চলন্ত বাসে ডাকাতি ও যৌন নিপীড়ন এবার টাঙ্গাইলে গ্রেফতার ৩

প্রকাশঃ ২০২৫-০২-২৩ - ১০:০৯

ডেস্ক নিউজ : ঢাকা থেকে রাজশাহীর পথে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও যাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ। তাঁদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। শুক্রবার রাতে ঢাকার সাভারের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার ওই ঘটনায় নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় আটক বাসচালক চালকসহ আরও তিনজনকে আটক করে ৫৪ ধারায় আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে তাঁরা ওই দিনই জামিনে মুক্তি পান।

এদিকে বাসে ডাকাতি ও যাত্রীদের যৌন হয়রানির ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে মির্জাপুর থানার একজন সহকারী উপ-পরিদর্শককে (এএসআই) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর নাম আতিকুজ্জামান। তিনি ওই দিন থানার ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন।

মির্জাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন। মোশারফ হোসেন জানান, গত ১৮ তারিখে এএসআই আতিকুজ্জামান থানায় ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করতে এলে তাঁদের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর লিপিবদ্ধ না রাখার অপরাধ ও দায়িত্বে অবহেলা করেন। এ জন্য তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এর আগে একই ঘটনায় নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়। যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ না নেওয়া এবং ঘটনা চেপে রাখার প্রবণতা দেখানোর কারণে তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়।
জানা গেছে, ডাকাতদের কবলে পড়া বাসের যাত্রী ওমর আলী বাদী হয়ে শুক্রবার সকালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় অজ্ঞাতনামা ৮-৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তারও তিন দিন আগে গত সোমবার দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও যাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে।
টাঙ্গাইল পুলিশের হাতে গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিত (২৯), শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মোঃ সবুজ (৩০) ও ঢাকার সাভারের টান গেন্ডা এলাকার শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফ (২৮)। তাঁদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিতের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল­াপাড়া থানায় একটি ও ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানায় একটি বাস ডাকাতি মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে।
পুলিশ সুপার : ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে উত্তরবঙ্গগামী চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন টাঙ্গাইলের জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বাসে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটতে পারে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
পুলিশ সুপার জানান, গ্রেফতার তিনজনই আন্তঃজেলার ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। শুক্রবার রাতে সাভার এলাকা থেকে এই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় লুণ্ঠিত ৩টি মোবাইল ফোন, একটি ছুরি ও ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে একজনের নাম মুহিত। তার বাড়ি মানিকগঞ্জে। অন্যরা হলেন শরীয়তপুরের সবুজ ও ঢাকার শরীফ।
গ্রেফতার তিনজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বারত দিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া তিনজন প্রাথমিকভাবে অপরাধ স্বীকার করেছে। এই ঘটনার সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত। তাদেরও গ্রেফতার করা হবে দ্রুত।’
এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সুপার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। তবে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা-পয়সা নেওয়ার সময় শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটতে পারে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘বাসের নারী যাত্রীদের সঙ্গে এরই মধ্যে কথা হয়েছে। তারাও আমাদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। আশা করি দ্রুতই পুরো ঘটনা আমরা জানতে পারব।’