চট্টগ্রাম ব্যুরো:চট্টগ্রাম রেলওয়েতে অডিটর পদে দুর্নীতির মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় রেলওয়ের সাবেক ও বর্তমান ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২১ অক্টোবর) ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় বিশেষ জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।
আসামিরা হলেন- মো. নজরুল ইসলাম, এবিএম মফিজুল ইসলাম, জিএম মামুনুর রশিদ, এএফএম শহীদুল্লাহ, মো. আনিসুল হক, হোসনা আক্তার, ফারজানা সুলতানা, মো. নুরুল আমিন, সঞ্চিতা সাদেক, অপূর্ব বিশ্বাস, জিএম আবুল কালাম, মো. মনিরুজ্জামান ও প্রদীপ কুমার সরকার।
২০১৮ সালে আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্র অনুযায়ী মো. নজরুল ইসলাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত এফএ অ্যান্ড সিএ/সার্বিক/পূর্ব ও পরবর্তীতে সিভিল অডিট অধিদফতরের মহাপরিচালক, এবিএম মফিজুল ইসলাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাব কর্মকর্তা ও পরবর্তীতে অবসরপ্রাপ্ত, জিএম মামুনুর রশিদ রেল ভবনের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ও পরবর্তীতে বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতরের উপ-পরিচালক, এএফএম শহীদুল্লাহ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিএফএ ও পরবর্তীতে অবসরপ্রাপ্ত, মো. আনিসুল হক রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিএফএ ও পরবর্তীতে অবসরপ্রাপ্ত, হোসনা আক্তার অডিটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা। এ ছয়জন এজাহারে অভিযুক্ত ছিলেন।
পরবর্তীতে তদন্তের পর চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়- অনিয়মের মাধ্যমে অডিটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা ফারজানা সুলতানা, মো. নুরুল আমিন, সঞ্চিতা সাদেক, অপূর্ব বিশ্বাস, জিএম আবুল কালাম, মো. মনিরুজ্জামান ও প্রদীপ কুমার সরকারকে। ২০১৮ সালে আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্র অনুযায়ী তারা রেলওয়েতে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাবলু গণমাধ্যমেক বলেন, রেলওয়েতে অডিটর পদে দুর্নীতির মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় রেলওয়ের সাবেক ও বর্তমান ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পরে নির্ধারণ করবেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৭ মার্চ রেলওয়েতে অডিটর পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। এতে মোট ৭ হাজার ১৩টি আবেদন জমা পড়ে। ৫ হাজার ১০৮ জন বৈধ আবেদনকারীর মধ্যে ১ হাজার ৯৪৩ জন ওই বছরের ২৮ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। লিখিত পরীক্ষায় ১ হাজার ৮৫ জন উত্তীর্ণ হন। এদের মধ্যে কোটাভিত্তিক ২১৭ জনকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯৬ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। ২৫ জানুয়ারি টেবুলেশন শিট তৈরি করে ওইদিনই ৬৩ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে নিয়োগ কমিটি। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা গৌর চন্দ্র রায় ওই দিনই সুপারিশ অনুমোদন করেন। একই দিন এডিজি (অর্থ) দেলোয়ার হোসেনও তা অনুমোদন করেন এবং ৬৩ জন প্রার্থী বরাবর নিয়োগপত্র প্রেরণ করা হয়। ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়োগকার্য সম্পন্ন হয়।
২০১২ সালে রেলওয়ের নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে দেখা যায়, পোষ্য কোটায় পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকারী প্রার্থীকে বাদ দিয়ে নিয়োগ কমিটির সদস্যরা পরস্পর লাভবান হয়ে সপ্তম হওয়া প্রার্থীকে নিয়োগ দানের সুপারিশ করেছেন এবং তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। মামলার অভিযোগপত্রে নিয়োগ পাওয়া ওই প্রার্থী হোসনা আক্তারকেও আসামি করা হয়।
২০১৭ সালের ১০ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বাদি হয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মোট ১৩ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা।