ফুলতলায় তালিকাভুক্ত কৃষক ও চালকল মালিকদের অসহযোগিতা ভাটা পড়েছে সরকারের ধানচাল সংগ্রহ অভিযান

প্রকাশঃ ২০২০-০৬-১৮ - ১৭:০৯

তাপস কুমার বিশ্বাসঃ চালকল মালিক ও কৃষকদের অসহযোগিতায় ফুলতলা উপজেলায় সরকারের ধানচাল সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে যেতে বসেছে। উদ্বোধনের পর মাস অতিবাহিত হলেও লক্ষমাত্রার ১০ ভাগ ধানচাল সংগ্রহ হয়নি। জেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংগ্রহ অভিযান সফলভাবে শেষ করার আশাব্যক্ত করেন। আপদকালিন মজুদের জন্য সরকার প্রতিবছর আমন ও বোরো মৌসুমে স্থানীয় চালকল মালিকদের নিকট থেকে নির্ধারিত মূল্যে ধানচাল সংগ্রহ করে। করোনার কারণে চলতি বোরো মৌসুমে সরকার এ সংগ্রহ অভিযানকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এ লক্ষে এবার ধানচাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা বেশি ধরা হয়েছে। তবে ফুলতলায় চালকল মালিক ও তালিকাভুক্ত কৃষকদের অসহযোগিতা বা গড়িমসির কারণে এবারের সংগ্রহ অভিযানের গতি পাচ্ছে না বলে খাদ্য বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়।

ফুলতলায় কৃষকদের হাসি মোবাইল অ্যাপস এর মাধ্যমে সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে ধান ক্রয়ের জন্য ১০ মে থেকে রেজিষ্টেশন শুরু করে। ১৮ মে স্থানীয় এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এ ধান ক্রয় অভিযানের উদ্বোধন করেন। উপজেলায় মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬৮৫ মেঃটন ধান। সাড়ে ৬ হাজার কৃষককের মধ্যে লটারীর মাধ্যমে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ৬৮৫ জন কৃষকদের তালিকভুক্ত করা হয়। তালিকাভুক্ত প্রত্যেক কৃষক ২৬ টাকা কেজি দরে ১ মেঃটন ধান বিক্রয় করতে পারবেন। উদ্বোধনের পর থেকে মাস অতিবাহিত হলেও ১৫ জুন পর্যন্ত ১৭১ জন কৃষকদের নিকট থেকে ১৭১ মেঃটন ধান সংগ্রহ করা হয়। অন্যান্য বছরে এ সময়ের মধ্যে অন্ততঃ শতকরা ৫০ ভাগ ধান সংগ্রহ হয়ে যেত। কারণ হিসেবে জানা গেছে, বর্তমান বাজারে ধানের মূল্য বৃদ্ধি, করোনা ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কৃষকপ্রতিনিধি মোঃ রবিউল ইসলাম মোল্যা বলেন, আমি যথা সময়ে ধান সরবরাহ করেছি। অপরদিকে বসুরাবাদ গ্রামের কৃষক প্রতিনিধি বিনয় বিশ্বাস বলেন, বর্তমান বাজারে ধানে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এই মূহুর্তে খাদ্য গুদামে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ধানের দাম বাজারে কম হলে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে ধান সরবরাহ করত।

অপরদিকে ৩৬ টাকা কেজি দরে ৫হাজার ৫৯ মেঃটন চাল বরাদ্দ দিয়েছে ফুলতলায়। ১৬ জন চালকল মালিক এই চাল সরবরাহ করার জন্য খাদ্য বিভাগের সাথে ১০ মে চুক্তিবদ্ধ হয়। কিন্তু ১৬ জুন পর্যন্ত তারা ১০ ভাগ চালও সরবরাহ করতে পারেনি। বাকি চাল না দিয়ে বাজার মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা রকম অজুহাত দেখাচ্ছে বলে খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়। ফুলতলার ১৬টি মিল মালিকের মধ্যে জয়তুন অটো রাইচ এন্ড ডাল মিল বরাদ্দ পেয়েছে ৪ হাজার ২শ’ মেঃটন। যাহা জেলার ৪ ভাগের এক ভাগ। মিল কর্তৃপক্ষ ১৬ জুন পর্যন্ত সরবরাহ করছে ১শ’ ৮০ মেঃটন। এদিকে মাহাবুব ব্রাদার্স বরাদ্দ পেয়েছে ৬শ’ ৭৬ মেঃটন। মিল কর্তৃপক্ষ ১৬ জুন পর্যন্ত সরবরাহ করছে ১শ’ ৪০ মেঃটন। এই বড় দুটি রাইচমিল মোট বরাদ্দ পেয়েছে ৪ হাজার ৮শ’ ৭৬ মে”টন। বাকি ১৪টি মিলে বরাদ্দ পেয়েছে ১শ’ ৮৩ মে”টন। এই বরাদ্দ নিয়ে হ্যাচকিং মালিকদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও খাদ্য বিভাগের নীতিমালার জন্য তারা বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানা যায়। চালকল মালিকদের দাবি বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি মোটা ধানের সংকট রয়েছে। মাহাবুব ব্রাদার্স এর পক্ষে ম্যানেজার আঃ মজিদ জানান, যে সমস্ত এলাকা থেকে ধান ক্রয় করা হয়, সেখানে ধানের দাম বৃদ্ধি ও বাজারে মোটা চালের সংকট থাকায় এ মূহুর্তে গুদামে কাঙ্খিত চাল দিলে লোকসান গুনতে হবে। জয়তুন অটো রাইচ এন্ড ডাল মিল মালিক শেখ শফিয়ার রহমানের কাছে গুদামে চাল সরবরাহ না করা প্রসংগে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, বাজারে বর্তমানে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়া, করোনা ভাইরাস ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে তিনি খুব শিঘ্রই আরও কিছু চাল সরবরাহ করবেন বলে জানান।

ফুলতলা উপজেলা খাদ্য ক্রয় কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, যেহেতু ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত ধানচাল সংগহের সময় রয়েছে। এ মূহুর্তে কিছুটা বিলম্ব হলেও সময় মত মিল মালিক ও কৃষকরা ধান ও চাল সরবরাহ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে সরকারের ধানচাল সংগ্রহ অভিযান ভেস্তে যেতে পারে সচেতনমহল মনে করেন।