার্সেসী ও রেবা ড্রাগ এন্ড সার্জিক্যাল সেন্টার নামক দোকানটি আরিফুল ইসলাম সাগর নামে একজন ব্যক্তির। উক্ত প্রতিষ্ঠানের সামনের অংশ মুখে উত্তর দিকে বেচাকেনার প্রধান অংশ। প্রতিষ্ঠানের সামনের অংশের নীচে ফার্নিচারের (কাঠে) ও তার উপর অংশের টিনে প্রদর্শনকৃত সাইবোর্ডের স্থানে কপোতাক্ষী ফার্মেসী লেখা রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানের সামনে ভবনের দেওয়ালের উপরের অংশে প্যানা করে লেখা রয়েছে রেবা ড্রাগ এন্ড সার্জিক্যাল সেন্টার। শুধু তাই নয় উক্ত প্রতিষ্ঠানের পূর্ব অংশে সামনে থেকে দক্ষিণ দিকের শেষ অংশ পর্যন্ত রেবা ড্রাগ এন্ড সার্জিক্যাল সেন্টার লেখা ছিল। তবে খেঁাজ নিয়ে জানাগেছে, গত ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারী যে কোন সময় উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিকের নির্দেশে পূর্ব অংশের সামনের দিকে প্যানায় লেখা রেবা ড্রাগ এন্ড সার্জিক্যাল সেন্টার তুলে ফেলা হয়েছে। ওই অংশে ১৫ ফেব্রুয়ারী থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সাদা বেষ্টিত টিনের অংশ দেখা গেছে। যাতে কোন কিছু লেখা নাই। তবে কপোতাক্ষী ফার্মেসী লেখা হয়নি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত।
সূত্রগুলো জানিয়েছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের উপ—পরিচালক আসলাম হোসেন কপোতাক্ষী ফার্মেসীর মালিক আরিফুল ইসলাম সাগরের একটি দোকানের পজিশনে প্যাথেডিন ও মরফিন খুচরা লাইসেন্স আছে জানা সত্বেও সাগরের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন এর নামে ২০২৪—২৫ অর্থ বছরে মাদকদ্রব্য খুুচরা বিক্রিয়ের লাইসেন্স পেতে সুপারিশ করেছেন। যার লাইসেন্স নং ১০৫। আরিফুল ইসলাম সাগরের নামে প্যাথেডিন ও মরফিন খুচরা লাইসেন্স নং ১০১/২০২৩—২৪। এ প্রতিবেদক প্রতিষ্ঠানের একই পজিশনে মাদকদ্রব্য খুচরা বিক্রয়ের প্যাথেডিন ও মরফিন বিক্রির খুচরা লাইসেন্স থাকা সত্বেও ওই পজিশনে নতুন লাইসেন্স দেওয়ার বিধান আছে কিনা জানতে চাইলে যশোর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের উপ—পরিচালক মোঃ আসলাম হোসেন বলেন,ওই প্রতিষ্ঠানে দু’টি পজিশন রয়েছেন। তিনি তদন্ত করে ওই প্রতিষ্ঠানে দু’টি ক্যাশ টেবিল ও পজিশন দু’টি পেয়েছেন বলে এ প্রতিবেদককে দাবি করেন। তিনি আরো বলেন,ওই প্রতিষ্ঠানে দু’টি ট্রেড লাইসেন্স এমনকি সব পেপার আলাদা পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠানে উত্তর থেকে দক্ষিণ অংশ পর্যন্ত দেওয়ালের আলাদা দু’টি প্রতিষ্ঠান তিনি দেখেছেন। তবে প্রতিবেদক ওই প্রতিষ্ঠানের আশপাশের দোকানগুলোর কাছে পজিশন দু’টি এমন কোন খবর কেউ বলতে পারেননি। আশপাশের ব্যবসায়ীরা বলেছেন,পজিশন একটি দুই নামে চলছে। এটা ওপেন সিক্রেট।
সূত্রগুলো দাবি করেছেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের উপ—পরিচালক আসলাম হোসেন জেনেও একই পজিশনে প্যাথেডিন ও মরফিন খুচরা বিক্রির লাইসেন্স থাকা সত্বেও মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে নতুন নামে আরো একটি লাইসেন্স প্রদান করেছেন যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের আইন পরিপন্থী।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, একই পজিশনে দু’টি লাইসেন্স দুই নামে করার পিছনে অধিক লাভের কারবার লুকিয়ে রয়েছে। প্যাথেডিন ও মরফিন রোগীদের অপারেশনে ব্যবহার হয়ে থাকে। সরকারীভাবে এ্যাম্পুল প্যাথেডিনের মূল্য বর্তমানে ৬৪ টাকা ও এ্যাম্পুল মরফিন ৪০ টাকা। যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর জেলা কার্যালয় থেকে চালানের মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে অর্থ জমা দিয়ে চালানের কপি নিয়ে গণস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে উত্তোলন করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর হেড কোয়ার্টারের অনুমতিক্রমে প্যাথেডিন ও মরফিন খুচরা বিক্রির লাইসেন্স জেলা পর্যায়ের উপ—পরিচালক ও বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালকের সুপারিশের পর চুড়ান্ত ভাবে পাওয়া সম্ভব। গণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সরকারী কোষাগারে ৬৪ টাকার প্যাথেডিন ঔষধের দোকানে খুচরা বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আর ৪০ টাকা মরফিন বিক্রি হয় ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। প্যাথেডিন ও মরফিন সাধারণ বেসরকারী হাসপাতাল,ক্লিনিকগুলোতে অপারেশনে রোগীর জন্য প্রয়োজন। অপর একটি সূত্র বলেছে,কপোতাক্ষী ফার্মেসী ও রেবা ড্রাগ এন্ড সার্জিক্যাল সেন্টার নাম প্রতিষ্ঠানের আরিফুল ইসলাম সাগরের তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি একটি বেসরকারী হাসপাতাল রয়েছে বলে সূত্রগুলো দাবি করেছেন। যে কারনে তিনি প্যাথেডিন ও মরফিন ওই প্রতিষ্ঠানে রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজনদের কাছে চড়া মূল্যে বিক্রি করে থাকেন। একই পজিশনে যশোর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা কতৃর্ক নতুন আরো একটি লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরে পরিচালকের আশু হস্তক্ষেপ কামনাসহ তদন্তর দাবি করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদকদ্রব্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।