দেশ প্রতিবেদক :
খুলনা নগরীর বয়রা এলাকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা একটি পরিবারকে অত্যাচার, নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় থানা আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সহযোগীতায় জাফর বিশ্বাস ও তার দলবল এসব করছে বলে অভিযোগ করেছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। রোববার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শেখ শহীদুল্লাহ‘র মেয়ে ১৪নং ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদা ইয়াসমিন সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।
এসময়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, তাদের বাড়ির পাশে মেজর কবির আহমেদের স্ত্রী সুপর্ণা কবিরের ক্রয়কৃত জমিতে গত ৯ বছর ধরে বয়রা এলাকার সামাদ বিশ্বাসের ছেলে জাফর বিশ্বাস ও তার স্ত্রী সালমা বেগম জবরদখল করে রয়েছে। সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু জাফর বিশ্বাস এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার সাধারণ মানুষ ও ভূক্তভোগীর পরিবারের উপর তারা দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করে আসছে। এসকল কাজের প্রতিবাদ করায় ভূক্তভোগী পরিবারের সন্তানদের মারধোর, গালিগালাজ ও জীবন নাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিবারের নামে অপপ্রচার ও সম্মানহানী করছে। এছাড়াও জাফর বিশ্বাস ও তার স্ত্রী নানা কৌশলে পরিবারটির নিকট মোটা অংকের টাকা দাবী করে আসছে। টাকা দিতে রাজী না হওয়ায় মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছে। তাদের নামে থানায় এলাকাবাসীসহ ভূক্তভোগীরা একাধিক জিডি ও অভিযোগ দায়ের করার পরেও কোন প্রতিকার পায়নি।
তিনি লিখিত বক্তব্যে আরো জানান, ইতোপূর্বে জমির মালিক মেজর কবির দখল নিতে আসলে তাদেরকেও অপমান, অসম্মান, গালিগালাজ ও হুমকি প্রদান করে জাফর বিশ্বাস। কয়েক বছর ধরে জমির মালিকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে এবং বর্তমানেও আরো টাকা দাবি করছে দখলবাজ জাফর। দখল না ছাড়ার জন্য তারা বর্তমানে অবস্থানরত নিজ বাড়ীতে আগুন লাগানোর নাটক করে ভূক্তভোগী পরিবারটিকে মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। গত ৩ দিন পূর্বে এলাকাবাসী থানায় উপস্থিত হয়ে তাদেরকে এলাকা থেকে উচ্ছেদ ও প্রবেশ বন্ধ করার জন্য লিখিত অভিযোগ করে। গত শুক্রবার মাকদব্যবসায়ী জাফরকে এলাকায় প্রবেশ ও তার মাদক ব্যবসা বন্ধে মানববন্ধন করে এলাকাবাসি।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি জাফর বিশ্বাস নিজ বাড়ীর বারান্দায় ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। পরে ভূক্তভোগী পরিবারটির বিরুদ্ধে থানায় ককটেল হামলার অভিযোগ দায়ের করে। তাদের এ সকল কর্মকান্ডে জাফর বিশ্বাসের চাচাতো ভাই সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বুলু বিশ্বাস ও কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাস সরাসরি সহায়তা করে আসছে। তারা প্রশাসনের উপর ক্ষমতার চাপ সৃষ্টি করছে।
সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ ও প্রশাসনের নিকট নিজেদের নিরাপত্তা কামনা করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জাফর বিশ্বাস মুঠোফোনে জানান, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাদের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় আমার জিডি করা রয়েছে। তৌহিদা ইয়াসমিনের দেবর বিদেশে পাঠানোর নামে আমার নিকট হতে ১০ লক্ষ টাকা নেয়। পরবর্তীতে টাকা ফেরত দিতে না পারায় তারা আমার কাছে একটি জমি বিক্রি করার প্রস্তাব দেয়। পরে যানতে পারি জমিটি ২০ বছর আগেই মেজর কবিরের নিকট বিক্রি করেছে। একটা সময় তারা জমির পরিবর্তে আমাকে ১০ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করে। যা ব্যাংকে ডিজঅনার হলে আমি চেক ডিজঅনারের মামলা করি। আর এসব কারণে পরিবারটি আমার বিরুদ্ধে এসব চক্রান্ত করছে।
মেজর কবিরের জমি দখল করে রাখার অভিযোগের বিষয়ে বলেন, আমি তাদের কোন জমি দখল করিনি। এটা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।
এ বিষয়ে মেজর কবিরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জমিটি আমরা ১৯৮২ সালে ক্রয় করি। জাফর বিশ্বাস আমার জমিটি অনেকদিন ধরে দখল করে রেখেছে। আমি এ বিষয়ে আদালতে মামলা করেছি। সে আমার জমি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেও টালবাহানা করছে। এখন পর্যন্ত সে জমিটি জবরদখল করে রেখেছে।
অভিযোগের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান বিশ্বাস মুঠোফোনে জানান, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। জাফর বিশ্বাস আমাদের এখানে থাকেন না। তার সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। তাছাড়া এ বিষয়টি সম্বন্ধে আমি কিছুই জানিনা এবং যারা অভিযোগ করেছে তাদেরকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনিনা। তাই জাফর বিশ্বাসকে সহায়তা করার কোন প্রশ্নই আসে না।
জাফর বিশ্বাসের চাচাতো ভাই সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বুুলু বিশ্বাস অভিযোগের বিষয়ে বলেন, জাফর বিশ্বাস ২০০৭ সালে আমাদের এলাকা থেকে জায়গা বিক্রি করে চলে গেছে। তার সাথে আমাদের যোগাযোগ নেই। তাই এ বিষয়ে আমার সহায়তা করার কোন প্রশ্নই আসে না। তবে ওদের মধ্যে জমি বিক্রি নিয়ে টাকার লেনদেন হয়েছিল এবং এটা নিয়ে মামলাও হয়েছে বলে শুনেছি।