আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ : দাকোপে ছাত্রলীগ নেতার অব্যহত হুমকি ও প্রকাশ্যে লাঞ্চিতের অপমান সইতে না পেরে আত্নহত্যার পথ বেছে নিলেন মেধাবী কলেজ ছাত্রী জয়ী মন্ডল (১৭)। এ ঘটনায় জয়ীর পরিবারে চলছে শোকের মাতম আর এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। উপজেলা ছাত্রলীগ অভিযুক্তকে দলের সকল কর্মকান্ড থেকে অব্যহতি দিয়েছে ! এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশী অভিযানের মুখে অভিযুক্ত ছাত্রনেতা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
স্বপ্ন ছিল বড় ডাক্তার হয়ে গরীব দুঃখি মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজেকে উজাড় করে দেবে। কিন্তু বখাটে ছাত্রনেতার লোলুপ দৃষ্টি থামিয়ে দিল একটি স্বপ্নের। অপমৃত্যুর কারনে জয়ী নিজেই আজ ডাক্তারদের ছুরির নীচে ময়না তদন্ত নামক আইনী প্রক্রিয়ার মাঝে নিজেকে সমর্পন করতে বাধ্য হল। ২ ভাই বোনের মধ্যে জয়ী ছিল ছোট। বড় ভাই দেবাঞ্জন মন্ডল একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সামান্য বেতনের চাকুরী করে আদরের বোনকে নিয়ে রঙিন স্বপ্নে বিভোর ছিল। বাবা কুমারেশ মন্ডল একজন কৃষক। দাকোপ উপজেলার উত্তর বানীশান্তা গ্রামের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জয়ী এস এস সিতে জিপিএ ৫ পেয়ে লাউডোপ সরকারী এল বিকে মহিলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কলেজ হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করত বলে জানা গেছে। এইচ এস সি দ্বিতীয় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী জয়ী দাদাকে কথা দিয়েছিল সামনের পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+ পেয়ে পরিবারের মুখ উজ্জল করবে সে। ভুক্তভোগী পরিবার ও থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, বাজুয়া এলাকায় এক শিক্ষকের কাছে নিয়মিত প্রাইভেট পড়তে যাওয়া আসার পথে বাজুয়া এস এন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ইনজামাম মীর্জা তাঁকে কু প্রস্তাব দিয়ে প্রায়ই উত্যক্ত করত। জয়ী বিষয়টি পরিবারকে না জানিয়ে বান্ধবীদের সহযোগীতায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। ঘটনার দিন গত ৫ নভেম্বর রবিবার সহপাটিদের সাথে প্রাইভেট পড়ে আসার পথে ইনজামাম তাঁর পথ আগলে কথা বলার চেষ্টা করে। জয়ী তার আহবানে সাড়া না দেওয়ায় এক পর্যায়ে বখাটে ছাত্রনেতা প্রকাশ্যে তাঁকে চড় থাপ্পড় দেয়। জয়ী অপমানকে অভিমানে পরিনত করে হোস্টেলে ফিরে রাতে সহপার্টিদের সকালে পড়তে না যাওয়ার কথা জানিয়ে একা নিজ কক্ষে ঘুমাতে যায়। সহপার্টিরা সোমবার সকালে নাস্তার টেবিলে জয়ীকে না পেয়ে তার রুমে ডাকাডাকি করে, কিন্তু সাড়া না পেয়ে জানালা দিয়ে উকি মেরে জয়ীর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায়। এ সময় তাদের ডাক চিৎকারে কলেজ প্রশাসন এসে দেহ নামিয়ে থানা পুলিশ ও জয়ীর পরিবারকে খবর দেয়। জানা যায় ততক্ষনে সে মৃত্যু বরন করে। পরবর্তীতে দাকোপ থানা পুলিশ লাশ উর্দ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেলে পাঠায়। এ ঘটনায় সোমবার রাতে জয়ীর বাবা বাদী হয়ে দাকোপ থানায় প্রাথমিকভাবে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে।
অপরদিকে আলোচীত এই আত্নহত্যার খবর প্রচার হলে কলেজ শিক্ষার্থীসহ সমগ্র দাকোপবাসীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। জয়ীর সহপার্টি পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার রাতেই দাকোপ থানার অফিসার ইনচার্জ শাহাবুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ বাজুয়া এলাকায় ইনজামামকে ধরতে রাতভর অভিযান চালায়। কিন্তু ততক্ষনে অভিযুক্ত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ ব্যাপারে জয়ীর ভাই দেবাঞ্জন এই প্রতিবেদকের কাছে বিক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলে “অভিযুক্ত আমার বোনের উপর পাশবিক নির্যাতন করেছে, অথচ কলেজের শিক্ষকরা রাজনৈতিক প্রভাবে কলেজের ক্ষতির আশংকায় আমার সামনে ওই লম্পটের নামে অভিযোগ আনতে সকলকে নিষেধ করে, যেখানে বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদে সেখানে প্রয়োজনে আমার বিচার আমি করবো”। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই নাজমুস সাকিব জানায়, জয়ীর পরিবারের পক্ষ থেকে আত্নহত্যার কারন উল্লেখসহ পৃথক একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতির কথা থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে দাকোপ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারন সম্পাদকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের দু’জনের স্বাক্ষরিত একটি ষ্টাটাসে দেখা যায় অভিযুক্ত ইনজামামুল হক মীর্জাকে শৃক্ষলা ভঙ্গের দায়ে দলীয় সকল দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।