জীবন বাঁচাতে সন্তানসহ ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে

প্রকাশঃ ২০১৮-০৩-২৫ - ১৮:৪৩

সেলিম হায়দার, তালা : দু’বছরের শারীরীক প্রতিবন্ধি ছেলে আল আমিনই কাল হয়ে দাড়িয়েছে গৃহবধু মুক্তার। একদিকে যৌতুকের জন্য নিয়মিত চাপ,অন্যদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধি ছেলে জন্ম দেয়ার জন্য স্ত্রী শাহানা সুলতানা মুক্তা (২০)কে দায়ী করে স্বামী,শ্বশুর-শাশুড়ী ও ভাসুর মিলে তাকে বেদম প্রহার করে সন্তানসহ বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। মারাতœক জখম অবস্থায় স্কুল শিক্ষিকা মায়ের সাথে তার ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে। ঘটনাটি ঘটেছে খুলনা কপিলমুনির সোনাতনকাটি গ্রামে। এব্যাপারে থানায় মালার প্রস্তুতি চলছে।
অভিযোগে জানা যায়,২০১৩ সালে সাতক্ষীরার তালার জেঠুয়া এলাকার স্কুল শিক্ষক মোঃ শওকত হোসেন ও মৌলুদা খাতুন দম্পতির বড় মেয়ে শাহানা সুলতানা মুক্তার বিয়ে হয় পাইকগাছার কপিলমুনির সোনাতনকাটির রমজেত শেখ’র ছেলে হাফিজুর রহমানের সাথে। বিয়ের সময় হাফিজুরকে মোটর সাইকেল,নগদ টাকা,স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য উপঢৌকনসহ প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল দেওয়া হয়। তবে মুক্তার পিতা-মাতা উভয়েই স্কুল শিক্ষক হওয়ায় বিয়ের পর থেকে প্রায়ই তাকে অতিরিক্ত যৌতুকের জন্য নিয়মিত চাপ দেওয়া হত। চাহিদানুযায়ী পরণও করা হয় সেসব যৌতুক। সর্বশেষে তাদের কোল জুড়ে আসে একটি পুত্র সন্তান। তবে সন্তান আগমনের পর আনন্দের পরিবর্তে মুক্তার জীবনে নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতনের খড়গ। কেননা ছেলেটি জন্ম থেকেই শারীরীক প্রতিবন্ধি। স্বামীসহ তার পরিবারের পক্ষ থেকে এজন্য সব সময় মুক্তাকেই দায়ী করা হয়। বিভিন্ন সময় তারা এর জন্য শুধু মুক্তাকেই নয়। অত্যাচার শুরু করে ২ বছরের প্রতিবন্ধী শিশুটির উপরও। তাকে কোলে না নিয়ে,আদর যতœ না করে সারাক্ষন ফেলে রাখা হয় দোলনায়। শিশুটিকে কাছে রাখতে গিয়ে সংসারের বিভিন্ন কাজে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতিতেই মুক্তার উপর শুরু হয় শারীরীক ও মানষিক নির্যাতন।
সর্বশেষ ঘটনার দিন গত ২৪ মার্চ সকালে এনিয়ে কথা কাটা-কাটির এক পর্যায়ে মুক্তার স্বামী হাফিজুর,শ্বশুর রমজেত,শাশুড়ী পারুল ও ভাসুর হাসান মিলে সকাল ১০ টার দিকে মুক্তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বেমন নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে লোহার রড ও লাঠিপেটা করে মারাতœক আহত করে। এসময় তারা তার বাম চোখটি উপড়ে ফেলতে ব্যাপক ধস্তা-ধস্তি শুরু করে এসময় তার ও তার শিশু সন্তানের আতœ চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে তারা তাকে ছেড়ে দিলেও মেয়েকে নিয়ে যেতে মোবাইল করে স্কুল শিক্ষক শ্বশুর শওকত আলীর কাছে। এরপর শওকত আলী তার স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা মৌলুদা খাতুনকে মেয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিলে বিকেলের দিকে তিনি মেয়ে মুক্তাকে বাড়ির বাইরে থেকে উদ্ধার করে সন্ধ্যার দিকে তালা হাসপাতালে ভর্তি করে।
এব্যাপারে মুক্তার পিতা তালার চরগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ শওকত হোসেন ও মা একই উপজেলার আগড়ঝাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মৌলুদা খাতুন সাংবাদিকদের জানান,বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও তার পরিবারের লোকেরা বিভিন্ন অযুহতে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছে। বিভিন্ন সময় যৌতুকের জন্য চাপ দিলেও মেয়ের সংসারের কথা চিন্তা করে তারা তা পূরণ করে আসছেন। সর্বশেষ তাদের একটি ছেলে সন্তান হলেও সে জন্ম থেকে শারীরীক প্রতিবন্ধিী হওয়ায় তারা মুক্তা ও শিশুটির উপর নির্যাতন করছে। এব্যাপারে তারা আইনগত পদক্ষেপ গ্রহনে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।