ডিবির সেই ৭ পুলিশ বরখাস্ত

প্রকাশঃ ২০১৭-১০-২৬ - ১০:৫৬

কক্সবাজার :  কক্সবাজারের টেকনাফে এক ব্যক্তিকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাতজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সাতজন হলেন- এসআই মনিরুজ্জামান, আবুল কালাম আজাদ, এএসআই গোলাম মোস্তফা, ফিরোজ আহমদ, আলাউদ্দিন, কনস্টেবল মোস্তফা আলম ও আল আমিন। এ দলটি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াসিন আরাফাত।
ঘটনার শিকার টেকনাফ পৌরসভার মধ্যম জালিয়াপাড়ার মৃত হোসেন আহমদের ছেলে আবদুল গফুর জানান, মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের থানার পেছনের রোড সংলগ্ন আল গনি রেস্তোঁরা থেকে খাবার খেয়ে বের হওয়ার সময় মাইক্রোবাস যোগে আসা কয়েকজন ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে তুলে নেয়। এরপর তাকে চোখ বেঁধে টানা ২ ঘণ্টা ঘুরানোর পর কলাতলীর একটি মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাতে তাকে নির্যাতন করা হয়। এরপর রাত আড়াই টার দিকে তাকে মাইক্রোবাসে তুলে মেরিন ড্রাইভে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় ডিবি পুলিশ তার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করে। প্রাণের ভয়ে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে ১৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়। ভোরে টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আবদুল গফুরের ভাই টেকনাফ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান জানান, তার ভাইকে আটকের পর মুক্তিপণ চাওয়া শুরু হলে তিনি নানাজনের কাছে সহায়তা চাওয়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে কিছু নগদ টাকা নিয়ে কক্সবাজার শহরে আসেন। শহরে পৌঁছার পর টাকা দেওয়ার জন্য ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে একেকবার একেক জায়গা বলা শুরু হলে তিনি নিরাপত্তাহীনতার কারণে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর তার ভাইকে একটি মাইক্রোবাস যোগে টেকনাফ নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে অন্য একটি মাইক্রোবাসে পেছনে পেছনে যান। এক সময় তার ভাইকে উদ্ধারের জন্য মেরিন ড্রাইভ সড়কে অবস্থিত লেঙ্গুর বিলের নিরাপত্তাবাহিনীর তল্লাশি চৌকির কর্মকর্তার সহায়তা চান। এ সময় নিরাপত্তাবাহিনীর তল্লাশি চৌকির সদস্যরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেন। এর মধ্যে ডিবি পুলিশের কাছে ১৭ লাখ টাকা দেওয়া হলে তার ভাইকে ছেড়ে দিয়ে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ডিবি পুলিশের মাইক্রোবাস কক্সবাজারের দিকে যেতে থাকে। এ সময় নিরাপত্তাবাহিনীর তল্লাশি চৌকির সদস্যরা মাইক্রোবাসটি আটকে রাখে। মাইক্রোবাস আটকে রাখার এক পর্যায়ে এসআই মনিরুজ্জামান দৌঁড়ে পালিয়ে যান। পরে তল্লাশির চেষ্টা চালালে ডিবি পুলিশের সদস্যরা নিরাপত্তাবাহিনীর তল্লাশি চৌকির সদস্যদের গুলি করারও হুমকি দেন। অনেক কথা কাটাকাটির পর ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার করে আটক করা হয় ছয়জনকে।

পরে বিষয়টি নিয়ে র‌্যাব, পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। আটক ছয়জনকে পুলিশ সুপারের জিম্মায় দেওয়া হয়। ১৭ লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

তিনি জানান, পরে মামলার আলামতের স্বার্থে ১৭ লাখ টাকা টেকনাফ থানায় জমা রেখেছেন। এ ঘটনার নেতৃত্ব দেওয়া ইয়াসিন আরফাতসহ সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয় জানান, পুলিশ বিভাগীয় মামলা করবে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সাতজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।