খুলনা ব্যুরো: বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল হকের তিন ক্যাশিয়ার রয়েছেন বহাল তবিয়তে। খালিশপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বদলী হলেও বাকিরা বুক ফুলিয়ে রয়ে গেছেন। এ তিন জন হলেন খালিশপুর থানার সেকেন্ড অফিসার সঞ্জিত ও বয়রা ফাড়ির ইনচার্জ এসআই রিয়াজ ও এস আই মাসুদ রানা। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অর্থ হাতানোসহ মাদক ব্যবসায় শেল্টার দেয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগকারীরা জানান, এই তিন জনের অত্যাচারে বিগত দিনে বিএনপি—জামাত ও ছাত্র আন্দোলনের নেতা—কর্মীরা চরম আতংকের মধ্যে দিন কাটাতো। রাজনৈতিক কর্মীদের সাথে তারা সন্ত্রাসীর মত আচরণ করতেন। তারা এই ফাঁড়িতে আওয়ামী বিরোধী লোকদের ধরে এনে দিনের পর দিন আটকে রেখে নির্যাতন করতেন। খোজ নিতে গেলে , থানায় কাউকে আনা হয়নি বলে জানিয়ে এক ধরনের উড়ো হুমকি দিতো। এছাড়াও সাধারন মানুষদের মধ্যে আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছলদের টার্গেট করে হয়রানি করে টাকা আদায় করতো। অনেক মানুষকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর ঘটনাও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এই তিন জনের সাথে এলাকার মাদক কারবারী, চিহ্নিত চোর ও ছিনতাইকারী, অপরাধীদের সাথে উঠা—বসা ছিলো। টাকার বিনিময়ে নিরীহ মানুষকে ধরে এনে বিনা অপরাধে নির্মম নির্যাতনের ঘটনাও কম নয় বলে জানান ভুক্তভোগিরা। অন্য একটি ঘটনা সূত্রে, বাস্তহারা এলাকায় সোহেল নামের এক ব্যক্তি তার মাকে নির্যাতন করে। বিষয়টি জানার পর মানিক তার খালাতো ভাই সোহেলকে মারধর করে। এ ঘটনায় সোহেল খালিশপুর থানায় মামলা করে। যার নং—২৮, তাং—২২—০৫—২৪ইং। ওই মামলায় মানিককে ৮নং আসামী করা হয়। বাদীর মা—খালা বলেছেন, মামলা দিতে চাইনি। তবে ওই তিন পুলিশ কর্মকর্তা মামলা দিতে বাধ্য করেছেন। এমন কি তারা মামলা টাইপ করে দেন। শুধু সোহেল স্বাক্ষর করেন। এর বেশী কোন মতামত তার কাছ থেকে নেয়া হয়নি। যারা ঘটনার সময় এলাকায় ছিলেন না, ঘটনার সাথে জড়িত নন, তাদেরও এই মামলায় আসামী করে ওই তিন পুলিশ কর্মকর্তা। আর এ সুযোগে আসামীদের ভয়—ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। বাস্তহারা এলাকায় চম্পা বাদী হয়ে মামলা দেন। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রিয়াজ। ওই মামলার আসামী ধরতে খালিশপুর থানার প্রায় সকল পুলিশ ওসিসহ বাস্তহারায় আসেন। পুলিশের বিশাল বহর দেখে এলাকার সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রাস্ত হয়ে পড়ে। তারা আসার পর হালিমা রহমান নামের এক নারী নেত্রীর বাসার ভিতরে আসামী প্রবেশ করেছে এমন অজুহাতে পুলিশ বাসার ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় হালিমা রহমান বাগেরহাটে ছিলেন। তিনি বাসায় না থাকায় নিরাপত্তা প্রহরীরা গেট আটকে দেয়। কিন্তু অতি উৎসাহি পুলিশ ওয়ালের উপরে উঠে বেলকুনি দিয়ে ভাড়াটিয়ার ঘরের ভিতর দিয়ে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে গেট খুলে নেয় তারা। এ সময় পুলিশ বাড়ির সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিরাপত্তা প্রহরীকে বেধড়ক মারপিট করে। বাসার ভিতরে ঢুকে তল্লাশির নামে ভাংচুর করে। বাড়ির লোকদের মারপিট করে। তারা লিফট ভাঙ্গে। বিষয়টি হালিমা সাবেক পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল হককে মোবাইলে অবগত করেন। তিনি বিষয়টি দেখছেন বলে আশ্বাস্ত করার কথা বললেও সাবেক পুলিম কমিশনারই উস্কিয়ে দেয় বলে জানা যায়। এক পর্যায়ে ওসি আনোয়ার সাংবাদিকদের কাছে বলেন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে এই অভিযান চালানো হয়েছে। পুলিশ হালিমার দুলা ভাইকে পিটিয়ে ড্রেনে ফেলে। তার বোনের ছেলে ও হালিমার বড় ছেলেকে মারপিট করে। তিনি রাত ১০.২৬ মিনিটে বাগেরহাট থেকে রওনা হন। তার আগেই পুলিশ পুরো বাসা ভাংচুর, বাড়ির লোকদের মারপিট করে। বড় ছেলে এ তান্ডব আর নির্যাতনের ভিডিও করলে তার মোবাইল কেড়ে নেয় পুলিশ। হালিমা রহমান বাসায় এসে এ অবস্থা দেখে অসুস্থ হয়ে পড়লে খুমেক হাসপাতালে নেয়া হলে পুলিশ তাকে প্রিজন সেলে ভর্তি করে। হাসপাতালে নেয়ার সময় বোনের ছেলে নাহিদ ও এলাকার ছেলে জাহিদুল তার সাথে গাড়িতে যায়। হালিমা রহমানকে হাসপাতালে রেখে নাহিদ ও জাহিদুল কে বয়রা পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। এ সময় ওই তিন জন পুলিশ এস আই রিয়াজ, এস আই মাসুদ রানা,ও সেকেন্ড অফিসার সঞ্জিত তাদের দু’জনকে হাত পা ও চোখ বেধে নির্মম নির্যাতন করে। ওই দিন রাত তিনটার দিকে তাদের দু’জনকে খালিশপুর থানায় হস্তান্তর করে। প্রিজন সেলে থাকা অবস্থায় খাবার পানি চাইলে দেয়া হয়নি হালিমাকে। ওই প্রিজন সেলে অক্সিজেন ছাড়া আর কোন চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়নি। এমনকি হালিমার সাথে পরিবারের কোন সদস্যকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হালিমাকে হাসপাতালে নেয়ার পর পুলিশ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৭ জন মহিলাসহ ১৪ জনকে আটকে করে। এ সময় পরিবারের মহিলা সদস্যকে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা টেনে হিচড়ে পুলিশের গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। গ্রেফতারের সময় প্রত্যেককে নির্মম নির্যাতন করে। ১১ জুলাই সারা রাত খালিশপুর থানায় রাখা হয়। পরের দিন অর্থাৎ ১২ জুলাই সন্ধ্যায় আদালতে প্রেরণ করা হয়। ১২ জুলাই সন্ধ্যায় হালিমাকে প্রিজন সেল থেকে খালিশপুর থানায় আনা হয়। আর হালিমাকে গ্রেফতার করার বিষয়টি এসআই রিয়াজ জানান। একাধিক সূত্র জানিয়েছে , সাবেক পুলিশ কমিশনার ও খালিশপুর থানার ওসি মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। আর টাকার কারনেই মামলার বাদী হন নির্যাতনকারী এসআই রিয়াজ। এই তিন পুলিশ কর্মকর্তা বাস্তহারা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ওমর, হিরন কামাল,সবুজদের আশ্রয় দাতা। তারা এসব মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে প্রকাশ্যে চলাফেরা করতো। এদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক হিসেবে টাকা নিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতে দিতো।