মোঃ শহীদুল হাসান :
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি বার বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। তার অপরাধ হলো, তিনি দেশের মানুষকে ভালোবাসেন। তিনি সব সময় দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবেন। দেশের উন্নয়নের জন্য সব সময় চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, খুনি জিয়া-মোস্তাকরা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর চেয়েছিলো দেশকে পাকিস্তান বানাবে। তাই তারা দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করে ক্ষমতায় বসেছিলো। তারা দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সকল চেতনা মুছে ফেলতে চেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রাষ্ট্রের বড় বড় পদে বসিয়েছিলো। কিন্তু তারা সফল হয়নি। এখন তাদের দোসররা দেশকে নিয়ে, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র করছে। তারাই সরকারি মদদে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি জামাত কখনো দেশের উন্নতি চায়না। তারা দেশেকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তারা চায়না দেশের মানুষ একটু শান্তিতে থাকুক। কিছুদিন পূর্বে দূর্গাপূজার সময় তারা দেশে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেছে। তারা হিন্দু ভাইদের বাড়ি ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মন্দিরে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। তারা চেয়েছিলো দাঙ্গা লাগিয়ে সারা দেশ অস্থিতিশীল করে ক্ষমতায় যাবে। কিন্তু তারা সফল হয়নি।
তিনি বলেন, যারা দেশ বিরোধী অপশক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তি, লুটেরা তারা ভেবেছিল করোনা শুরু হয়েছে, একটি সুযোগ এসেছে, এবার হয়তো লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাবে। তারা উষ্মা প্রকাশ করেছিল, ভবিষ্যৎবাণী করেছিল। তারা মানুষকে বিপর্যস্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। সেই বিএনপি-জামাত ভেবেছিলো লক্ষ লক্ষ লাশ পড়ে থাকবে। লাশ দাফন কাফন করার সুযোগ থাকবে না। সেই লাশের রাজনীতি যারা করে তারা সেই দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের লাশের কামনা করে। তারা আল্লাহর কাছে মানুষের জন্য সাহায্য না চেয়ে লাশের কামনা করেছিল। তাদের স্বপ্ন ব্যর্থ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক শক্তির স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা আজ বিশ্ব দরবারে সম্মানিত। বড় বড় বিশ্ব নেতারা আজ শেখ হাসিনার প্রশংসা করে। আজ সর্ব ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এগিয়ে। শেখ হাসিনা অনেক দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের কছে আজ আইডল। সবাই শেখ হাসিনার উন্নতি স্বীকার করে শুধু দেশ বিরোধী অপশক্তি স্বীকার করে না। করোনার সময় সারা দেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কর্মিরা যে ভাবে মানুষকে সহযোগিতা করেছে তার জন্য তিনি তাদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, করোনা কালে সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত হয়েছিলো। সে সময় আপনারা যে ভাবে সর্ব দিক দিয়ে মানুষকে সহযোগিতা করেছেন তার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আপনারা করোনা কালে দেশের মানুষের লাশ দাফন করেছেন, সংকার করেছেন, খাবার দিয়েছেন, ধান কেটে দিয়েছেন যা আর কেউ করেনি।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কর্মিদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা হলেন শেখ হাসিনার শক্তি। তাই আপনাদের আগে নিজের ঘর গোছাতে হবে। তৃণমূলকে সংগঠিত করতে হবে। যোগ্য ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনতে হবে। সৎ এবং সাহসীদের দলে জায়গা দিতে হবে এবং বিএনপি জামাতের সকল ষড়যন্ত্র ধ্বংস করে দেশকে সুন্দর ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
গতকাল শনিবার সকালে খুলনা শহীদ হাদিস পার্ক ময়দানে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ খুলনা মহানগর ও খুলনা জেলার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন, খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক মীর বরকত আলী। খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্য সচিব এম এ নাসিম ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মোতালেব হোসেনের পরিচালনায় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্রাতুষ্পুত্র ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম কামাল হোসেন, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্রাতুষ্পুত্র, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বর ও বিসিবি’র পরিচালক শেখ সোহেল উদ্দিন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদদের সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত কুমার অধিকারী, বাবু নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ বাবু পঞ্চানন বিশ^াস এমপি, আক্তারুজ্জামান বাবু এমপি, আব্দুস সালাম মুর্শিদী এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ নাসির উদ্দীন ও নির্মল কুমার চ্যাটার্জী।
সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে জিয়াউর রহমান ও তার সহযোগীরা ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর বিচারের পথও বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে কুখ্যাত ‘ইনডেমিনিটি বিল’ বাতিল করে দেশে ন্যায় বিচারের পথ সুগম করেছিল। যে কারনে হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে এবং বিচারের রায় কার্যকরও হয়েছে। বাকীদেরকেও বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হবে। আগামী র্নিবাচনেও যেন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে সেজন্য সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান। বিশ্বে শেখ হাসিনা এখন উন্নয়নের রোল মডেল। একই সাথে দলের কেউ ভুমি দখল, চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও অনিয়ম-দূর্নীতি থেকে দুরে থেকে কাজ করার আহবান নেতাকর্মীদের।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা আজ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু বিএনপি জামায়াত দেশের এ উন্নতি মেনে নিতে পারছেনা। তারা দেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া মানুষের গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছিলেন। এখন বিদেশে বসে তাদের মূলহোতা তারেক রহমান এগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিএনপি নেতারা সকাল বিকেল মিথ্যা বলে। তাদের সকাল শুরু হয় মিথ্যা কথা দিয়ে। দেশে অপপ্রচারের মূল হোতা হলেন ফখরুল -রিজভী। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা চক্রান্ত করছে। আমাদেরকে যে কোন মূল্যে এ চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের কোন সুযোগ দেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, করোনার মধ্যে বিশ্ব নেতৃত্ব যখন থমকে দাড়িয়েছিল। উন্নত দেশ যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানরা যখন ভীত সন্ত্রস্ত ছিল, আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা সেই মুহূর্তে দেশের দেখভাল শুরু করেছেন। সেদিন অপপ্রচার করা হয়েছিল, বিশ লক্ষ লোক না খেয়ে মারা যাবে। আল্লাহর রহমতে একটি লোকও দেশে না খেয়ে মরতে হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে সেই সময় মানুষের পাশে দাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এস এম কামাল হোসেন বলেন, পঁচাত্তর সালের পর ২১ বছর সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এদেশে বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছিল। শেখ হাসিনা ওই বিষবৃক্ষের মূল্যেপাৎটন করেছেন। অসাম্প্রদায়িক জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়ে তিনি বিশ^কে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারাই হলেন শেখ হাসিনার শক্তি। আপনারাই রক্ষা করতে পারেন শেখ হাসিনাকে। তাহলেই সাম্প্রদায়িকতার ছোবল থেকে রক্ষা পাবে বাংলাদেশ। প্রতিটি মূহুর্তে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আগামী নির্বাচনে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব দিতে হবে। দেশকে রক্ষা করতে হবে।
সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম আফজালুর রহমান বাবু। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশে^র চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সায়েম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ। সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ¦ শেখ মোশাররফ হোসেন ও খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডন, খুলনা মহানগর যুবলীগের আহবায়ক শফিকুল ইসলাম পলাশ, মহানগর ছাত্র লীগের সভাপতি ও মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন।
এসময় খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্জ মিজানুর রহমান মিজান, আওয়ামী লীগ নেতা নুর ইসলাম বন্দ, রফিকুর রহমান রিপন, জামাল উদ্দিন বাচ্চু, সরফুদ্দিন বিশ^াস বাচ্চু, শেখ ফারুক আহমেদ, কামরুজ্জামাল জামাল, এ্যাড. ফরিদ আহমেদ, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য চৈতালী চক্রবর্তী, মোঃ তাওহিদুর রহমান, সুবোল ঘোষ, বিভাস বালা, এস. কে দাস সহ মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ এবং এর অংগসংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনের শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও শ্বেত পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ।
বিকেলে খুলনা ক্লাবে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে খুলনা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগে এম এ নাসিমকে সভাপতি ও এস এম আসাদুজ্জামান রাসেলকে সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগে শেখ মোঃ আবু হানিফকে সভাপতি ও আজিজুর রহমান রাসেলকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।