সাগরে নিম্নচাপ, কবে কোথায় আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় ডানা

প্রকাশঃ ২০২৪-১০-২২ - ১৪:০৫

ডেস্ক নিউজ : পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর নাম হবে ‘ডানা’। এর অর্থ স্বাধীনতা। এই নাম দিয়েছে কাতার।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এটি ২৪ তারিখে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশা রাজ্যে আঘাত হানতে পারে। তবে বাংলাদেশেও এর প্রভাব থাকবে। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ১১০ কিলোমিটার হতে পারে, যা বৃদ্ধি পেয়ে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

রোববার বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা পরে ঘনীভূত হয়ে গতকাল সোমবার সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও আজ মঙ্গলবার নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি এরপর গভীর নিম্নচাপের ধাপ পেরিয়ে সাইক্লোনের রূপ নেবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন আজ মঙ্গলবার সকালে বলেন, নিম্নচাপটি বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ঝড়ে পরিণত হলে এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশা রাজ্যে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই ঝড়ের প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনা উপকূল অঞ্চলে। চট্টগ্রাম অঞ্চলেও এই ঝড়ের প্রভাব থাকবে, তবে সেটি অনেক কম।

তিনি আরও বলেন, এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর গতিবেগ ১১০ কিলোমিটার থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। যেহেতু এটি পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে এটির প্রভাব দেখা যাবে। ওই অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ থাকবে বেশি ও স্বাভাবিক থেকে তিন-চার ফুট উচ্চতার বেশি জলোচ্ছ্বাস তৈরি হবে।

এই আবহাওয়াবিদ জানান, আগামীকাল এটি সাইক্লোনে রূপান্তরিত হলে তখন বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। কোথায়, কখন বা কত গতিবেগে আঘাত হানতে পারে তা স্পষ্ট হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে কী পরিমাণ প্রভাব পড়বে এবং জলোচ্ছ্বাস কেমন হবে, তারও ধারণা পাওয়া যাবে। সাধারণত ঝড়ের ডান দিকে বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকে, তাই এটির অগ্রভাগ যখন ভারতে আঘাত হানবে, তখন বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে বাতাসের বেগ থাকবে, বৃষ্টি হবে।

ভারতের আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২৪ তারিখে উপকূলে হাওয়ার গতিবেগ থাকবে সম্ভাব্য ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। সেটা বেড়ে ১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়ও হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সুন্দরবন উপকূলে বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। সুন্দরবন পুলিশ জেলার পক্ষ থেকে উপকূলবর্তী সাগর, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, বকখালী, পাথরপ্রতিমা ও রায়দীঘি এলাকায় মাইক নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কাকদ্বীপ মহকুমার সাগর, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা ও নামখানা ব্লকে সাইক্লোন সেন্টার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে পাঁচ মাস আগেই বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় রিমাল। ডানার এখন পর্যন্ত যে গতিবেগের ধারণা করা হচ্ছে, একই রকম গতিবেগে আঘাত হেনেছিলে ঘূর্ণিঝড় আইলা।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নিম্নচাপটি সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮২০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।