খুলনায় শিক্ষার্থীরা উদ্বেগজনকভাবে মাদকে সম্পৃক্ত হচ্ছে!

প্রকাশঃ ২০১৮-০৯-২৬ - ১৩:৩০

১২ কলেজ শিক্ষার্থীসহ আটক ২৭

কামরুল হোসেন মনি : দেশব্যাপী র‌্যাবের পাশাপাশি বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাদক নির্মূলে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অভিযানের মধ্যেও থেমে নেই মাদক ব্যবসায়ীদের বিকিকিনি। দিনকে দিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উদ্বেগজনকহারে মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে র‌্যাব-৬ এর একটি টিম নগরীর বড় বার্মাশীল রোড সুইপার কলোনীতে অভিযান চালিয়ে ১৪০ লিটার চোলাই মদসহ ২৭ জনকে আটক করেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন বিভিন্ন কলেজের ১২ শিক্ষার্থী রয়েছেন। বাকীরা মাদক কেনাবেচা ও সেবনের সাথে সম্পৃক্ত।
২৫ সেপ্টেম্বর র‌্যাব-৬ খুলনার লবণচরাস্থ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত প্রেস বিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।
র‌্যাবের স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, মাদক নির্মূল অভিযানের কারণে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক প্রবেশ অনেকাংশে কমে গেছে। এর ফলে ওই সব মাদকের দামও বেড়েছে মাদক বিক্রেতাদের কাছে। অনেক মাদক বিক্রেতা এখন অবৈধভাবে দেশীয় মদ ক্রয়-বিক্রির ওপর ঝুঁকে পড়েছেন। স্কুল-কলেজ ছাত্ররা আশঙ্কাজনক হারে মাদকের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর বড় বার্মাশীল রোড সুইপার কলোনীতে অভিযান চালিয়ে ১৪০ লিটার চোলাই মদসহ ২৭ জনকে আটক করা হয়। যার মধ্যে ১২ জন বিভিন্ন কলেজের ছাত্র। এর মধ্যে সুন্দরবন সরকারি আদর্শ মহাবিদ্যালয় ও কুয়েটসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা উদ্বেগজনক হারে মাদকের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রত্যেকের পিতা-মাতার উচিত হবে তাদের ছেলে-মেয়েরা প্রতিদিন কি করছে না করছে তা মনিটরিং করা। তারা কোন ব্যাচে, কোথায় যাচ্ছে, কাদের সাথে বন্ধুত্ব করছে। তিনি জানান, মদ সেবন করতে আসা আটক ১২ শিক্ষার্থীকে সতর্ক করে অভিভাবকদের কাছে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি মাদক বিক্রি ও সেবনকারী ১৫ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
মাদক বিক্রেতারা হচ্ছে রুস্তুম আলী হাওলাদারের পুত্র সোহরাব হোসেন লিটু (৪২), মৃত মাসুদ মুন্সীর পুত্র হায়াত আলী (৪৭), মৃত হাবিব মোল্লার পুত্র রাব্বি মোল্লা (১৮), আঃ সত্তার শেখের পুত্র কোরবান শেখ (২৬), আবুল কাশেমের পুত্র জোবায়ের হোসেন, মৃত জাহাঙ্গীর সরদারের পুত্র আবুল কালাম সরদার (৩৫), মৃত সাহেদ আলী খালাসীর পুত্র মজনুল খালাসী (৪৫), মৃত ফজলুল হকের পুত্র মোঃ ওমর ফারুক (৪৮), মৃত আজাহার আলী হাওলাদারের পুত্র মোঃ হারুন অর রশিদ মিলন (৪১), মৃত গোলাম আলী মোড়লের পুত্র সামসুল আলম (৫০), শেখ আব্দুল আলীর পুত্র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৪৭), আলতাফ হোসেনের পুত্র মোঃ ইমরান হোসেন (২২), মৃত শরিফ এর পুত্র মোঃ আসলাম (৪৮), মৃত হায়দার আলীর পুত্র মোঃ আমিনুল ইসলাম লিটন (৩৩) ও মৃত ইসলাম সওদাগরের পুত্র মোঃ শহিদুল ইসলাম (৫২)। মদ সেবন পারমিটধারীরা লাইসেন্সধারী দেশি মদ বিক্রেতাদের নির্দিষ্ট দোকান থেকে ক্রয় করতে পারবেন। আর বিক্রেতারাও পারমিট ব্যতীত কারো কাছে বিক্রি করতে পারবেন না। যদি এসব অমান্য করে তাহলে উভয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর স্টেশন রোডস্থ বার্মাশীলে ২০-২৫ জনের মতো অবৈধভাবে দেশীয় মদ বিক্রি করছেন। এর পাশাপাশি চলে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা। রাতে চলে অসামাজিক কার্যাকলাপ। মদে মেশানো হচ্ছে মিথ্যানল অ্যালকো। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে চলছে এ ব্যবসা। পুলিশের কথিত সোর্স অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মত ১শ থেকে ২শ টাকা চাঁদা আদায় করেন। বার্মাশীলে পারমিটধারী দেশীয় মদ কিনে এনে অবৈধভাবে খুচরা মদ বিক্রি করছেন এমন সংখ্যা রয়েছে ২৫ থেকে ৩০ জন। এদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ঘর রয়েছে। যাদের মদ সেবনের পারমিট নেই তারাই ওইসব ঘরের ক্রেতা। শুধু মদ না, এখানে ফেনসিডিল, গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রি করা হচ্ছে। গভীর রাতে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। ২০১৭ সালে নৌ-ফাঁড়ি পুলিশ বার্মাশীলে এক অভিযান চালায়। ওই সময় এরশাদ শিকদারের সহযোগী নূর আলমের বোন রানীর ঘর থেকে ফেনসিডিল, গাঁজা ও ইয়াবা উদ্ধার করে। এর আগেও র‌্যাব-৬ অভিযান চালিয়েছিল। ওই সময় অবৈধভাবে মদ বিক্রেতা বাবুর ঘরের মধ্যে মদ ও ভারতীয় কসমেটিক পায়। এছাড়া বার্মাশীলে রাজিব, বুশ, মোটা সিবু, বাবু, চন্দ্রন, সাদা সিবু, কালা মিঠু, লক্ষ্মণ, কালীচরণ নামে পরিচিত এরাসহ আরও ২৫ থেকে ৩০ জন রয়েছে তারা অবৈধভাবে মদ বিক্রি করছেন। রানী ও রাজিবের ঘরে ইয়াবা বেশি বিক্রি হয়। অভিযোগ রয়েছে, সবচেয়ে বেশি ইয়াবা, মদ বিক্রি ও সেবন চলে এখানে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে সুচারুভাবে চলছে এ ব্যবসা। পুলিশের কথিত সোর্স নামের আদ্যাক্ষর ‘ম’ তিনি অবৈধভাবে দেশীয় মদসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রেতার কাছ থেকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা আদায় করেন। জানা গেছে, অভিজাত নেশাদ্রব্য হিসেবে পরিচিত ইয়াবার বিস্তার ঠেকানো যাচ্ছে না কিছুতেই। তরুণ-যুবক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ এতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। এ সুযোগে খুলনা জেলায় গড়ে উঠেছে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অপ্রতিরোধ্য নেটওয়ার্ক। নগরীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা ঘর ভাড়া নিয়ে গোপনে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি সেজে, স্কুল কলেজের ইউনিফর্ম পরে এবং ভ্রাম্যমাণ হকার সেজে অনেক ব্যবসায়ী মাদকসেবীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে গাঁজা, মদ, হেরোইন, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। পুলিশের তালিকায় রয়েছে ৬৯টি মাদক বিকিকিনির স্পট। স্টেশন রোডস্থ বার্মাশীল এলাকায় রেলওয়ের জমি ভাড়া নিয়ে কমপক্ষে ৩০টি ঘরে মাদক ব্যবসা চলছে। স্বল্পমূল্যের আবাসিক হোটেলগুলোতে ইয়াবার ব্যবহার বেশি।