তাপস কুমার বিশ্বাস, ফুলতলা (খুলনা)// বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুছ এর সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গতকালের দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক আমাদের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক। ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ে আমাদের সাথে তাদের কুটনৈতিক সম্পর্ক ঠিক থাকলেও রাজনৈতিক বিভিন্ন কারনে সম্পর্কের টানাপোড়ন ছিল। একটা দেশের সাথে আরেকটা দেশের সম্পর্ক হবে সাম্যতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। কিন্তু বিগত সময়ে ভারত আমাদের উপর প্রভুত্বসুলভ আচরণ করেন। সীমান্ত হত্যা, তিস্তার পানি চুক্তি, সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারত সবসময় আমাদের সাথে নানা টালবাহানা করে আসছে। ভারত ও তার জনগণ আমাদের শত্রু নয় কিন্তু ভারতের শাসকদল ক্ষমতাসীন বিজেপি চরম সাম্প্রদায়িক একটা দল। জুলাই আগষ্ট মাসে ছাত্র-জনতা যখন তাদের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছিল তখন এদেশের ফ্যাসিষ্ট ও স্যাডিস্ট শেখ হাসিনা তাদের উপর জুলুম নির্যাতন করে ২ হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও ৩০ হাজারের অধিক জনগণকে আহত করেছে। খুন, গুম, অর্থ পাচারসহ দুই শতাধিক মামলার আসামী স্যাডিস্ট শেখ হাসিনার বিচার আর্ন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইবুনালে শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ও রেড এ্যালার্ট জারি করেছে। অথচ এমন একজন অপরাধীকে আশ্রয় দেয়া কোন অবস্থাতেই গণতান্ত্রিক দেশের কাছে কাম্য নয়।
শনিবার সকাল ৮টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ফুলতলার দামোদর ইউনিয়ন শাখা আয়োজিত দামোদর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাইমারী স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। ইউনিয়ন জামায়াতের আমির ইঞ্জিঃ শাব্বির আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারী মুন্সী মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম। দামোদর ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ফুলতলা উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আঃ আলিম মোল্যা, সেক্রেটারী মাওলানা সাইফুল হাসান খান, নায়েবে আমির মাওঃ শেখ ওবায়দুল্লাহ, কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওঃ আজিজুল হক, খুলনা জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আবু ইউসুফ ফকির, ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক মোঃ বোরহান উদ্দিন গাজী, প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ হুসাইন আহমেদ, উপজেলা শিবিরের সভাপতি আঃ রহিম খান, উপজেলা জামায়াতের যুব বিভাগের সভাপতি শেখ আলাউদ্দিন, ফ ম আঃ রহমান, পেশাজীবি বিভাগের সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, আবুল হোসেন মোড়ল, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরোজ মাহমুদ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী মারুফুল কবির, সাবেক শিবির নেতা অধ্যাপক অহিদুজ্জামান, মুন্সী আঃ সামাদ, আঃ জলিল জমাদ্দার, মোঃ আজগর হোসেন, ফুলতলা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাস্টার মফিজুল ইসলাম, সেক্রেটারী হাফেজ গাজী আলামিন, জামিরা ইউনিয়ন সেক্রেটারী মোঃ মিজানুর রহমান, ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান, সহ-সভাপতি মোঃ হায়দার আলী ভুঁইয়া, সেক্রেটারী আঃ সবুর প্রমুখ।
