ডুমুরিয়ায় মহাশ্মশান ও মন্দিরের জায়গা নিয়ে কুচক্রী মহলের দৌড়ঝাপ

প্রকাশঃ ২০১৮-০৩-১৭ - ১৬:১৫

ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি : ডুমুরিয়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী পাঁচ গ্রামের মানুষের একমাত্র শেষ ঠিকানা বৈঠাহারা মহাশ্মশান ও কালী মন্দির পড়েছে উচ্ছেদ অভিমুখে। সরকারী খাস সম্পত্তিতে গড়ে ওঠা ধর্মীয় এই স্থানটি দখলে নিতে স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল শুরু করেছে দৌড়ছাপ। তাই পবিত্র এই স্থানটি রক্ষায় শ্মশান কমিটিসহ গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।

লিখিত আবেদন সুত্রে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলা ও পার্শ্ববতী তালা উপজেলার মিলন স্থল হল বৈঠাহারা এলাকা। এর চার পাশ জুড়ে রয়েছে কাঠবুনিয়া, আধারমানিক, খলশিবুনিয়া ও খোরেরাবাদ নামক গ্রামগুলি। এখানকার অধিকাংশ মানুষই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাই তাদের পূজা অর্চনা ও মৃত মানুষের সৎকারের জন্য শালতা নদীর তীরে প্রায় ৪ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলে বৈঠাহারা মহাশ্মশান নামক ধর্মীয় স্থানটি। প্রাচীন কাল থেকেই এই শ্মশানে মৃত মানুষের সৎকার কাজ হয়ে আসছে। তাছাড়া এখানে রয়েছে কালী মন্দির। প্রতি বছর কার্ত্তিক মাসে পাঁচ গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে বিশাল আয়োজনের মধ্যে দিয়ে কালীপূজা ও উৎসব করে থাকে। শ্মশান ও মন্দিরের জায়গা হিসেবে স্থানীয় সুকৃতি রঞ্জন সরদার, পঞ্চান্ন মন্ডল, রাধাকান্ত সানা ও লক্ষীকান্ত সানা ১২ শতাংশ ভুমি দান করেন। আর সেখানে সরকারি খাস সম্পত্তি রয়েছে তিন বিঘা। কিন্তু সরকরি এই সম্পত্তি এখন আর থাকছে না। বৈঠাহারা গ্রামের মৃত অশ্বিনী ঢালীর ছেলে পরিমল ঢালী (৫৫) ও একই গ্রামের মৃত মহেন্দ্র মন্ডলের ছেলে হৃদয় মন্ডল (৪০) শ্মশানের মোট সম্পত্তি থেকে ১.৪০ একর জায়গা দখলে নিতে পায়তারা শুরু করেছে। ওই দু,জন তারা মিথ্যা ও কাল্পনিক কাগজপত্র নিয়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই ধর্মীয় স্থানের এ সম্পত্তি নিয়ে শ্মশান কমিটির নেতৃবৃন্দসহ পাঁচ গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। কমিটির সভাপতি অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নির্মল কুমার বিশ্বাস ও সাধারন সম্পাদক ইউপি সদস্য বিষ্ণুপদ মন্ডল বলেন, প্রাচীন কাল থেকেই এখানে মৃত মানুষের সৎকার করে আসছি। বৈঠাহারা আধারমানিক, খোরেরাবাদ, খলশিবুনিয়া ও তালা উপজেলার কাঠবুনিয়া গ্রামের মৃত মানুষের শেষ ঠিকানা হল এই মহাশ্মশান। হঠাৎ অবগত হই গ্রামের পরিমল ঢালী ও হৃদয় মন্ডল শ্মশানের জায়গা দখলে নেওয়ার পায়তারা শুরু করেছে। এক পর্যায়ে ভুমি অফিসে গিয়ে জানতে পারি পাইকগাছা এলাকার সুভাষ সরদার ও তার স্ত্রী বাসন্তি রানী সরদার বন্দোবস্ত মুলে ২৫৭/৯৪-৯৫ সালে ১.৪০ একর জমি প্রাপ্ত হয়েছে। এই দু’জন এখানকার বাসিন্দা নয়। তাছাড়া তাদের দখলও নেই কোন দিন। এদের নিকট থেকে মিথ্যা ও কাল্পনিক কাগজপত্র এনে পরিমল ও হৃদয় এখন জমি দাবি করে দখলের পায়তারা করছে। আমাদের পাঁচ গ্রামের মানুষের দাবি জায়গাটি শ্মশান ও মন্দিরের জন্য সরকারি ভাবে ব্যবস্থা করা হোক। মাগুরখালী ইউপি চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানা বলেন, সরকারি খাস জসি ভুমিহীনরা বন্দোবস্ত পেয়ে থাকে এটা জানি। কিন্তু অন্য একালার লোক কিভাবে এ জমি পেল এটা অবিশ্বাস্য। এরপরও দাবি করি মানুষের শেষ ঠিকানা হল শ্মশান ও কবর স্থান। তাই এই জায়গা দখলের চেষ্টা মেনে নেওয়া যায় না। তাই উর্দ্ধতন মহলের নিকট দাবি করি সকল ষড়যন্ত্র তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক আর ধর্মীয় স্বার্থে জায়গাটি শ্মশান ও মন্দিরের নামে বরাদ্দ করা হোক। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশেক হাসান বলেন, শ্মশান ও মন্দিরের জায়গা সংক্রান্ত একটি আবেদনপত্র পেয়েছি আর এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরও আবেদন করা হয়েছে। এখন সমন্বয় শেষে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।