ফুলতলা (খুলনা) প্রতিনিধি// উপজেলা পরিষদে গিয়ে নিজ বুকে থাবা দিয়ে “আমি এখনও বাঘ, বাঘের মতোই আছি” বলার আধা ঘন্টা পরেই প্রতিপক্ষের দুর্বৃত্তরা ফুলতলার ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান ও তালিকভূক্ত শীর্ঘ সন্ত্রাসী পৌঁনে একশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ ফারুক মোল্যা (৪৮) কে দিনে দুপুরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম ও পায়ের রগ কেটে ফেলে রেখে যায়। এ সময় তার ব্যবহৃত মটরসাইকেলও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। খবর পেয়ে ফুলতলা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কোমরে এক রাউন্ড গুলি ও রিভলবারসহ ফারুককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ এবং জলন্ত মটরসাইকেলের আগুন নিভায়। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ফুলতলার বেজেরডাঙ্গার মধ্যডাঙ্গা এলাকায়। তিনি ফুলতলার পয়গ্রাম এলাকার মৃতঃ হাসান মোল্যার পুত্র।
পুলিশ ও এলাকাবাসি জানায়, বুধবার বেলা ১১টার দিকে ফুলতলা উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে স্বাক্ষাত করে ফুলতলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের যান। কোন এক ব্যক্তির ফোন পেয়ে তিনি মরটসাইকেল যোগে বেজেরডাঙ্গা রেল স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন। মধ্যডাঙ্গা সাবেক সেনাসদস্য মিজানুরের বাড়ির সামনে আসলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা প্রতিপক্ষের দুর্বৃত্তরা তার গতি রোধ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যপুরি কুপিয়ে ডান হাত ভেঙে এবং বাম পায়ের রগ কেটে দেয়। তার মৃত্যু নিশ্চিত জেনে দুর্বৃত্তরা মটরসাইকেলটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে গুরুতর অবস্থায় ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ফুলতলা থানার ওসি তদন্ত মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ফারুক মোল্যাকে কুপিয়ে জখমের খবর শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে অচেতন অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখি। এ সময় তার কোমর থেকে এক রাউন্ড গুলিসহ রিভলবার উদ্ধার এবং অগ্নিসংযোগকৃত মটরসাইকেলটির আগুন নিভানো হয়। ফুলতলার ৪নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ফারুক মোল্যার ২টি হত্যা মামলায় আদালত তাকে ৭৪ বছরের কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেন। তবে উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিনে রয়েছেন।
পুলিশ জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সন্ত্রাসী তালিকায় ফারুক মোল্যার নাম ৫ নম্বরে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৪টি হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ ১৬ টি মামলা রয়েছে। সরকারের সাধারণ ক্ষমার আওতায় আত্মসমার্পনের সুযোগে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল পাবনায় গিয়ে আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে তার ৩২ সন্ত্রাসী ক্যাডার নিয়ে আত্মসমার্পন করেন। তখন থেকেই ঈদসহ বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সংসদ ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও খুলনা পুলিশ সুপার উপস্থিতি থেকে তাদেরকে উৎসব উৎযাপনে চেকের মাধ্যমে টাকা প্রদান করেন। এ ছাড়া তাদেরকে পুনর্বাসনের জন্য দি সোনার বাংলা সমবায় সমিতির নামে ৩ দফায় কয়েক কোটি টাকা প্রদান করা হয়।
শীর্ষ চরমপন্থি ক্যাডার ফারুক মোল্যা ফুলতলার ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সদস্য হিসাবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেন। বিভিন্ন ঘাট, বালু উত্তোলনসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা আদায় এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের দিন তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে ফারুক শিকিরহাট হাফ রাস্তা এলাকায় আন্দোলনকারী বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীদের উপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করে। পরবর্তীতে তারা সংগঠিত হয়ে আওয়ামী ক্যাডার ফারুক মোল্যার অফিস, বাড়ি ও মটরসাইকেল ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। বিএনপি কর্মী জিকো হত্যা মামলায় তাকে আসামী করা হয়। কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও গত এক মাস ধরে এলাকায় তিনি সদলবল নিয়ে প্রকাশ্যে আসেন। পুলিশ অজ্ঞাত কারণে তাকে গ্রেফতার করেনি। এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, উপার বাংলায় পালিয়ে থাকা এক শীর্ষ সন্ত্রাসী ও বাহিনীর প্রধান সম্প্রতি ফুলতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে আনা গোনা দেখা দেয়। কারো ইন্দনে অথবা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাদের দ্বারা এ ঘটনা ঘটেছে কি না সে বিষয়টিকে সামনে রেখে এগুনো হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় ফুলতলা থানায় কোন মামলা হয়নি। তবে ফারুকের অবস্থা গুরুতর বলে হাসপাতাল সূত্রে জানিয়েছেন।