রায়ের পর খুলনায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ : গ্রেফতার ১০

প্রকাশঃ ২০১৮-০২-০৮ - ২০:৪৯

খুলনা : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ১০-১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে বিএনপি দাবি করেছে।
এর আগে দুপুর পৌঁনে ২টার দিকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলো মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, সহ-দপ্তর সম্পাদক শামসুজ্জামান চঞ্চল, জাসাসের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান দিপু, দৌলতপুর থানা যুবদল নেতা মো. সালাউদ্দিন, রানা ও বাবুসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বেলা সোয়া ১১টার দিকে মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা পুলিশের বাঁধা অতিক্রম করে নগরীর কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর আরও নেতাকর্মী প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, সহ-দপ্তর সম্পাদক শামসুজ্জামান চঞ্চল, জাসাসের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান দিপু, যুবদল নেতা মো. সালাউদ্দিন ও রানাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া একই সময় দলীয় কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী হেরাজ মার্কেটের মধ্যে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে ১০-১২জন নেতাকর্মী আহত হয়।
মহানগর গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোস্তাক আহমেদ বলেন, পুলিশের কাজে বাঁধা দেওয়ায় বিএনপির ৪ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় পুলিশকে দেখে দৌড় দেওয়ায় রানা নামে আরো যুবককে আটক করা হয়।
এদিকে খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার পর দলীয় কার্যালয়ের সিঁড়ি থেকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম ও যুবদল কর্মী বাবুকে গ্রেফতার করে। এ সময় বিএনপি কার্যালয়ের পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে কিছুসংখক বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের উপর মৃদু লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ কওে দেয়। বিক্ষুব্ধ বিএনপি কর্মীরা এ সময় পুলিশ লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে দলীয় কার্যালয় চত্বরে কড়া পুলিশি প্রহরার মধ্যে বিএনপি একটি সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তৃতা করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, আজিজুল হাসান দুলু প্রমুখ।
সমাবেশে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আমরা যেমন আশঙ্কা করেছিলাম, সে রকমই মিথ্য ও সাজানো মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি রায় প্রত্যাখ্যান করে বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলখানায় রেখে শান্তিতে ক্ষমতা পরিচালনা করা যাবে না।
অপরদিকে, সকাল থেকেই দলীয় কার্যালয় ও আশপাশ এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান গ্রহণ করে। খালেদা জিয়ার শাস্তির রায় ঘোষণা করার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নগরীতে আনন্দ মিছিল করে। এদিকে খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার পর সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নগরীতে দেড় সহস্রাধিক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়। এছাড়া ছয় প্লাটুন বিজিবি সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নগরীতে সাধারণ মানুষের চলাচল এবং যানবাহন চলাচল তুলনামূলক কম ছিল। অপরদিকে, শহরের বেশির ভাগ স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল অনেকটা কম। এর আগে বুধবার রাত থেকেই খুলনার রাজপথ অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত নগরীতে সকল প্রকার লাঠি, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য বহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)।
শহরে প্রবেশের সবগুলো পথে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বসানো হয় তল্লাশি চৌকি। বাড়ানো হয় টহল। খুলনা থেকে ঢাকাসহ দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ ছিল। শহরে গণপরিবহনও চলে তুলনামূলক অনেক কম।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দ.) আব্দুল্লাহ আরেফ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কোনো বাঁধা দিচ্ছি না। তবে কেউ সহিংসতা করলে আমরা তা পেশাদারিত্ব ও আইনানুগভাবে মোকাবিলা করব।