ভেজাল ও নকল ওষুধ সরবরাহকারী চক্র সক্রিয়!
কামরুল হোসেন মনি : বিভাগীয় পর্যায়ে খুলনায় এই প্রথম ভেজাল ও নকল ওষুধ শনাক্তকরণে জিপিএইচএফ-মিনি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর খুলনা অফিসে ওই ল্যাব স্থাপনের পর তিন দিনব্যাপী এখন প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। অপরদিকে খুলনায় ভেজাল ও নকল ওষুধ সরবরাহকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে।
মিনি ল্যাবের সিভিল অফিসার ও খুলনার ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনায় এই প্রথম ভেজাল ও নকল ওষুধ শনাক্তকরণে মিনি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। কোন কোম্পানির ওষুধের ওপর সন্দেহ হলেই আমরা তার স্যাম্পল এনে পরীক্ষা করেই জানতে পারবো এটা ভেজাল বা নকল। আগে স্যাম্পলগুলো ঢাকাস্থ ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবে (এনসিএল) পাঠানো হতো। সেখান থেকে আসতে বেশ সময় লাগতো। এখন খুলনায় বসেই মিনি ল্যাবের মাধ্যমে ৫-৬ ঘন্টার মধ্যে একটি ওষুধের নমুনা গুণগতমান ও ভেজাল বা নকল কি না তা শনাক্ত করতো পারবো। সোমবার থেকে তিন দিনব্যাপী ল্যাব টেস্টের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণে কুষ্টিয়া ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক ও সহযোগী বিশ্লেষক ওয়াহিদুর রহমান, চুয়াডাঙ্গার সুকর্ণ আহম্মেদ, যশোরের ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক রেহানা হাসান, সাতক্ষীরার ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন। তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন, ওষুধ প্রশাসন কর্তৃক অধিদপ্তর ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাব ট্যাস্টরি আওতাধীন বিভাগীয় পর্যায়ে মিনি ল্যাব স্থাপন ও প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণে ইউনাইটেড স্টেট ফার্মা কোপিয়া (ইউপিএস) এর প্রতিনিধি স্পেশালিস্ট মোঃ ফারুক আহমেদ উপস্থিত রয়েছেন। এখন থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ওষুধের নমুনা এখান থেকে পরীক্ষা করতে পারবেন। বর্তমানে মেট্রোনিডাজল গ্রুপের ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আসল ওষুধের নামে ও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে কতিপয় অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী প্রতারণামূলকভাবে নকল উপকরণ দিয়ে, না দিয়ে বা ভেজাল দিয়ে ‘নকল ওষুধ’ তৈরি করে। ব্র্যান্ড ওষুধের মতো জেনেরিক ওষুধও নকল হয়। আবার অনেক ওষুধে সঠিক উপকরণটি ব্যবহার করা হলেও তা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে না। এসব ওষুধ আসলে নি ম্নমানের ওষুধ। ওষুধের সক্রিয় উপাদান না থাকলে তাকে ওষুধ বলা যাবে না। নকল, ভেজাল ও নি ম্নমানের ওষুধ রোগীর জন্য বিপদজনক।
এদিকে খুলনায় ভেজাল ও নকল ওষুধ সরবরাহকারীরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল নগরীর হেরাজ মার্কেটে ইউনানী ও হারবালের বিভিন্ন কোম্পানির নকল ওষুধসহ হাতেনাতে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা একজনকে আটক করে। ওই দিন রাতে খুলনা থানায় পৃথক দুইটি অভিযোগ দিলেও একটি বিশেষ মহলের চাপে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় অভিযোগকারীরা। ওই সময় সদর থানার এসআই মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, ওই দিনের ঘটনায় দুইজন কোম্পানির প্রতিনিধি থানায় পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করেন। এর মধ্যে একজন ওই দিন অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে নকল ও ভেজাল ওষুধ জব্দ করলেও বাজার থেকে কাটছেই না নকল ওষুধের আতঙ্ক। ওই সময় হেরাজ মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার শীব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই ফার্মেসি আজীবনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অভিযুক্ত নাসির পালিয়ে থাকায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিয়ে হেরাজ মার্কেট ও বিসিডিএস কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সভা হয়। সভায় অভিযুক্ত নাসির তার অপকর্মের বিষয়টি স্বীকার করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই অদৃশ্য কারণে ওই নাসিরকে আবার দোকান চালু করতে দেখা যায়। মোঃ নাসির দীর্ঘদিন ধরে ইবনে হায়সাম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ও গুড হেলথ কোম্পানির হারবাল ও ইউনানী ওষুধ নকল তৈরি করে নগরীর বিভিন্ন ফার্মেসি ও গ্রামাঞ্চলে সরবরাহ করে আসছিল। ২৪ এপ্রিল গুড হেলথ কোম্পানির ইউনানী ওষুধ লোমাটন ও নুভেপ্য এবং ইবনে হায়সাম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির হাইসোক্যাল ও হারবালের আইভেরি ওষুধগুলো নকল তৈরি করে সরবরাহ করার সময় হাতেনাতে আটক হয়। এর প্রেক্ষিতে কোম্পানির খুলনার প্রতিনিধিরা তাদের কোম্পানির ওষুধ নকল ও ভেজাল উদ্ধার বিষয়ে সদর থানায় পৃথক দুইটি অভিযোগ দিয়েছিল। যার জিডি নং-১৪৭৮-২৫/০৪/১৮ অপরটি হচ্ছে ১৪৭২-২৫/০৪/১৮। জিডিতে উল্লেখ করা হয় দোকানদার মোঃ নাসির তাদের কোম্পানির ওষুধ নকল করিয়া বিক্রি করিতেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর নগরীর খালাসী মাদ্রাসা মোড়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে হোমিওপ্যাথিক নকল ওষুধের সন্ধান পান। কোন ধরনের ল্যাবরেটরি পরীক্ষা ছাড়াই ওই সব ভেজাল ওষুধ তৈরি করতেন ডাঃ হাফিজুর রহমান। ওই সব ওষুধ খালিশপুর, সাতক্ষীরা, মাগুরার বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতেন। অভিযানে আটক ওই ডাক্তারকে ৬ মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আরাফাতুল আলম।