যশোর : যশোরে তিয়ানশির চার প্রতারকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আটক সোহেল ও মিজানুর রহমানকে ওই মামলায় আসামি হিসেবে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। আর পলাতক দুই প্রতারককে আটকের জন্য পুলিশ অভিযান অব্যহত রেখেছে। অপরদিকে পলাতক বদরুলের অফিস বন্ধ রেখে গা ঢাকা দিয়েছে। আবার মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদীকে হুমকি দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে যশোর শহরের তিয়ানশির অনেক কর্মকর্তারা আত্মগোপন করেছেন। সাতক্ষীরার তালা থানার হাজরাকাটি গ্রামের সামাদ গাজীর ছেলে আরিজুল গাজী তিয়ানশির চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় তিনি বলেছেন, যশোর শহরের জেলরোডের হাফিজুর রহমানের বাসার ভাড়াটিয়া এবং ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের জালাল শেখের ছেলে সোহেল রানা, একই জেলার মহেশপুর উপজেলার গোয়ালদাহ গ্রামের মৃত. জব্বারের ছেলে মিজানুর রহমান, যশোর শহরের শংকরপুর নতুন বাসটার্মিনাল এলাকার ডা. আব্দুল আলিম ওরফে হালিম এবং লোন অফিস পাড়ার বদরুল আলমসহ অজ্ঞাত পরিচয়ে আরো ৫/৬জন তিয়ানশি কোম্পানি নামক কোম্পানিতে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় গ্রাম্য সাধারণ অসহায় হতদরিদ্র মানুষকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে কোম্পানীর গ্রাহক বানিয়ে চিকিৎসা প্রদান করেন। এছাড়া কোম্পানির বিভিন্ন প্রডাক্ট বিক্রি এবং মুলধন বিনিয়োগ করে মোটা টাকার লভ্যাংশ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন ভাবে প্রতারণা করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে মাজার হাড়ের রোগ ভোগার কারণে ডাক্তার আব্দুল আলিম (হালিম) কাছে তিনি তিয়ানশি কোম্পানির একটি ওষুধ দেন। এতে কিছু সুস্থ হলে তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মূলধন বিনিয়োগ এবং নতুন নতুন সদস্য তৈরি করে অধিক মুনাফার লোভ দেখায়। এরপর তার কাছ থেকে সর্বোমোট ১লাখ ৫৫ হাজার টাকা নিয়ে ডিস্টিবিউটার কার্ড, ক্যালসিয়াম ঔষুধ,থেরাপি মেশিন এবং একটি ব্রেসলেট প্রদান করে। যা কখনই কোন কাজে আসেনি। পরে তাদেরকে প্রডাক্ট ফেরত নেয়ার কথা বললে তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ৪জনকে সদস্য করলে তার টাকার চেয়ে বেশি টাকা কমিশন পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর আরও ২শ ১৬জনকে সদস্য নিযুক্ত করলে প্রতিমাসে ৪লাখ টাকা কমিশন পাবে এমন প্রতারণার মূলক আশ্বাস দেন। এভাবে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্ধকোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, মামলার পলাতক দুই আসামি ডাক্তার আব্দুল হালিম ও বদরুল আলম তাদের অফিস বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে। বুধবার সারাদিন বদরুলের আখপট্টির অফিস খোলেননি। প্রতারণার শিকার অনেকেই হাজির হয়েছিলেন তার অফিসে। অফিস বন্ধ থাকায় তারা বদরুল কে পায়নি। মামলার তদন্তকারী অফিসার খবির উদ্দিন বলেছেন, প্রতারক দুইজনকে আটকের জন্য অভিযান চলছে। তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। বদরুলের অফিস বন্ধ ছিল বলে তিনি জানিয়েছেন। এদিকে পলাতক অপর আসামি ডাক্তার আ. আলিম ওরফে হালিম মামলার বাদী আরিজুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে মামলা প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানিয়ে মামলা প্রত্যাহার করা হলে তার সমস্ত টাকা পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই সাথে হুমকি দিয়ে বলেছেন, মামলা প্রত্যাহার করা হলে তিয়ানশি কোম্পানির কিছু হবে না। কয়েকদিন পর তারা জামিনে বের হয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে ডাক্তার আ. আলিম ওরফে হালিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবি করেন। পরে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদিকে অনুরোধের কথা বলে তখন তিনি স্বীকার করে বলেন, মামলার বাদি আমার ভাগ্নে। তাকে অনেক কিছু বলতে পারি। একই সাথে বাংলাদেশের অন্যান্য কোম্পানির মত তিয়ানশি ব্যবসা করছে। তাদের প্রতারণা বলে কিছুই নেই। হাত বদল এবং প্রডাক্ট’র দাম বেশি এবং পয়েন্ট বাড়ার ব্যবসা প্রতারণা এমন বক্তব্যে’র উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
এদিকে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ যশোর শহরের তিয়ানশির কয়েকজন কর্মকর্তাকে আটকের জোর চেষ্টা চালিয়েছে। এ সংবাদ জানতে পেয়ে ওই কর্মকর্তারা আত্মগোপন করেছেন।