রিটন দে লিটন, চট্টগ্রাম: পূর্বাঞ্চল রেলের কোটি টাকার ভূমি দখল করে বাসা ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে রেলের কর্মচারী।
জানা যায় পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে পাহাড়তলী কারখানা শাখায় ২০০৫ সালে খালাসী পদে যোগদান করেন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম শফিক নামের এই কর্মচারী, অভিযোগ রয়েছে অষ্টম শ্রেনীর জাল সনদ দিয়ে চাকুরীতে যোগদান করেন এই শফিকুল। যোগদানের পর কারখানা শাখা শ্রমিকদলে যোগদিয়ে করেন নানা অপকর্ম। দখল করেন পাহাড়তলী আমবাগান ভাঙ্গারপুল রেলওয়ে কলোনীর বিশাল জায়গা। আর সে জায়গাতে ১৫ বছর ধরে বাসা ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে খালাসি শফিকুল।
জানা যায়, পূর্ব রেলের টিকেট কালোবাজারির বড় সিন্ডিকেট প্রধান এই শফিকুল। তার নেতৃত্বে রয়েছে আবার রেল কেন্দ্রীক বিশাল চোর সিন্ডিকেটও। সম্প্রতি কয়েকশ টিকেটসহ শফিকুল ও তার এক সহযোগীকে হাতে নাতে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তখন পাহাড়তলী মডেল থানায় এই ব্যাপারে একটি মামলাও হয়, সে মামলায় শফিকুলসহ তার একসহযোগি পাঁচ মাস জেল খাটেন। পরে জামিনে বেরিয়ে এসে ফের নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছেন এই শফিকুল।
আরও জানা যায়, রেল কেন্দ্রীক বিভিন্ন মামলা চলমান থাকায় দীর্ঘ ১০ বছর তার কোন প্রমোশন ও বাৎসরিক বেতন বৃদ্ধি না হলেও বর্তমানে তিনি রেলের জায়গায় বাসা বরাদ্দ নিয়ে আশপাশের রেলওয়ের প্রায় ১ একর জায়গা দখল করে নেন। এতেই দখলবাজ শফিকুল প্রায় অর্ধশত ঘর বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আবার এসব ঘরে অবৈধভাবে নেয়া হয়েছে গ্যাস লাইন, বিদ্যুৎ লাইন ও পানির লাইনের সংযোগও।
কম বেতনের চাকুরী ওয়ালা শফিকুল রেলের জায়গা দখলে নিয়ে বাণিজ্য করে আসলেও তার এই অপকর্মের জন্য রেল কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথা নেই। সে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে এমন কাণ্ড ঘটালেও নিরব ভুমিকা পালন করছেন রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এতে করে শফিকুল নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন কোটি-কোটি টাকার সম্পত্তির পাহাড়।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় আসার পর পর শ্রমিকদলের চামড়া পাল্টিয়ে যোগ দেন রেলওয়ে শ্রমিকলীগে। তখন রেল শ্রমিকলীগের ব্যানারে টিকেট কালোবাজারি, বাসা বানিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, রেলওয়ে জায়গা দখল করে বিক্রি, ঘর ণির্মাণ, সরকারি পরিত্যক্ত বাসা দখল করে ভাড়া দেওয়া, চাকুরীর ক্ষেত্রে অনুপস্থিত থেকে বেতন তোলা সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আরও জানা যায়, গত খালাসী নিয়োগে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ শ্রমিক ও গ্রামের বাড়ির লোকজন থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। আর চাকুরীর আশায় দেওয়া টাকা ফেরত চাওয়ায় শফিকুল তাদেরকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শফিকুল ইসলাম ২০০৫ সালে রেলওয়ের পাহাড়তলী কারখানায় ওয়ার্কসপ খালাসি হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। চাকরিতে যোগদানের সময় তিনি চালাকি করে জমা দেন ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল রোড় উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার নকল সার্টিফিকেট। তার এই অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন রেলওয়ে শ্রমিকলীগ।
জানা যায়, শ্রমিকলীগ নেতা সিরাজুল ইসলামের হাত ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঋনদান সমিতির (সীমিত) পরিচালক হওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে উঠে খালাসি শফিকুল। তখন প্রতিটি লোন বাবদ শ্রমিকের ন্যায্য টাকা থেকে ৮/১০ হাজার টাকা করে বাধ্যতামূলক দিতে হয় এই শফিকুলকে। এত অভিযোগের পরও সেই রেল প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বুক ফুলিয়ে রেলে চাকুরী করছে অনায়াসে।
এ বিষয়ে জানার জন্য খালাসী শফিকুল ইসলামের মোঠোফোনে একাদিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে এ বিষয়ে রেলওয়ে শ্রমিকলীগে একাংশের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, খালাসি শফিকুলের বিরুদ্ধে আমার কাছে বিভিন্ন অভিযোগ আসলে তখন আমরা তাকে শ্রমিকলীগ থেকে বের করে দিই। পরে সে রেলওয়ে শ্রমিকলীগের আরেকটি গ্রুপে যোগদিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করছে বলে বারবার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে শ্রমিকলীগের অপর অংশের নেতা শেখ লোকমান হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অসুস্থ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে নানা রকম দালালি ও কারসাজি করে খালাসি শফিকুল। শফিকুলের নানা অপকর্মের কারণে পূর্ব রেলের সাধারণ কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা রেল কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্তপূর্বক শফিকুল সিন্ডিকেটকে শাস্তির আওতায় এনে পাহাড়তলী রেল কারখানাকে কলংকমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানার জন্য পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) সরদার শাহাদাত আলী গণমাধ্যমকে জানান, শফিকুলের ব্যাপারে খোজ-খবর নেয়া হচ্ছে। সে যদি রেলের জায়গা দখল করে ঘর-ভাড়া বাণিজ্য করে তাহলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।