ফুলতলা (খুলনা) প্রতিনিধি// বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আসন্ন নির্বাচন হবে জামায়াতসহ ইসলামপন্থীদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। আলেম ওলামা পীর মাশায়েখসহ দেশ প্রেমিক জনতার উপর জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার নির্বাচন। এবারের নির্বাচন হবে আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বাংলদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার নির্বাচন। তাই এখন থেকে প্রতিটি গ্রামে, পাড়া-মহল্লায় প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে আমাদের প্রতীক দাড়িপাল্লার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে হবে।
মঙ্গলবার সকাল ৭টায় দামোদর ইউনিয়ন জামায়াত আয়োজিত গাড়াখোলা ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। দামোদর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির আহমাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাষ্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের যুব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা আল মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি আবু ইউসুফ ফকির। ইউনিয়ন সেক্রেটারী মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ফুলতলা উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যা, নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা শেখ ওবায়দুল্লাহ, সেক্রেটারী মাওলানা সাইফুল হাসান খাঁন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ মোঃ আলাউদ্দিন, ড. মোঃ আজিজুল হক, উপজেলা পেশাজীবী বিভাগের সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, ফুলতলা ইউনিয়ন আমির মাষ্টার মফিজুল ইসলাম, সেক্রেটারী হাফেজ আলামিন গাজী, জেলা শিবির নেতা হুসাইন আহমদ, দামোদর ইউনিয়ন যুব বিভাগের সভাপতি মোঃ হাবিবুর রহমান, সেক্রেটারী মোঃ ফারুক সরদার, ওলামা বিভাগের সভাপতি হাফেজ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, জামায়াত নেতা হাফেজ ইদ্রিস আলী, মোঃ মকিত শেখ, মোঃ সোহেল সরদার, মাষ্টার মোশারফ হোসেন, ইউপি সদস্য মোঃ ইব্রাহীম গাজী, মাষ্টার আইনুর রহমান, লুৎফর রহমান বিশ্বাস, ইমরুল কায়েস নিথু প্রমুখ।
২০০১ সালে গাড়াখোলা এলাকার স্মৃতিচারণ করে সেক্রেটারী জেনারেল বলেন, বিগত ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী কাজ শুরু হয়েছিল গাড়াখোলা গ্রামে অনুষ্ঠিত মরহুম শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মাহফিলে বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে আবার নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছিলও এই গ্রামে। এমপি হওয়ার পর মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাটসহ এলাকার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলাম। আগামী নির্বাচনেও আপনারা যদি আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেন তাহলে আমি আপনাদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
বিগত সরকারের জুলুম নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে গুম, খুন, হত্যা, রাহাজানি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ছিলো তাদের কাছে সাধারণ ঘটনা। এগুলির বিরুদ্ধে কথা বললেই মামলা হামলা দিয়ে রাষ্ট্রীয় মদদে তাদের হত্যা, গুম, খুন করা হতো। অর্থনৈতিকভাবে দূর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমে বিদেশে লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশকে খাদের কিনারে নিয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয় ইসলামপ্রিয় দেশপ্রেমিক আলেমদেরকে বিনা অপরাধে জুলুম নির্যাতন চালিয়ে কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে বছরের পর বছর রেখেছিল। আমাদের দলের নিবন্ধন ও প্রতীক কেড়ে নিয়ে আমাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলো। আল্লাহর রহমতে আমাদেরকে নিষিদ্ধ করতে গিয়ে আজ তারাই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। তাই সময় এসেছে আগামী নির্বাচনে ইসলামপ্রিয়, আল্লাহ ভীরু, সৎ লোককে ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠানো যাতে তারা একটি জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারে যে রাষ্ট্র গঠন করেছিলো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ), যেখানে থাকবে না কোন বৈষম্য, লুটপাট, দূর্নীতি ও দুঃশাসন।
নির্বাচনী ঐক্যের ব্যাপারে সেক্রেটারী জেনারেল বলেন, ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে পরস্পর পরস্পরের মধ্যে আলোচনা চলছে শীঘ্রই এটা জানা যাবে। আমাদের আমিরে জামায়াত মানবিক নেতা ডাঃ শফিকুর রহমান ইসলামী ঐক্যের ব্যাপারে বলেছেন প্রয়োজনে উনার নিজের আসন ছেড়ে দেবেন। প্রতিটি আসনে ইসলামপন্থীদের একটি প্রতীক থাকবে সকল ইসলামপ্রিয় মুসলমান সেই প্রতীকে সীল মারবে। আশা করি জাতি খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয় দেখতে পাবে।
বৃষ্টির কারণে মাঠের পরিবর্তে মসজিদে সমাবেশের ব্যাপারে গোলাম পরওয়ার বলেন, মসজিদ হলো ইবাদতের স্থান। অনেকে মনে করে মসজিদে শুধু নামাজ পড়বে তসবিহ তাহলিল করবে এটাই ইবাদত। এর বাইরে কোনকিছু আর ইবাদত নয়। ইবাদত মানে হলো গোলামী করা। সকল কাজে আল্লাহকে রব মেনে তার গোলামী করাই হলো ইবাদত। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সংসদ ছিল মসজিদে নবাবী। প্রিয় নবী ঐখান থেকে রাষ্ট্র সংস্কার, পরিচালনাসহ সকল সিদ্ধান্ত নিতেন। তাই আমাদের আজকের সমাবেশের আলোচনা ও আগামীর বাংলাদেশ কিভাবে পরিচালিত হবে, কিভাবে সংস্কার হতে হবে সেসব বিষয়ে আপনাদের সচেতন করা। সুতরাং এটাও ইবাদতের মধ্যে গণ্য হবে। এসময় তিনি কুরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যারা রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচার ফায়সালা কুরআন অনুযায়ী করেনা তারা কাফের, তারা জালিম, তারা ফাসেক। রাষ্ট্রে আল্লাহর আইন না থাকলে পূর্ণ মুসলিম হওয়া যায় না। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম অশ্লীলতা, বেলাল্লাপনাসহ পাপাচারে নিমজ্জিত। শাসকগণ নির্বাচনের আগে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের কথা বললেও নির্বাচনের পরে নিজেদেরই শুধু ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে, মানুষের হয়না। এজন্য আমাদের দেশ যদি আমরা কুরআন দিয়ে চালাতে পারি তাহলে রাষ্ট্রে এ ধরনের অন্যায়, অনাচার থাকবেনা। আল্লাহর ওয়াদা শাসক যদি ঈমান আনার পরে আল্লাহকে ভয় করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাহলে আল্লাহ আসমান ও জমিনের সকল বরকতের দরজা খুলে দিবেন। তাই এমন লোকদের আমাদের নির্বাচিত করতে হবে যারা হবে আল্লাহওয়ালা ও ইসলাম প্রিয়।