খুলনা : খুলনার ডুমুরিয়া থানার শেখ আব্দুর রহিমসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গতকাল মঙ্গলবার তদন্ত সংস্থার ধানমণ্ডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। মামলার অন্য ১০ আসামি হলেন- সামছুর রহমান গাজী ওরফে মেজো ভাই (৮২), মো. ওমর আলী ফকির (৭০), জাহান আলী বিশ্বাস (৬৭), মো. আক্কাস সরদার (৬৮), নাজের আলী ফকির (৬৫), মো. শাহাজাহান সরদার (৭৫), আব্দুল করিম শেখ (৬৫), আবু বক্কার সরদার (৬৭), মো. রওশন গাজী ওরফে রওশন মল্লিক (৭২) ও মো. সোহরাব হোসেন সরদার ওরফে মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ ওরফে খুলনার হুজুর (৬২)। এই ১১ আসামির মধ্যে মো. ওমর আলী ফকির ও মো. আক্কাস সরদার পলাতক। বাকিরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন বলে হান্নান খান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ মামলাটি খুলনার ডুমুরিয়া থানার খর্নিয়া ইউনিয়নের। আসামিরা খর্নিয়া ইউনিয়ন পরিষদ অফিস দখল করে রাজাকার ক্যাম্প করেছিল। এই ১১ আসামির প্রত্যেকেই খুলনার রাজাকারদের প্রশিক্ষণ (আনসার ক্যাম্প) ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী রাজাকারদের যে তালিকা করেছিল, সেখানেও তাদের নাম আছে। একাত্তরে ডুমুরিয়া থানার ওই এলাকায় বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে আসামিদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
হান্নান খান বলেন, অবৈধভাবে আটক, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার মত মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হচ্ছে এ মামলার ১১ আসামির বিরুদ্ধে। আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ২২ জনকে হত্যা করে। ৫৬-৫৭টি বাড়ির মামলার লুট করে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় খুলনার আনসার ক্যাম্প দখলে নিয়ে তারা রাজাকারদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করেছিল। তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
হেলাল উদ্দিন বলেন, এ মামলার তদন্ত শুরু হয় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি। তদন্তকালে বিভিন্ন ঘটনায় ৪৮ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়ছে। এছাড়া ৩ জনকে জব্দ তালিকার সাক্ষী করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ৫২ জন সাক্ষীর তালিকা দেওয়া হয়েছে ৭৩০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে।
গ্রেপ্তার আসামিরা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শোখ আব্দুর রহিম, সামছুর রহমান গাজী ও সোহরাব হোসেন সরদার গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
ট্রাইব্যুনালের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সানাউল হক বলেন, ২০১৭ সাল প্রায় শেষ। গত বছরের তুলনায় এ বছর তদন্ত সংস্থার কার্যক্রম বেশ গতিশীল ছিল। অধিক সংখ্যক মামলার প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তবে আদালতের স্বল্পতা এবং ৯২ দিন ট্রাইব্যুনাল কার্যকর না থাকায় মামলা নিষ্পত্তি কাঙ্খিত মাত্রায় হয়নি।
 
					 
                             
                             
                             
                             
                            