খুলনায় আদালত পাড়ায় জোড়া খুন, জখম ১

প্রকাশঃ ২০২৫-১১-৩০ - ২১:৩০

ইউনিক ডেস্ক : দুপুর সোয়া ১২টা, হঠাৎ গুলির শব্দ। মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনের সড়কে পড়ে আছে গুলিবিদ্ধ দুই যুবক। গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে গেলেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করে ওই সড়ক দিয়েই পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এসময় একজন পথচারীকেও জখম করে তারা। শুরু হয় আতঙ্কিত মানুষের ছোটাছুটি। রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে খুলনার আদালত পাড়ায় বাইরে সড়কেও চিত্র ছিল এমনই। ঘটনাস্থল থেকে ধারালো অস্ত্র ও গুলির খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। জব্দ করা হয় দুটি মোটর সাইকেল। নিহতরা হচ্ছেন, খুলনা সদর থানার নতুন বাজার লঞ্চঘাট এলাকার মান্নাফের ছেলে হাসিব হাওলাদার (৪৫) এবং বাগমারা এলাকার বাসিন্দা এজাজ শেখের ছেলে মোঃ ফজলে রাব্বি রাজন (৩৮)। তারা সোনাডাঙ্গা থানায় গত ৩১ মার্চ অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলার আসামি। ওই মামলায় হাজিরা দিতে তারা আদালতে এসেছিলেন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ছয়টি করে মামলা রয়েছে। তারা শহরের সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারী পলাশ বাহিনির সদস্য বলে পুলিশ জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অস্ত্র মামলায় হাজিরা দিতে মহানগর দায়রা জজ আদালতে এসেছিলেন রাজন ও হাসিব। হাজিরা দিয়ে প্রধান ফটক থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৬ থেকে ৭ জনের একটি দল রাজনের ঘাড়ে চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়। অপর একজন এসে তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে। একই সময় হাসিবকে গুলি করে। তারা মাটিতে পড়ে গেলে কয়েকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় আশপাশের মানুষ নিরাপদ স্থানে সরে যান। কিছুক্ষণ পর আরও কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা। এরপর তারা পূর্বপাশের সড়ক দিয়ে চলে যায়।
হত্যাকাণ্ডের সময় আদালত ভবনের বারান্দায় শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদেরই একজন মোবাইলে হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ধারণ করেন ওই ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, আদালত চত্বরের সীমানা প্রাচীরের গা ঘেঁষে এক যুবক পড়ে আছে। আরেক যুবক রাম দা দিয়ে তাকে কুপিয়ে যাচ্ছে। এ সময় পিস্তল হাতে আরও কয়েকজন যুবক আশপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কিছুসময় পর পূর্বপাশের সড়ক দিয়ে দলবেঁধে চলে যাচ্ছেন তারা।
পুলিশ তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে, নিহত দুই জনের সাথে আততায়ীরা রুম্মান নামের ওই পথচারীকেও কুপিয়ে জখম করে। তাকে ঘটনাস্থলের আশ-পাশের কেউ পুলিশ পৌছাবার আগে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আহত রুম্মানের ব্যাপারে তাৎক্ষনিকভাবে থানা পুলিশ অবহিত ছিলেন না। যদিও কেএমপি’র বিশেষ শাখার এক কর্মকর্তা তার আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আদালত এলাকায় গোলাগুলির ঘটনায় মুহূর্তে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলের খানিকটা স্থানে রক্ত জমাট বেধে ছিল। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের স্থল ঘিরে রেখেছিল। সেখানে থেকে পিস্তলের কয়েক রাউণ্ড গুলি, ধাঁরালো অস্ত্র ও দুইটি মোটর সাইকেল আলামত হিসেবে জব্দ হয়েছে। দুইটি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থল ও আশ-পাশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন ছিলেন।
খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলাম দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, লাশ ময়না তদন্তের অপেক্ষায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, বিচারকদের পরামর্শ অনুযায়ী আদালতের চত্বরে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। ঘটনাটি আদালত চত্বরের বাইরে হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সোর্স কাজে লাগিয়ে হত্যার কারণ ও জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত, অভ্যুত্থানের পর গত ১৬ মাসে খুলনায় ৪৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সন্ত্রাসীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ, মাদক ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে ২০টি। এর প্রতিটিতেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে।