আবু হোসেন সুমন, মোংলা, বাগেরহাট :
মোংলা পৌর শহরের প্রধান মাছ বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির শাপলাপাতা মাছ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাজারে এ মাছ কেটে বিক্রি হচ্ছে ৪ শ ও সাড়ে ৪ শ টাকা কেজি দরে। তবে এই মাছ শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ তা জানেন না বলে দাবী করেছেন বিক্রেতারা। এদিকে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন উপকূলের নদ-নদীতে বিলুপ্ত প্রজাতির এ মাছ শিকার নিষিদ্ধ এবং বিক্রি সম্পূর্ণ আইনত নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অপরাধ। তারপরও কেউই তা মানছেন না। স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর ও বনবিভাগের নিরব ভূমিকায় অবাধে শাপলাপাতা মাছ আহরণ, সংরক্ষণ ও বিপনন হচ্ছে।
মোংলা পোর্ট পৌরসভা মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোঃ আফজাল ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, প্রায় প্রতিদিনই সাগর থেকে জেলেরা শাপলাপাতা মাছ বাজারে আনছেন। এই মাছ ধরা বা বিক্রি যে নিষিদ্ধ তা আমরা জানিনা, আমাদের কেউ কখনও বলেননি। সাগর থেকে এই মাছ শিকার করে নদী পথে আনার সময় বনবিভাগের কোন কর্মকর্তারা তো এতে বাঁধা দেন না। দোষ কি শুধু বাজারের ব্যবসায়ীদের। যারা এ মাছ সাগর থেকে ধরেন তাদের দেখার দায়িত্ব কাদের বলে প্রশ্ন রাখেন তারা।
বাজারের অপর মৎস্য ব্যবসায়ী মোঃ সোলায়মান হোসেন বলেন, বনবিভাগের লোকজনই শাপলাপাতা মাছ বাজারে আনায় সহায়তা করেন। তারা নিষেধ করলেতো আর এই মাছ বাজারে ওঠানো সম্ভব না।
অন্য আরো এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের বিএম (বোটম্যান) মোঃ মিজানুর রহমান এসব মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি করার সুযোগ দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক দফা টাকা নিয়েছেন।
তবে ফরেস্টের বিএম মিজানুর রহমানের দাবী, তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের উত্থাপিত অভিযোগ সত্য নয়, সম্পূর্ণ মিথ্যা। তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে পশ্চিম বনবিভাগ খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, মুলত প্রচার-প্রচারণার অভাবেই কেউ জানেননা যে শাপলাপাতা মাছ শিকার ও বিক্রয় নিষিদ্ধ। এখন থেকে মাইকিং করে সকলকে সতর্ক করবো আমরা। আর বিএম মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
শাপলাপাতা মাছের বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুর রউফ বলেন, সাগরে দিনের পর দিন এভাবে নিধন চলতে থাকলে এক সময় এই শাপলাপাতা মাছ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বনবিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণেই এ মাছ শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মাছ শিকার হওয়ায় জীববৈচিত্র মারাত্মকভাবে বাঁধাগ্রস্থ হবে। সাগরে এই মাছের নিধন ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, শাপলাপাতা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘ ষ্টিংরে ফিস’। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) কর্তৃক শাপলাপাতা মাছকে বিপন্ন প্রায় প্রজাতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ সালের আইন অনুযায়ী এই মাছ সম্পূর্ণ শিকার নিষিদ্ধ।