বি এম রাকিব হাসান, খুলনা : বৃহত্তর খুলনাঞ্চল মাদকের বিষাক্ত ছোবলে এখন ক্ষত বিক্ষত। কিশোর তরুন যুবক আর বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ নেশায় আসক্ত। ভারত আর মিয়ানমার থেকে অনাগ্রা ও ইয়াবা আসছে প্রতিনিয়ত। শহর বন্দর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাদকের বিশাল নেটওয়ার্ক। হাত বাড়ালেই মাদক। দুশ্চিন্তায় রাতের প্রহর কাটেনা অভিভাবকদের। চায়ের দোকানের মত গড়ে উঠেছে এলাকায় এলাকায় মাদক পয়েন্ট। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হোম ডেলিভারী হচ্ছে ইয়াবা সহ নানা মাদকদ্রব্য। নারকোটিক্স ও আইন শৃক্সখলা বাহিনীর কেউ কেউ সুবিধা নিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। সেল্টার রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের। কোনভাবেই এই ভয়বহ মাদকের যাত্রা থামানো যাচ্ছে না। সূত্রমতে, প্রভাবশালীদের ছাত্রছায়ায় ফেন্সিডিলের পাশাপাশি বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে বাণের জলের মত আসছে অনাগ্রা ও ইয়াবা নামক ট্যাবলেট। ইয়াবা এবং অনাগ্রা রাজধানী সহ বিভিন্ন স্থানে অধিক পরিচিত হলেও বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে নেশার জগতে এটি এখন হটকেক। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও ভারত থেকে অনাগ্রা স্মাগলিং হয়ে প্রবেশ করছে খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা অলিতে গলিতে। সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষক ও আমদানীকারকরা মাসে কোটি টাকার বাণিজ্য করছে। নারকোটিক্স এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় সদস্যরা এ সেক্টর থেকে প্রতিমাসে আদায় করছে লাখ লাখ টাকা। প্রভাবশালী এবং কথিত রাজনীতিবিদদের ড্রইং রুমেও ঐ ভাগের টাকা পৌছে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এর নিকট বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের প্রায় শতাধিক মাদক সম্রাটের তালিক রয়েছে তারা বীরদর্পে এ ব্যবসা চালিয়ে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক সেজেছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থাই নিতে পারছেনা সংশিষ্ট এ বিভাগটি। বিষয়টি নিয়ে খুলনা সদরের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু সম্প্রতি কেএমএসএস আয়োজিত মাদক সম্পর্কিত এক সেমিনারে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাজপথের এ নেতা প্রকাশ্যেই মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্তা ব্যক্তিদের সামনেই তাদের দায়িত্বের অবহেলার কথা তুলে ধরেন এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। খুলনার সিটি মেয়র মনিরুজামান মনি এ ব্যাপারে বিভিন্ন সভা সমাবেশে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভ‚মিকা রাখলেও মুলত তা কোন কাজে আসছে না। যদিও খুলনার পুলিশ ও ভ্রাম্যমান আদালত প্রায় প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য ও মাদকসেবীদের আটক ও নেশার দ্রব্য উদ্ধার করেছেন। কিন্তু তারপরেও নারকোটিক্স বিভাগ এ ধরণের একটি সফলতাও দেখাতে পারেনি। স¤প্রতি দু’দফা ইয়াবা এবং অনাগ্রার এক দফা চালান আটক হয়েছে। এরপর আর তোড়জোড় নেই। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছেনা খুলনাঞ্চলের মানুষ। এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জানান, অনেক সমস্যা রয়েছে নারকোটিক্সের। জনবল এবং যানবাহন সংকটের কারণে আমরা মাদক সম্রাটদের গ্রেফতার করতে পারছিনা। তবে সার্বক্ষনিকভাবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু খুলনার সচেতন নাগরিক নেতারা বলছেন, নারকোটিক্স তাদের কর্মকান্ডে মোটেও আন্তরিক নয়। তারা শুধু চাকুরীর জন্য কতিপয় রুটিন ওয়ার্ক এবং লোক দেখানোর জন্য কিছু মামলা এবং উদ্ধার কর্মকান্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। নাগরিক নেতা ও মানবাধিকার কর্মী এ্যাড: জি এম কামরুজ্জামান বলেন, নারকোটিক্স দপ্তর সজাগ ও আন্তরিক হলে নেশার ব্যবসা অনেকাংশে বন্ধ হতো। তবে এর জন্য চাই রাজনৈতিক অঙ্গিকার ও সমাজ সচেতনতা। তিনি নেশা রোধে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।