বেশ্যার ছেলের স্কুল গমন!!!
কিরে মাগী তুই নাকি আবার ছেলে টাকে মডার্ণ স্কুলে ভর্তি করেছিস?
হাঁ বাবু ছেলে টা পড়াশোনায় খুব ভালো!
ওই যে অপু মাস্টর আসতো আমাদের বস্তিতে পড়াতে ঔ তো বলতো মালতী তোর ছেলেটার মাথা আছেরে, ওকে ভালো করে পড়াস!
তাই ভর্তি করলাম বাবু!
একরাশ গর্ব যেনো মালতীর ঠোঁটে, আর না হবারই বা কি আছে ; বস্তির এই রকম শরীর বেঁচা কটা মায়ের ছেলে মর্ডান স্কুলে পড়ে?
উফ শালা বেশ্যা মাগী তোর ছেলে শালা মর্ডান স্কুলে পড়বে ?
শালি কোনো পার্থক্য রাখবি না নাকি ভদ্রলোকেদের সাথে, তুই জানিস শালা আমার ছেলেটাও ওই স্কুলেই পড়ে, একপ্রকার মারতে মারতে বলে দেবীবাবু !
শালী ডাক তোর ছেলেকে বলছি শালা বেশ্যার ছেলে হয়ে এতো শখ কিসের ওর, ডাক শালী তোর ছেলেকে !
মালতী দেববাবুর পায়ে ধরে কোনো রকম বোঝাতে সম্মত হয় যে যেনো ওর ছেলেকে দেবীবাবু ওর বেপারে কিছু না বলে, নাহলে ওর ছেলে যে আর সভ্য জগতে মিশতে পারবে না, তাহলে ওর পড়াশোনায় ক্ষতি হবে!!
যাইহোক সেদিন হয়তো সামলানো গেলো দেবীবাবুকে, এই মর্মে যে আজ তাকে বিনি পয়সায় শরীর দিতে হবে!
বেশ্যা তো! দিতে রাজি হয়ে গেলো মালতী!
এখন মালতী নিজের ছেলের দিকে ঠিক ঠাক তাকাতেও পারেনা লজ্জায়!
ছেলে ভদ্র লোকের স্কুলে পড়ে আর মা সে তো বেশ্যা, কোথাও যেনো ভেতর থেকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো মালতীকে !
ভয় ছিলো যদি ছেলে ভদ্র হয়ে বেশ্যা মাকে ছেড়ে চলে যায়, এই সব চিন্তা ভয় আর মর্ডান স্কুলের খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে গেছে মালতী !
এভাবেই চলতে থাকে মালতীর সংসার !
তবে এই বেশ্যা টাকেও হয়তো সাধ দিয়েছিলো ভগবান, তার ছেলে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে যে !
আজ মালতী তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে আজ ও ধান্দা করেনি, কাওকে ছুঁতেও দেয়নি নিজেকে!
ছেলে বাড়ি ফিরতেই মাকে জড়িয়ে ধরে বলে মা আমাদের স্কুলে কাল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, তোমাকে নেমন্তন্ন করেছে, এই দেখো কার্ড !
তুমি যাবেনা মা ?
নারে তোদের মস্ত স্কুল, সব বড় বড় লোক জন আমি গরীব মানুষ গিয়ে কি করবো বল?
না মা তোমাকে কাল যেতেই হবে, নাহলে আমিও যাবোন !
কোনো রকম জোর পূর্বক মালতী যেতে রাজি !
পরদিন ভোর ভোর উঠে মালতী খুঁজে রেখেছে মালতীর বরের দেওয়া প্রথম উপহারের তাঁতের শাড়ী টা, খুব আনন্দ তার আজ যে আবার সে ভদ্র লোকেদের সাথে মিশবে কিছুক্ষনের জন্য, স্বামী মারা যাওয়ার পর প্রথম !
যাইহোক মর্ডান স্কুলে ছেলের সাথে মালতী, অপূর্ব অনুভূতি হচ্ছে তার,কতো লোক, ভদ্র লোক, কতো বড় বড় বেপার, কিন্তু সেই ভয় টা পিছু ছাড়েনি “ছেলে যদি বুঝে যায় আমি বেশ্যা” !
অনুষ্ঠান হলে ঢুকতেই মালতী দেখে সামনের সিটে বসে দেবীবাবু !
মালতী লজ্জায়, ভয়ে পিছনে গিয়ে এক সিটে মাথা নামিয়ে বসে পড়ে, পাছে দেবীবাবু যেনো দেখে না নেই, দেখলেই আজ হয়তো সব জেনে যাবে সবাই, ছেলের কাছে মালতীও আজ বেশ্যার পরিচয় পাবে হয়তো !
অনুষ্ঠান তখন শুরু হয়ে গেছে, এবার মালতীর ছেলেকে স্টেজে ডাকলো পুরস্কার নেওয়ার জন্য কিন্তু মালতীর চোখ নীচে, মুখ নীচে সে দেখবে না কারণ যদি দেবীবাবু দেখে ফেলে !
স্টেজে মালতীর ছেলে, পুরস্কার নেওয়ার পর কিছু বলার জন্য অনুরধ করলো প্রিন্সিপাল মেম !
“আমি দেহব্যাবসায়ির ছেলে ” হাঁ মেডাম আমি গর্বিত,আমি ওনার ছেলে ” গোটা ঘর নিস্তব্ধ হয়ে গেলো মালতীর ছেলের কথায়!
ওই দেখো সবাই আমার মা!!!
শেষ সিটে মাথা লুকিয়ে বসে আছে।
মাথা তোলো মা, সবাই আজ দেখুক তোমায় তুমি আমার মা, আমি গর্বিত মা তোমার জন্য !
সেদিন যখন দেবীবাবু তোমাকে অপমান করেছিলো সেদিন আমি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনেছি, সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম মা তোমার মাথা উঁচু করবো , এটাই তোমার উপহার মা !
আজ আমি প্রথম হয়েছি এটা সাধারণ কিন্তু এক দেহব্যাবসায়ির ছেলে প্রথম এটাই অসাধরণ কিছু মা ! মালতীর চোখে আনন্দ অশ্রু, সেও আজ গর্বিত, এখন তার লজ্জা নেই, নেই ভয় !
সমগ্র ঘর শুনে যাচ্ছিলো সেদিন এক বেশ্যার ছেলের আত্মচিত্কার!!!
—- আবুল কালাম আজাদ