দেশরত্ন শেখ হাসিনা এর জীবনী ও শাসনামলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন

প্রকাশঃ ২০২১-০৯-২৮ - ০১:৫৪

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর জীবনী এবং তার শাসনামলে আর্থ-সামাজিক খাতে দেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি ও অর্জন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৫ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোটবোন শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান। পরবর্তীকালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর ভারতে অবস্থান করেন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডে থেকে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন।

শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্রী সংসদের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি ছিলেন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ৭ জানুয়ারি ২০১৯ শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

শেখ হাসিনা ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে প্রথমবার, ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে দ্বিতীয়বার এবং ২০১৪-২০১৮ মেয়াদে তৃতীয়বার এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ২০১৯-২০২২ মেয়াদে চতুর্থবারের মত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনা চতুর্থ, পঞ্চম ও অষ্টম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় শেখ হাসিনা সবসময়ই আপোষহীন। ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনায় দায়িত্ব নিয়ে তাঁর সরকার ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল স্থাপনের জন্য আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের আওতায় স্থাপিত ট্রাইবুনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে এবং রায় কার্যকর করা হচ্ছে।

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠির রোষানলে পড়েন। তাঁকে বারবার কারান্তরীণ করা হয়। তাঁকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ২২ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়।

শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাঁকে লক্ষ করে পুলিশের গুলিবর্ষণ। এতে যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, বাবুল ও ফাত্তাহ নিহত হন। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে শেখ হাসিনাকে লক্ষ করে এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী শহীদ হন। লালদীঘি ময়দানে ভাষণদানকালে তাঁকে লক্ষ্য করে ২বার গুলি বর্ষণ করা হয়। জনসভা শেষে ফেরার পথে আবারও তাঁর গাড়ি লক্ষ করে গুলি বর্ষণ করা হয়।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার হামলা করা হয়। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে তাঁকে লক্ষ করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে তাঁর কামরা লক্ষ করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়। ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দু’টি বোমা পুতে রাখা হয়। শেখ হাসিনা পৌঁছার পূর্বেই বোমাগুলো সনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
বিএনপি সরকারের সময় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ঐদিন বঙ্গবন্ধু এভিন্যুয়ে এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাঁকে লক্ষ করে এক ডজনেরও বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। লোমহর্ষক সেই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ তাঁর দলের ২২ নেতাকর্মী নিহত হন এবং ৫ শত এর বেশি মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান।

শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা। বাংলাদেশ পেয়েছে নিম্ন থেকে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। শেখ হাসিনার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলো ছিল: ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন। এছাড়া, তিনি কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন।

এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার অঙ্গীকার নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। তৃতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালে সরকার গঠনের পর দেশের সকল মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্তি, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়কে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। একই সাথে জনগণের দোরগোড়ায় ডিজিটাল সেবা পৌঁছানো, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো, পরিবেশ সুরক্ষা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোট দশটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নিয়েই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বেশকিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বিদ্যুৎ, আইসিটি এবং যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, তৃতীয় সমুদ্রবন্দরসহ ছোট-বড় অসংখ্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। মহেশখালীতে দেশের প্রথম ২টি (প্রতিটি ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন) ভাসমান খঘএ টার্মিনাল স্থাপন কার্যক্রম ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। মহাসড়কসমূহ চার লেনে উন্নীত হয়েছে। ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। গত ১০ বছরে ৩৩০ কি.মি. নতুন রেললাইন নির্মাণ ও ১১৩৫ কি.মি. সংস্কার/পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে দেশের অভ্যন্তরে এবং আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা সহজতর হয়েছে।

 

চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর অত্যাধুনিক সমুদ্রবন্দর হিসেবে গড়ে উঠেছে। দেশের ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ১৩টিতে শিল্প উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং আরও ১৫টি নির্মাণাধীন রয়েছে। বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে ২০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে। স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক বিনিয়োগ ১০০ কোটি মার্কিন ডলার অতিক্রম করে, ২০১৫ সালে তা ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায় এবং বর্তমানে তা ৩৮৯ কোটি মার্কিন ডলার। বন অধিদপ্তর থেকে ২০২০ সালে প্রকাশিত তথ্য-কণিকা অনুসারে ২০০৫-০৬ সালের শতকরা ৭-৮ ভাগ থেকে সরকার নিয়ন্ত্রিত বনভূমির বিস্তার দেশের মোট আয়তনের ১৫.৫৮% এ উন্নীত হয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক ও লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠীর বসবাস উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে মোট বনভূমির পরিমাণ সম্প্রসারণ, বন ও বনজ সম্পদের উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও শনাক্তকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশদূষণ রোধ, জলবায়ুপরিবর্তন মোকাবিলা এবং টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচির গ্রহণ করা হয়।

করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অসহায়দের খাদ্যসহায়তা, নগদঅর্থ ও বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানসহ সুচিকিৎসার জন্য করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, অক্সিজেন সরবরাহ এবং বিনামূল্যে করোনা টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করেন।
শেখ হাসিনার শাসনামলে আর্থ-সামাজিক খাতে দেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়।