খুলনা অফিস : খুলনা মহানগী ও জেলায় করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারা এবং মৃত্যুর বৃদ্ধির কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থা চরম সংকট দেখা দিয়েছে। গুরুত্বর অসুস্থ রোগীর জন্য সিট মিলছেনা, আইসিইউতে। নগরীর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা সাধারণ শয্যায় ভর্তির জন্য হাসপাতালের গেটে রোগী নিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে স্বজনদের। এদিকে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংকটাপন্ন রোগীর জন্য আইসিইউ থেকে এখন বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে উচ্চচাপে অক্সিজেন সরবরাহ করা। ইতিমধ্যে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা চেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। পাশাপাশি নার্স ও চতুর্থশ্রেণীর কর্মচারি জনবলও চাওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নগরী সদর হাসপাতালে ৭০ শয্যা করোনা ইউনিটে সকাল ৯টায় করোনার রোগী গৃহবধু খাদিজা (৩৯) কে নিয়ে মোল্লাহাট থেকে অ্যাম্বুলেন্সে যোগে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন স্বজনরা। করোনায় শ্বাসকষ্টো বেড়ে যাওয়ায় তাকে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে অ্যাম্বুলেন্সের অক্সিজেনও ফুরিয়ে গেছে। তার স্বামী সাফায়াত শরীফ হাসপাতালে মধ্যে ছুটাছুটি করছেন স্ত্রীকে ভর্তি করার জন্য। কিন্তু সীট খালি না হওয়ায় তার স্ত্রীকে এই মুহুর্তে ভর্তি করাতে পারছেন না হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। দুপুর ২টার পর করোনা ইউনিটে সীট খালি হলে তখনই ভর্তি করা সম্ভভব। বাগেরহাটের মোল্লাহাটের বাসিন্দা খাদিজার স্বামী সাফায়াত বলেন, গত মঙ্গলবার তার স্ত্রীর করোনার পজিটিভ আসে। ওই দিন তার তিব্র স্ত্রীর শ্বাসকষ্টো বেড়ে যাওয়ায় মোল্লাহাটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন, তার স্ত্রীর করোনার কারণে তার অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। কিন্তু তাদের হাসপাতালে সেই ব্যবস্থা নেই। যার কারণে তাকে খুলনায় রেফার্ড করেন। স্ত্রীকে নিয়ে ভোরে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সকাল ৯টায় এখানে পৌছান। এখন ১০ টার ওপর বাজে। সীট খালি না হলে ভর্তিও করাতে পারছি না। এখন আবার অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেনের সিলনান্ডের অক্সিজেনও শেষ।
হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে অনেক রোগীর শারীরিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুসফুস। শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে রোগী। প্রয়োজন হচ্ছে হাই ফ্লো অক্সিজেন ও আইসিইউর। কিন্তু শয্যা সংকটে মিলছে না চিকিৎসা। এর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক চিকিৎসক,নার্স দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে স্বল্প জনবল,স্বল্প শয্যায় বিপুলসংখ্যক রোগীকে সামাল দিতে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই করতে পারছেন না চিকিৎসকগণ।