তালায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে গুঁজে দেওয়া হচ্ছে নিষিদ্ধ বই

প্রকাশঃ ২০১৮-০১-২৯ - ১৫:৩৫

সেলিম হায়দার, তালা, সাতক্ষীরাঃ নতুন শিক্ষা বর্ষকে সামনে রেখে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্ক বোর্ডকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাতক্ষীরার তালায় এক শ্রেণীর মুনাফালোভী শিক্ষক ও প্রকাশণী কতৃপক্ষ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে বাধ্যতামূলক আবারো গুঁজে দিচ্ছে নিষিদ্ধ গাইড বই।
তালা – পাটকেলঘাটা লাইব্রেরীগুলো পরোক্ষভাবে বই বিক্রি করলেও মফস্বলের লাইব্রেরী বা দোকানিরা এক প্রকার প্রকাশ্যে বিক্রি করছে এসব নিষিদ্ধ গাইড বা নোট বই। গত কয়েক বছর হল উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষকদের সমিতির মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও এসব নিষিদ্ধ বই বিক্রিতে এখনো সরব রয়েছেন তারা এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। এর আগে তারা তৃণমূলের বিভিন্ন শিক্ষকদের সাথে জেলা সদরে বৈঠকও করেছেন বলে নিশ্চিত করেছিল নির্ভর যোগ্য একাধিক সূত্র। অথচ স্থানীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা সরকারি নির্দেশনাকে পরোক্ষভাবে পাশকাটিয়ে বলছেন,তার জানামতে কোথাও কোন প্রকার গাইড বা নোট বই বিক্রি করছেননা। করলে অবশ্যই তারা ব্যবস্থা েিনবেন।
অভিযোগে জানাগেছে যে,নতুন শিক্ষা বর্ষে তালার ২১১ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৯ বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন প্রকাশণী প্রতিষ্ঠান তাদের প্রকাশিত বই তালিকাভুক্ত করতে সেই গত বছরের শেষ সময় থেকে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে আসছিল। তবে সরকারিভাবে এব্যাপারে বিধি নিষেধ বলবৎ থাকায় তারা দেরীতে হলেও সেই পুরনো পদ্ধতিতে বই বিক্রি করছে বিভিন্ন লাইব্রেরী বা দোকানিরা। সচেতন অভিভাবকসহ এলাকবাসী জানান,সৃজণশীল শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকার সব ধরণের গাইড বই নিষিদ্ধ করলেও তালা উপজেলা তা এক দিনের জন্য হলেও বন্ধ হয়নি।
শুধু ধরণ বদলেছে মাত্র। আগে প্রতিটি স্কুল থেকে প্রকাশ্যে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বুক লিষ্ট বা বই এর তালিকা দেওয়া হত আর এখন তা চুপিসারে শ্রেণী শিক্ষকদের মাধ্যমে অলিখিতভাবে সরবরাহ করা হয়। বিভিন্ন প্রকাশণীর পক্ষেও তাদের বইয়ের তালিকা সম্বলিত ক্লাস রুটিন সরবরাহ করছে। এজন্য প্রতি বছর শিক্ষকদের প্রলুব্ধ করতে প্রকাশনা কর্তৃপক্ষ শিক্ষক নেতাদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় বিভিন্ন শিক্ষকদের মাঝে নগদ অর্থ সহ বিভিন্ন সুবিধা পৌছে দিতেন। তবে এবার সবকিছু হচ্ছে অত্যন্ত চুপিসারে।
সূত্র জানায়,তালা উপজেলা এলাকায় মূলত এবার ২য়,৩য়,৪র্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর জন্য ঢাকার বাংলা বাজারের বই সাগর পাবিলিকেসন্স তাদের একের ভিতর সব বই গুলি এক প্রকার ফেরী করে বিক্রি করছে তাদের নির্দিষ্ট এজেন্টদের মাধ্যমে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত শনিবার তালার খেশরা,সাহাপুর,জালালপুর,হরিহরনগর,শালিখা,পাইকগাছার কাটিপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানাযায়, তালার অরুনা বই ঘর ও কাটিপাড়ার জয়ব্রত লাইব্রেরীর স্বত্তাধীকারী শ্রী জগবন্ধুর নিয়োগকৃত কর্মচারী রফিকুল ইসলাম প্রত্যন্ত জনপদের বিভিন্ন স্কুল ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাইকেলযোগে তাদের নির্দিষ্ট লাইব্রেরীর বই পৌছে দিচ্ছে।
এসময় রফিকলের সাথে সরাসরি কথা হলে অবৈধ বই বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে এপ্রতিবেদককে বলেন,তিনি কোম্পানি বা কাটি পাড়ার জগবন্ধুর লোক আপনারা (সাংবাদিকদের) তার সাথে কথা বলেন বিস্তারিত জানতে পারবেন। স্থানীয় একাধিক লাইব্রেরী বা বই দোকানিরা জানান, গাইড বই বিক্রিতে বিধি নিষেধের কথা তারা সুনেছেন তবে তাদের কেউ কিছু বলেনি। তাছাড়া সবাই যখন বিক্রি করছে তাদের বিক্রি করলে দোষের কি?
এব্যাপারে সচেতন অভিভাবকসহ শিক্ষাবিদরা মনে করেন, পূর্বের ন্যায় গাইড বই ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের সেই পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে। তাই উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখতে গাইড বই সংক্রান্ত নীতিমালা বা আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
এব্যাপারে তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহিদুল ইসলাম বলেন,প্রাথমিকস্তরে গাইড বই সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে কেউ বিক্রি করছে কিনা সে ব্যাপারে তার জানা নেই। যদি কারো সামনে এমন বিক্রেতাদের কারো চোখে পড়লে বিষয়টি তাৎক্ষণিক তাকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।