সেক্রেটারী জেনারেল তার ছাত্র জীবনের রাজনীতির শুরুর কথা বলতে গিয়ে বলেন, ৭৪ সালে প্রথম জাসদ ছাত্রলীগে যোগদানের মধ্য দিয়ে তিনি তার রাজনীতির জীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি কার্ল মার্কস ও লেলিনের বই পড়ার মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্রের সংজ্ঞা পড়েন। সমাজতন্ত্র মানুষকে নাস্তিক্যবাদের দিকে আহবান জানায় যা একজন মুসলিম হিসেবে কাম্য নয়। পরবর্তীতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যোগদান করেন। এ সময় তিনি বিএল কলেজের তৎকালিন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে ফুলতলা অঞ্চলের বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মীদের কাছে বিভিন্ন বাধার শিকার হন।
ঈদ পুর্নমিলনী অনুষ্ঠানের অর্থ তুলে ধরে জামায়াত সেক্রেটারী আরো বলেন, রমজানের উদ্দেশ্য ছিল তাকওয়া অর্জন করা। যে বা যারা রোজার মাধ্যমে নৈতিক শক্তি তৈরি করতে পারে, বিবেকের শক্তিকে জাগ্রত করতে পারে আর পশুত্বকে কুরবানি করতে পারে তারাই তো সফলকাম হয়। তাকওয়া অর্জনের মধ্য দিয়ে আমাদের পাপাচার থেকে বেঁচে থাকতে হবে, মৌলিক ইবাদতসমূহ পালন করতে হবে। তবে তাকওয়া নিয়ে চলার সবচেয়ে বড় বাধা হলো রাষ্ট্রে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েম না থাকা। দেশের প্রচলিত আইনে কুরআনের বিধান না থাকায় আমরা পুরোপুরি ইসলাম মানতে পারছিনা। আমাদেরকে মুমিন হতে হবে। দেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি হতে হবে ইসলামের আলোকে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি যদি ইসলামের আলোকে হয় তাহলে মানুষ সত্যিকার অর্থে শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভ করতে পারবে।
বিগত ১৬ বছরকে জুলুম নির্যাতনের এক কালো অধ্যায় উল্লেখ করে পরওয়ার আরো বলেন, জামায়াত নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের বন্ধু। মানুষের দুঃখ, দুর্দশা লাঘবে জামায়াত সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ইসলামী রাষ্ট্রের যে ধারণা মহান রব কুরআনে উল্লেখ করেছেন জামায়াত সেই আলোকেই এই বাংলাদেশকে গড়তে চাই। একটি শোষণ, বঞ্ছনা ও বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র গড়বে যা ২৪এর আন্দোলনের ছাত্র-জনতা বুকে ধারণ করে জুলুম নির্যাতন সয়েছে তবুও পিছপা হয়নি। ছাত্ররা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে যে স্বপ্ন দেখছে জামায়াত তার সাথে একমত পোষণ করে। অতীতের জুলুম নির্যাতন দখলদারিত্ব মুক্ত বাংলাদেশ যদি নির্মান করা না যায় তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন বৃথা যাবে।
আর্ন্তজার্তিক ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের সাবেক নেতৃবৃন্দের বিচার প্রসঙ্গে জামায়াত নেতা বলেন, নিজেদের বিচারক, সাজানো স্বাক্ষী দিয়ে আমাদের নিরপরাধ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে যা জনগণ মেনে নেয়নি। আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর নামে ধর্ষণের মামলা দিয়ে জাতির সাথে উপহাস করা হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আগামী বছরের জুনে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় জামায়াতের অংশগ্রহন প্রসঙ্গে দলের সেক্রেটারী জেনারেল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের তিনটি স্তম্ভ- সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিকতা। জামায়াতে ইসলামী এই তিনটিকে ধারণ করে আগামীর বাংলাদেশ গড়বে। আমাদের আমীরে জামায়াত মানবিক নেতা ডাঃ শফিকুর রহমান এমন একটি বাংলাদেশ বিনির্মানের ঘোষনা দিয়েছে। সুতরাং দেশের জনগণ যদি এই দ¦ায়িত্ব জামায়াতকে দেয়, তাহলে শোষকের ভুমিকাই নয় সেবকের ভুমিকা পালন করবে। জনগন বিভিন্ন দলের শাসন দেখেছে বাকি রয়েছে শুধু ইসলামী দলের শাসন দেখতে। আমরা আলেম ওলামা পীর মাশায়েখসহ ইসলামী সমমনা দলের সাথে আলোচনা চলমান। ফলে আপনারা আগামীতে ইসলামের পক্ষের শক্তিকে ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠালে মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সে সরকার কাজ করবে।