ডুমুরিয়া : একই ব্যক্তি দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে চাকুরি করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় কারণ দর্শাও নোটিশ প্রদানের পর ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। শেখ আব্দুল হান্নান নামে ঐ ব্যক্তি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার থুকড়া ইসলামিয়া ওয়াজেদিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার আবার যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার এবিজিকে ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত। একই ব্যক্তি দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করার অভিযোগ এনে জনৈক এস এম গোলাম সরোয়ারসহ কতিপয় ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করেন। এলাকাবাসি ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাদরাসা সুপার শেখ আব্দুল হান্নান ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সাল থেকে থুকড়া ইসলামিয়া ওয়াজেদিয়া দাখিল মাদরাসা সুপার হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই তিনি স্বেচ্ছাচারি ভাবে মাদরাসার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। স্থানীয় অভিভাবক, পরিচালনা পরিষদের কাউকে তিনি পাত্তা দেননি। এমনকি ২০১৫ সালে মাদরাসা পরিচালনা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলেও কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেনি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে কমিটি না থাকায় মাদরাসার সার্বিক বিষয় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্য ও সাবেক সভাপতি এসএম গোলাম কুদ্দুস বলেন, আমাদের অতি কষ্টে গড়া মাদরাসাটি সুপারের হাতেই নষ্ট হতে চলেছে। তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে গত তিন বছর মাদরাসার এডহক কমিটিও নাই। বিধিমোতাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষরে শিক্ষক কর্মচারিদের বেতন ভাতা উত্তোলন করতে হচ্ছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বামাশিবো/প্রশা/খুলনা-৭০/৮২৯; তারিখ-২৪/০১/২০১৬ স্মারক মোতাবেক ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদন্তপূর্বব মতামতসহ একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে সুপার শেখ আব্দুল হান্নান (ইনডেক্স নং- ৩৬৫১৮২) এর বিরুদ্ধে একই সময়ে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করার অভিযোগ প্রমানিত হয়। তিনি থুকড়া ইসলামিয়া ওয়াজেদিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার দাবি করেন। আবার যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার এবিজিকে ফাজিল মাদরাসা অধ্যক্ষ হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ১জি/২৪৭/বি:/০৮/১৪৪০/২- বিশেষ এর বিরুদ্ধে ২৫/২/২০১৫ ইং তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দাখিল করেন। যার নং ২৬৮০/২০১৫। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশক্রমে রেজিষ্ট্রার প্রফেসর মজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত বামাশিবে/ প্রশা/খুলনা-৭০/২০৩২/৭ নং স্মারক পত্রে বলা হয়েছে; তদন্তে প্রমাণিত ও তার কর্তৃক দায়েরকৃত রিট পিটিশন নং ২৬৮০/২০১৫ এর মাধ্যমে স্বীকৃত একই সাথে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করার কারণে তার বিরুদ্ধে কেন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র প্রেরণ করা যাবে না সে বিষয়ে ১০ দিনের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব দাখিল করার জন্য সুপার শেখ আঃ হান্নান (ইনডেক্স নং- ৩৬৫১৮২) কে বামাশিবে/ প্রশা/খুলনা-৭০/২০৩২/৭ তারিখ ২৩-৮-২০১৭ স্মারকে কারণ দর্শানো হয়। কিন্তু সুপার শেখ আঃ হান্নান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব দেননি বরং পরবর্তিতে জবাব প্রদানের জন্য ১ মাসের সময় চেয়ে আবেদন করেন। যা বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের নিকট সন্তোষজনক প্রতীয়মান হয়নি। এমতাবস্থায় একই সময়ে দুটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা, সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা এবং বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত সময়ের মধ্যে জবাব প্রদান না করাসহ সুপার শেখ আঃ হান্নান (ইনডেক্স নং ৩৬৫১৮২) এ হেন কার্যকলাপ বেসরকারি মাদরাসা শিক্ষকের চাকুরি বিধি ১৯৭৯ এর পরিপন্থি হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানিয়ে ২৬ অক্টোবর মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা। পরিচালক, বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) নিলক্ষেত, ঢাকাসহ দুটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বরাবরে পত্র প্রেরণ করেছেন মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। অভিযুক্ত শেখ আব্দুল হান্নান বলেন, নিয়োগবিধি অনুযায়ি গত ৫ জানুয়ারি’ ২০১৩ তারিখে কেশবপুর উপজেলার এবিজিকে ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে নাম মাত্র যোগদান করি। তবে থুকড়া ইসলামিয়া ওয়াজেদিয়া দাখিল মাদরাসা সুপার পদে পদত্যাগ বা ছাড়পত্র নেইনি। সেখানে অধ্যক্ষের কোন দায়িত্বও নেইনি। তবে মানবাধিকারের প্রশ্নে আমি এমপিওভুক্তির জন্য মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট করি। সেখানে থুকড়া ইসলামিয়া ওয়াজেদিয়া দাখিল মাদরাসার ছাড়পত্র বা পদত্যাগপত্র না থাকায় ১২ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে আমার রিট খারিজ করে দেন। মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের পর এককভাবে আমি থুকড়া ইসলামিয়া ওয়াজেদিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার পদেই আছি। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন ও ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করতে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে লেগেছে।
 
					 
                             
                             
                             
                             
                            