খুলনায় তামান্না-জোনাকী’র পর জুয়াড়ি ‘চামেলী’র রাম রাজত্ব

প্রকাশঃ ২০১৮-০১-০৮ - ১৭:৩৬

খুলনা : ‘২০ টাকার লটারী কাটলেই আপনিও পেতে পারেন লক্ষাধীক টাকা, মোটরসাইকেল সহ আরও নানা আকর্ষণীয় পুরুস্কার’। হ্যাঁ এমন সব লোভনীয় অফার নিয়েই খুলনা মহানগরীতে আবারও সরব হয়েছে মেলার নামে জুয়া চালানো সেই প্রতারক চক্রটি। শহরজুড়ে ইজিবাইকে প্রকাশ্যে মাইকিং চলছে, বিক্রি হচ্ছে রাফেল ড্র’র টিকিট। তবে এবার আর তামান্না নয়, নতুন নামে নামকরণ করা হয়েছে জুয়ার। নতুন নামটি হচ্ছে ‘চামেলী রাফেল ড্র’।

খুলনা মহানগরীতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে এই জুয়ারীরা। তাইতো তামান্নার রাফেল ড্র’র রেশ কাটতে না কাটতেই এবার শুরু হয়েছে চামেলী রাফেল ড্র। আর এই লটারীর প্রলোভনে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তবে দেদারছে তারা জুয়া চালালেও পুলিশ ও প্রশাসন নীরব ভূমিকা জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বইছে নিন্দার ঝড়।
বলা বাহুল্য, খুলনা ‘জেলা আইন-শৃংখলা’ এবং ‘সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ’ কমিটির গত ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত মাসিক সভায় মাইকিং করে লটারি, জুয়া এবং এ ধরনের কাজ বন্ধ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। তবে সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা গেছে, খুলনা মেট্রাপলিটন পুলিশ (কেএমপি)’র অনুমতি নিয়ে গেল ২২ ডিসেম্বর থেকে খুলনায় খানজাহান আলী থানা এলাকার ফুলবাড়ীগেট বালুর মাঠে শুরু হয় বর্ণাঢ্য গ্রামীণ মেলা। যার আয়োজক প্রতিবন্ধী কল্যাণ ও পুনর্বাসন সংস্থা এবং সহযোগতিায় রয়েছে চামেলী ট্রেডার্স। আর এই আয়োজক প্রতিষ্ঠান চামেলীর নামেই মেলার মাঠে দেদারছে চলছে জুয়ার আসর। আছে মাদক সেবীদের আড্ডাও।
আরও জানা গেছে, কেএমপির পক্ষ থেকে ১৩টি শর্তে এই মেলার অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো মেলায় কোনা ধরনের হাউজি, জুয়া বা র‌্যাফেল ড্র চালানো যাবে না। মাদকদ্রব্যের বিষয় ছিলো কঠোর নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। সরজমিনে দেখা গেছে, মেলাকে কেন্দ্র করে মাদক ও জুয়ার আসর বসছে সেখানে। পুরুস্কারের প্রলোভনে পড়ে শহর ও শহরতলী থেকে নিত্যদিন মেলায় ভিড়ছে হাজারো মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন নগর ও উপজেলাগুলোতে শতাধীক ইজিবাইক করে র‌্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। ২০ টাকা মূল্যের লটারির টিকিট বিক্রির প্রথমদিনই প্রায় ৩০/৩৫ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে। পুরস্কার দেওয়া হয়েছে সর্বসাকুল্যে ৫ লাখ টাকার। বাকি টাকা লটারির আয়োজক ও অন্যান্য ব্যক্তিদের পকেটে ঢুকেছে।

এ ব্যাপারে খানজাহান আলী থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, মেলা করার জন্য মন্ত্রণালয় এবং কেএমপি’র নিকট থেকে অনুমতি নিয়েছে তারা। আর মেলায় রাফেল ড্র প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব দিয়েই এই লটারী কর্মকান্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।
এছাড়া মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি মনির ভূইয়ার মুঠোফোনে একাধীকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, দৌলতপুর কেডিএ’র কল্পতরু মাঠে গত ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় জোনাকি র‌্যাফেল ড্র। ১০ টাকার বিনিময়ে লাখ টাকার পুরস্কার জেতার আশ্বাস দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। মেলায় মাদক ও জুয়ার আসর বসলেও সে ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় ছিল দৌলতপুর থানা পুলিশ। যা নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করে স্থানীয়দের মাঝে। তবে গত ৫ জানুয়ারি জোনাকি রাফেল ড্র বন্ধ হয়।
জানা গেছে, ‘চামেলী রাফেল ড্র’ নামে জুয়া চালানো শক্তিশালী সিন্ডকেটের কারণেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে জোনাকি। এক পর্যায়ে তারা বাধ্য হয়ে চামেলী’র সাথে মিলে যৌথভাবে জুয়া খেলার এই কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। চামেলীর পক্ষে জনৈক নসু ও জোনাকির পক্ষে পাসপোর্ট অফিসের দালাল স্বপন সবপক্ষকে ম্যানেজ করতে মাঠে নেমেছে বলে সূত্র জানায়। তবে নেপথ্যে প্রভাবশালী এক চক্র রয়েছে বলে আরও জানা গেছে। আর এই চক্রের হোতারা থাকছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।