ফুলতলার দক্ষিণডিহিতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তীর সমাপনী অনুষ্ঠান

ফুলতলা (খুলনা) প্রতিনিধি// খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, দক্ষিণডিহি’র সাথে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিল গভীর সম্পর্ক। শিলাইদহের কুঠি বাড়িতে তাঁর বিচরণ থাকলেও পূর্ব পুরুষরা ছিল খুলনাতে। একজন সাধারণ মানুষ হয়েও তিনি তাঁর সাহিত্য ও কর্মের মধ্য দিয়ে বিশ্বের একজন অসাধারণ মানুষে পরিনত হয়েছেন। তিনি ফুলতলার দক্ষিণডিহিতে মৃণালিনী দেবীকে বিবাহ করেছিলেন বলেই আজ এই অঞ্চল রবীন্দ্র ভক্তদের মনে স্থান করে নিয়েছে। সেই সূত্রে দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স উন্নয়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

খুলনার ফুলতলা দক্ষিণডিহিতে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৩দিন ব্যাপী রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী ও লোকমেলার সমাপনী দিনে বুধবার সন্ধ্যায় মৃণালিনী মঞ্চে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনার পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভুইয়া বিপিএম সেবা, খুলনার অতিরিক্ত ডিআইজ মোঃ নিজামুল হক মোল্যা, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির। স্বাগত বক্তৃতা করেন ইউএনও খোশনূর রুবাইয়াৎ। অনুষ্ঠানে “সমাজ সংস্কার রবীন্দ্র ভাবনার আলোকে” শীর্ষক আলোচনা করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী জাফর উদ্দিন, সাংবাদিক বিধানদাস গুপ্ত। পওে প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষের পরিচালনায় এবং শিল্পীদের পরিবেশনায় কবিতা আবৃতি, রবীন্দ্র সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন এ্যাড. মিনা মিজানুর রহমান, অনুপম মিত্র প্রমুখ।

আমাদের পরতে পরতে রবীন্দ্রনাথ

মোঃ আশরাফুল ইসলাম, সহকারী প্রধান শিক্ষকঃ ৮ মে সোমবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে এবং ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর এক ধর্ণাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই কালজয়ী কবি।

বাংলা সাহিত্যর এমন কোন শাখা নেই, যেখানে কবিগুরুর লেখনীর ছোঁয়া লাগেনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে ‘কবিগুরু’ ও ‘বিশ্বকবি’ অভিধায় ভূষিত করা হয়।

১৮৮৩ সালে (ফুলতলা, খুলনার মেয়ে) মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সেই সূত্রে তাঁর সাথে আমাদের আত্মার সম্পর্ক। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয়।

আজি হতে শতর্বষ পরে/ কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি/শত কৌতুহল ভরে/ . . . আজি হতে শতর্বষ পরে/ এখন করিছো গান সে কোন নুতন কবি/ তোমাদের ঘরে!’ এক’শ বছরেরও বেশি আগে বাঙালি পাঠকদের প্রতি এই জিঞ্জাসা ছিল কবির। রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তার রচিত ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ ও ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গান দুটি যথাক্রমে ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। মনে করা হয়, শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত ‘শ্রীলঙ্কা মাতা’ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা।

বিশ্বকবির ১৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ ও তার সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিনিধি।’তাঁর লেখা একটি বাক্যের মর্ম খুজতে আমি আজও নিরন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি,” মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক।”

লেখকঃ মোঃ আশরাফুল ইসলাম, সহকারী প্রধান শিক্ষক, আব্দুল লতিফ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফুলতলা, খুলনা।