পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : পাইকগাছার কপিলমুনিতে রাশিদা বেগম (৩৪) নামে দুই সন্তানের জননী এক বিধবাকে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের দেবর মফিজুল গাজী ওরফে মইদুল (৩৮)-কে আটক করে পুলিশে দিয়েছে এলাকাবাসী।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে উপজেলার কাশিমনগর গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কাশিমনগর গ্রামের মৃত এছেম আলী গাজীর মেঝ ছেলে মৃত এনামুল গাজীর বিধবা স্ত্রী রাশিদা বেগম প্রতিদিনের মতো শনিবার রাতে তার ১৩ বছর বয়সী মেয়ে তাসমিরা খাতুনকে নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন তার শাশুড়ি এবং কাছেই ভাসুর-জা ও তাদের সন্তানরা।
নিহতের মেয়ে তাসমিরা খাতুন জানায়, গভীর রাতে তার কাকা মফিজুল ইসলাম জমির মিউটেশন করার কথা বলে তার মাকে ঘরের বাইরে ডেকে নেয়। পরে বাইরে থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হলে সে তার মা, কাকা, দাদী ও চাচাকে ডেকে চিৎকার করলেও কেউ সাড়া দেয়নি।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রাতের কোনো এক সময়ে রাশিদাকে ঘর থেকে ফুসলিয়ে বের করে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। তার যৌনাঙ্গে লাঠি জাতীয় বস্তু ঢুকিয়ে গুরুতর ক্ষত সৃষ্টি করা হয়, এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে তাকে হত্যা করে বাড়ির সামনের একটি লিচু গাছে ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে ধারণা করছে পুলিশ।
সকালে স্থানীয় লোকজন লিচু গাছে রাশিদার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লিচু গাছ থেকে মরদেহ উদ্ধার করেন। সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত শেষে ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পর স্থানীয়রা সন্দেহভাজন হিসেবে নিহতের দেবর মফিজুল ইসলাম ওরফে মইদুলকে আটক করে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে বেঁধে রাখে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
তবে নিহতের ভাসুর রবিউল গাজী ভিন্ন দাবি করেন। তিনি বলেন, ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে বের হলে লিচু গাছে নড়াচড়ার শব্দ পান। বিড়াল উঠেছে মনে করে বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। পরে নামাজ শেষে ঘেরে চলে যান। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তার মেয়ে ফোন করে ঘটনাটি জানালে তিনি ফিরে এসে লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।
এ বিষয়ে কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে রাশিদাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ ও ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।” এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।