আয়ের উৎস রহস্যজনক ! চট্টগ্রামে ব্যাংক ম্যানেজারের আত্মহনন

প্রকাশঃ ২০২১-০৪-১৩ - ১৭:৫৯
মোর্শেদ চৌধুরী

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের ব্যাংক ম্যানেজারের আত্মহনন ও আত্বীয়দের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেন বিষয়টি রহস্যজনক। লেনদেনের বিষয়টি ব্যাংক ম্যানেজারের আত্বীয় ও ব্যাংক ম্যানেজার এত টাকা কি ব্যবসায় কোন খাতে বিনিয়োগ করছিল এ নিয়ে পরিস্কার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। চাঞ্চল্যকর মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে এই ধরণের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানায়। কোটি কোটি টাকার যেখানে বিনিয়োগ অথচ দৃশ্যমান কোন ব্যবসা চোখে না পড়ায় উভয় পক্ষের বৈধ আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উক্ত লেনদেনের পেছনে অবৈধ ব্যবসা জড়িত কিনা তা নিয়ে একাধিক সংস্থা তদন্তে নেমেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। থানা পুলিশ থেকে তদন্ত করার জন্য ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে ইতোমধ্যে।
ব্যাংক ম্যানেজার ও তার নিকট আত্বীয়ের লেনদেনের বিষয়য়ে ২০১৯ সালের ২৮ মে নগরীর পাঁচলাইশের একটি আবাসিকে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে।বহুতল ভবনে বসবাস করতেন ব্যাংক ম্যানেজার আবদুল মোরশেদ চৌধুরী। ভবনের নিচে পার্কিং এ দুটি গাড়ি থেকে সিনেমা স্টাইলে নামেন কয়েকজন যুবক। গাড়িতে বসা ছিলেন এক হুইপপুত্র ও আরশাদুল আলম বাচ্চু।
তাদের সহযোগী পারভেজ ইকবাল, রিয়াদসহ কয়েক জন ওই ভবনের মোরশেদের ফ্ল্যাটে গিয়ে তা-ব চালায়। এরপর থেকে কথিত ঋণ পরিশোধ করতে দিতে থাকেন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ। ক্রমাগত ওই চাপ সহ্য করতে না পেরে গত ৭ এপ্রিল আত্মহনন করেন ব্যাংক কর্মকর্তা মোরশেদ চৌধুরী। এভাবেই ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহনন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ঘটনার বর্ণনা দেন মোরশেদের স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী।
মোরশেদের পরিবার এ ঘটনায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল, জাবেদ ইকবাল, পারভেজ ইকবাল এবং নাইম উদ্দিন সাকিব নামে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
নিহতের স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরীর দাবি মোরশেদ ব্যবসার জন্য জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, পারভেজ ইকবাল চৌধুরী এবং সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দিনের কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় ২৫ কোটি টাকা ধার নেন। বিপরীতে তাদের কাছে লাভসহ ৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু তারা বেশি লভ্যাংশের দাবিতে স্বামীর ওপর মানসিক চাপ, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক চাপপ্রয়োগ করতে থাকেন। তাদের অনৈতিক চাপের কারণে আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছেন। সুইসাইড নোটে তিনি সব ঘটনা বলে গেছেন। এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় মামলা করা হলেও এখনো পর্যন্ত পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এখন আসামি পক্ষ উল্টো মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে।
মোরশেদ আত্মহত্যার আগে সুইসাইড নোটও লিখে যান। যাতে উল্লেখ করেন-‘আর পারছি না। সত্যি আর নিতে পারছি না। প্রতিদিন একবার করে মরছি। কিছু লোকের অমানুষিক প্রেসার আমি আর নিতে পারছি না। প্লিজ, সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার জুমকে (মেয়ে) সবাই দেখে রেখো। আল্লাহ হাফেজ।’
নিহতের পরিবারের অভিযোগ- ব্যবসার প্রয়োজনে চেক জামানত সাপেক্ষে টাকা ধার নিলেও অর্থ পরিশোধের পরও চেক ফেরত দেয়নি অভিযুক্তরা। কৌশলে টাকা ফেরত নেওয়ার পরও চেক ডিজঅনার মামলা করে। প্রভাব খাটিয়ে তুলে নিয়ে অস্ত্রের মুখে শারীরিক নির্যাতন, জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া, নিজের ও পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া এবং সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপণ্য করার কারণে মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আবদুল মোরশেদ চৌধুরী আত্মহত্যা করেছেন।
গত ৭ এপ্রিল ভোরে নগরের পাচঁলাইশ থানাধিন মিমি সুপার মার্কেট সংলগ্ন হিলভিউ আবাসিকের নাহার ভবনের ছয়তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পূর্ব মাদারবাড়ীর বাসিন্দা আব্দুল মৌমিন চৌধুরীর ছেলে আব্দুল মোরশেদ চৌধুরী। গত ৮এপ্রিল ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর আত্মহত্যার ঘটনায় চারজনকে আসামি করে স্ত্রী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। মামলায় মধ্যম হালিশর মাইজপাড়ার আলী সওদারগরের বাড়ির ইসহাক মিয়ার ছেলে জাবেদ ইকবাল ও পারভেজ ইকবাল, পাঁচলাইশ এমএম প্যালেসের সৈয়দ মো. আবু মহসিনের ছেলে নাইম উদ্দিন সাকিব ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল। এরমধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তার দুইজন নিকট আত্বীয় রয়েছে। এদিকে নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী জাবেদ ইকবাল ও পারভেজ ইকবালকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগ করে তাদের পক্ষে আইনজীবীরা গত ১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী এডভোকেট তপন কুমার দাশ ও এডভোকেট আজহারুল হক ও এডভোকেট রুপেন আচার্য্য সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে মামলায় পরিকল্পিতভাবে জড়ানো এবং আত্মহনন বাধ্য করার পেছনে জড়িত থাকার বিয়ষটি তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বের করে শাস্তির দাবি জানান। কোন ধরেণের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করা হয়নি বলে দাবি করলে ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরীর দাবি লাভসহ সব টাকা পরিশোধ করা হয়েছে এবং যাবতীয় কাগজ পত্র দেখানোর হয়েছে বলে দাবি করলেও এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি তারা। এ বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তার ভাই মো. রিয়াদ জানান, মামলাটি পাঁচলাইশ থানা থেকে তদন্তের জন্য দেয়া হলেও সম্প্রতি ডিবিকে তদন্তের জন্য দেয়া হয়েছে বলে জানান।