জাহিদুর রহমান তারিক,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের চিত্রা নদীর উপর প্রায় ১,শ ফুটের একটি বেইলী ব্রীজের অভাবে বর্ষা মৌসুমে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী কে ৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। দীর্ঘদিনেও ব্রীজটি না হওয়ায় এ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন তারা। শুস্ক মৌসুমে নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো থাকলেও বর্ষা মৌসুমে সেটি পানিতে ডুবে যাওয়ায় ভোগান্তির যেন তাদের অন্ত নেই। তখন তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পার হতে হয় অথবা যেতে হয় ৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে। বর্ষা মৌসুমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিত্রা নদী পার হওয়ার সময় গত বছর পা পিচলে নদীতে ডুবে মারা যান ঘোপপাড়া গ্রামের শিবু রায়ের ছেলে শিব পরামানিক। এ সময় আহত হয়েছেন ষাটবাড়িয়া গ্রামের প্রশান্ত, ইছাখালির ভাগ্নে বলে পরিচিত প্রশান্ত, বলাকান্দা গ্রামের মতিয়ার রহমানসহ অনেকেই।
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ চিত্রা নদীর এপারে ইছাখালি, একতারপুর, দেবরাজপুর, জটারপাড়া, বনখির্দ্দা, ঘোপপাড়া, ভাটাডাঙ্গা, ফরিয়াদকাঠিসহ অন্তত ২০ টির অধিক গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রামের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য লোকজনকে হাট-বাজার করতে ও আত্মিয়-স্বজনদের বাড়িতে যেতে হয় নদীর ওপারে। নদীর ওপারে আছে বেথুলী বাজার, আবু বক্কক বিশ্বাস ও মকছেদ আলী কলেজ, চাপরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিএসবি সম্মিলিত মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছ মল্লিকপুর, ষাটবাড়ীয়া, মনোহরপুর, বলাকান্দর, জহুরপুর, দিঘেরপাড় বসুন্ধরা, চাপরাইল, নগর চাপরাইলসহ একাধিক গ্রাম। নদীর এপারের অর্থাৎ ইছাখালীসহ অন্যান্য গ্রামের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার করার জন্য এবং সাধারণ জনগনকে হাট-বাজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে যেতে হয় বেথুলীবাজারসহ অন্যান্য স্থানে। তাদের একমাত্র পারাপারের ভরসা হচ্ছে বাঁশের সাঁকো। বছরের শুস্ক মৌসুমে তারা এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হয়ে নদীর ওপারে যেতে হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুম হলেই এলাকাবাসীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ সময় নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাঁশের সাঁকো ডুবে যায়। অনেক সময় সাঁকো ভেঙ্গে চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
উপায় অন্ত না পেয়ে তাদের নৌকা, ভেলায় নদী পার হতে হয় অথবা ৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয় বেথুলী বাজারে আর সেখানে অবস্থিত স্কুল-কলেজে। ইছাখালি গ্রামের শৈলেন্দ্রনাথ সাহা জানান, এই নদীর উপর একটি ব্রীজ খুবই জরুরী। আমরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠায়। জানি না কখন কি যে ঘটে যায়! ঝরণা রানী সাহা নামের এক কলেজ ছাত্রীর মা জানান, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদীর পানির ¯্রােতে সাঁকো ভেঙ্গে যাওয়ায় খুবই সমস্যায় আছি। গতকাল মেয়েটি ৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে কলেজে গেছে। কিন্তু আজ আর কলেজে যেতে পারেনি।
ইছাখালি গ্রামের রমেন সাহা জানান, আমার মেয়ে রিতা সাহা আবু বক্কর বিশ্বাস ও মকছেদ আলী কলেজে একাদশ শ্রেনীতে পড়ে। মেয়ে সাঁতার জানেনা তাই ভয়ে কলেজে পাঠাতে পারছি না। বেথুলী বিএসবি সম্মিলিত মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আমার বিদ্যালয়ে লতা সাহা, দীপা সাহা সহ মোট চার জন প্রতিবন্ধি ছাত্রী আছে। তারা অনেক কষ্ট করে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। আজ কয়েক দিন নদীতে পানি বেশী হবার কারনে তারা স্কুলে আসতে পারছে না। একই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী বর্ণা সাহা বলেন, আমরা একসাথে ৩৫/৪০ জন স্কুলে যাই। কিন্তু ব্রীজের অভাবে আমাদের যাওয়া-আসার বিঘ ঘটছে। উপায় অন্ত না পেয়ে ৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে স্কুলে যেতে হচ্ছে। নদীতে গোসল করতে আসা জরিনা অধিকারী জানান, সাঁকো দিয়ে নদী পার হতে আমাদের ভয় লাগে। গত বছর সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে শিব পরামানিক নামের একজন পানিতে ডুবে মারা গেছে।
বর্তমানে ষাটবাড়িয়া গ্রামের মালেক নামের এক ব্যাক্তি নৌকায় করে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষকে নদী পারাপার করছেন। এজন্য জনপ্রতি তাকে ৫ টাকা করে দিতে হয়। রায়গ্রাম ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর স্বপন অধিকারী জানান, ব্রীজ করে দিবে বলে অনেকে আশা দিয়েছিল। কিন্তু কেউ তা পূরণ করেনি। ফলে ব্রীজের অভাবে জনগনকে দুর্ভোগ ও দুর্দশা পোহাতে হচ্ছে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানান, ব্রীজটি নির্মানের জন্য বৃহত্তর যশোর প্রকল্পের আওতায় আছে। মাটি পরীক্ষা, ডিজাইনসহ অন্যান্য কাজ ঢাকা হেড অফিস করবে। এক কথায় ব্রীজটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও তিনি জানান।