ইউনিক ডেক্সঃ ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুরের পরিবেশ রক্ষায় অন্যতম উদ্যোগ ‘শিফা গার্ডেন’। ঝড়ের কবলে পড়ে উপড়ে গেছে বাগানের অসংখ্য ফলজ, বনজ বৃক্ষ। ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে গেছে ঔষধী বৃক্ষও। এছাড়াও আম, কাঁঠাল, লিচু, লেবু, পেয়ারা সহ বাগানের প্রায় সব ফল-ই মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন বাগানের মালিক তরুণ উদ্যোগ হাবিব উল্লাহ হাবিব।
রবিবার বাগানে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এক সময়ের সবুজে ভরা বাগান এখন বিধ্বস্ত এলাকা। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পড়ে আছে উপড়ে যাওয়া ও ভেঙ্গে যাওয়া ফলজ-বনজ বৃক্ষ। সম্প্রতি কক্সবাজার-টেকনাফের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে বাগান। ঝড়ের আঘাতের গাছের ফল পড়ে আছে মাটিতে। একটি গাছেও কোন আম নেই। সব আম ঝরে পড়ে গেছে।
বাগানের মালিক তরুণ উদ্যোক্তা হাবিব উল্লাহ জানান, প্রতি বছর তিনি ৯/১০ লক্ষ ফল বিক্রি করতেন। যা দিয়ে বাগানের শ্রমিকদের বেতন ও বাগান পরিচর্যার কাজ করতেন। এ বছর টাকার ফলও বিক্রি করতে পারেনি। ফলন তুলবে এমন সময়ই ঘূর্ণিঝড় মোরা’র আঘাতে সব শেষ।
তিনি আরও বলেন, ঝড়ের আঘাতে ৬ হাজারের বেশি বৃক্ষের ক্ষতি হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশ ফলজ বৃক্ষ। এসব বৃক্ষের অধিকাংশ ভেঙ্গে গেছে। বাকি সব গোড়ালি সহ উপড়ে গেছে। এছাড়া যেসব বৃক্ষ বাগানে অবশিষ্ট সেগুলো হেলেদুলে পড়ে আছে।
বাগানের মালিক বলেন, এমনিতেই এবছর কোন ফল বিক্রি করতে পারবনা। তার উপর আবার পরিচর্যার কাজ করতে দ্বিগুণ। বাগানে যত্রতত্র যেসব ফলমূল পড়ে আছে, যেসব বৃক্ষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এসব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার শ্রমিক খাটাতে হবে। সব মিলিয়ে এখন কি করি ভেবে কুল পাচ্ছিনা।
বাগানের নিয়মিত কাজ করেন মছেন চাকমা (২৫)। তিনি বলেন, এরকম ঝড় বাতাস জীবনেও দেখিনি। এছাড়া এবছর যা ক্ষতি হয়েছে-অতীতে কোনদিন হয়নি।
বাগানের কর্মচারী এবাদুল্লাহ (২৬) বলেন, ফলমূল বিক্রি করেই আমাদের বেতন দিতে বাগানের মালিক। কিন্তু এবছর সব শেষ হয়ে গেছে।
বাগানে দৈনিক ৭/৮ জন কর্মচারী ছাড়াও মাসিক বেতনধারী ২০ জন শ্রমিক কাজ করছে। শ্রমিকের বেতন, বাগানের পরিচর্যায় ব্যয়কৃত টাকা একটা অংশ আসতো ফল বিক্রি থেকে। কিন্তু এবছর ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে বাগান মালিকের।
বাগানের মালিক তরুণ উদ্যোগ হাবিব উল্লাহ হাবিব বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে শিফা গার্ডেন করে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য সৃষ্টি করেছিলাম। নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে অর্জিত টাকা এ বাগানে ব্যয় করেছিলাম। ঘূর্ণিঁঝড়ের আঘাত আজ আমি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। একদিকে ঋণ পরিশোধ, অন্যদিকে বাগান কর্মচারীদের বেতন আদায়। সব মিলিয়ে চরম বেকাদায় পড়েছি এবছর। কারণ আগামী ফল ফলনের জন্য অর্থাৎ ৬ হাজার বৃক্ষে ফলন ফলানোর জন্য কমপক্ষে ১৫ হাজার চারা রোপণ করতে হবে। এতে ব্যাপক অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন।
উদ্যোক্তা হাবিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবুজ বনায়ন সৃষ্টির ব্যাপারে ব্যাপক নির্দেশনা দিয়েছেন। শিফা গার্ডেন জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনের একটি বিরল দৃষ্টান্ত। এ মুহুর্তে সরকারিভাবে আমাকে সহযোগিতা করলে আমি হয়তো বাগানকে আগের অবস্থায় ফিরে নিতে সক্ষম হবো।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ সূত্র জানায়, পরিবেশ ও বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পরিবেশ তথা বৃক্ষ রোপন ও সামাজিক বনায়নের জন্য জনগণকে ব্যাপক উৎসাহ প্রদান করেছে। পাশাপাশি দিয়েছে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধাও। যেসব বন তথা বাগান পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে সেগুলো প্রতি সরকারের সুনজর রয়েছে। আর ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় তো সরকারের সহযোগিতা অব্যাহতই রয়েছে।