খুলনা : ‘জেলা আইনশৃঙ্খলা’ এবং ‘সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ’ কমিটির মাসিক সভা রবিবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আমিন উল আহসান এতে সভাপতিত্ব করেন। জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সভায় উপস্থিত সদস্যগণ বিভিন্ন বিষয়ে মতামত তুলে ধরেন। সভাপতি মাদক এবং ইভটিজিং প্রতিরোধে জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন। সভায় বখাটেদের দৌরাত্ব এবং তৎপরতা রুখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মাদক এবং ইভটিজিং এর অভিযোগে ধৃত কিশোর বয়সীদের অভিভাবকদের নিকট থেকে মুচলেকা আদায় ব্যতিত ছাড়া হবে না। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদক বিরোধী কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাছাড়া মাদক সরবরাহকারীদের ধরতে সাঁড়াশী অভিযান অব্যহত আছে। তিনি মাদক বিষয়ে গোপনে তথ্য দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। অক্টোবর/১৭ মাসে বিভিন্ন মাদক স্পটে ৬৪টি অভিযানে ২২জন আসামীর বিরুদ্ধে ২২টি মামলা রুজু করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে ৩৬টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় ১৬জন আসামীর বিরুদ্ধে ১৬টি মামলায় ১জনকে ৩ হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং ১৫জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
সভায় কমিটির কয়েকজন সদস্য জানান, নগরীতে কোন কোন ওষুধের দোকানদার ভোক্তাদের কাছ থেকে মোড়কে লেখা নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করছে। সভাপতি এ ব্যাপারে ক্রেতা সাধারণকে সচেতন করার আহবান জানান। তিনি বলেন, যদি কোন দোকানদারের বিরুদ্ধে এ রকম বেশী দামে ওষুধ বিক্রয়ের অভিযোগ পাওয়া যায় তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধেও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। অক্টোবর/১৭ মাসে অভিযান পরিচালনায় ২টি মামলায় ২ জন আসামীকে ৪০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়।
হাইড্রোলিক হর্ন জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং যত্রতত্র বড় বড় যানবাহন থেকে শুরু করে ইজিবাইক এবং ইঞ্জিনচালিত রিক্সায় হাইড্রোলিক হর্নর ব্যবহার খুলনায় অসহনীয় পরিবেশ দুষণ ঘটাচ্ছে বলে সভার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। প্রেক্ষিতে এটি বাজানো নিষিদ্ধ সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ট্রাফিক পুলিশকে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। খুলনাতে বিভিন্ন মিলে বকেয়া পাওনার দাবীতে শ্রমিক অসন্তোষের ফলশ্রুতিতে গণ আন্দোলনের সম্ভাবনা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটতে পারে বলে কেউ কেউ অভিমত ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে মালিকদের সাথে আলোচনা করে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া জরুরী বলে মতামত ব্যক্ত করা হয়।
সভায় খুলনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার, উপজেলা চেয়ারম্যান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কেএমপি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ অংশগ্রহণ করেন। সভায় আইনশৃঙ্খলা প্রতিবেদনে জানানো হয়, খুলনা মহানগরীর আটটি থানায় গত অক্টোবর/১৭ মাসে রাহাজানি ২টি, চুরি ৭টি, খুন ২টি, দ্রুত বিচারে ২টি, ধর্ষণ ২টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৫টি, নারী ও শিশু পাচার ১টি, মাদকদ্রব্য ১৫৫টি এবং অন্যান্য ৪০টি সহ মোট ২২৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর/১৭ মাসে এ সংখ্যা ছিল ১৮১টি।
জেলার নয়টি থানায় অক্টোবর/১৭ মাসে চুরি ৭টি, খুন ৪টি, অস্ত্র আইনে ২টি, ধর্ষণ ২টি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১৭টি, এসিড নিক্ষেপ ১টি, নারী ও শিশু পাচার ৩টি ও মাদকদ্রব্য ৭১টি এবং অন্যান্য আইনে ৮০টি সহ মোট ১৮৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর/১৭ মাসে এ সংখ্যা ছিল ১৬৮টি।