# গার্ড না থাকায় নতুন আসবাবপত্র চুরির আশংকা
# চুরি হচ্ছে টিউবওয়েলসহ ভবনের দরজা-জানাল ও গ্রীলের অংশ
কামরুল হোসেন মনি, খুলনা : সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ওপরে ব্যয়ে কলেজটির একাডেমিক ভবন, একটি গেস্ট হাউজ, দুইটি হোস্টেল ও তিনটি স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ কাজের অধিকাংশ ২০০৯ সালে সমপন্ন করা হয়। এর পর থেকেই অবহেলা, অযত্নে থাকায় ভবনগুলো তার যৌবন হারাতে শুরু করেছে। সিকিউরিটি গার্ড ও সীমানা প্রাচীর না থাকায় নির্মিত ভবনের দরজা, জানালা ও লোহার গ্রীলের টুকরো অংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে। চুরি হয়ে গেছে কলেজের টিউবওয়েলটি। নির্মিত নার্সিং কলেজ শুরু আগেই ‘ভুতুড়ে বাড়ি’ হিসেবে পরিনত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই কলেজে গেলে কর্মরত স্টাফদের সাথে আলাপকালে এ তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া ভবনগুলোর লোহার গ্রীলের টুকরো অংশ চোরেরা কেটে নেয়ার বিষয়টি চোখে পরে।
খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সেবা) ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা খুলনা নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ খালেদা বেগম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদককে বলেন, কলেজটি দ্রুত চালুর জন্য তাদের ডিজি মহাদ্বয় খুবই আন্তরিক। সীমানা প্রাচীর ও সিকিউরিটিগার্ড না থাকায় ভবনের বেশ কিছু জানালা, দরজা ও গ্রীলের লোহার টুকরো অংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে। নার্সিং ইউনিস্টিটিউট থেকে নাইট গার্ড এনে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলেজের সীমানা প্রাচীর থাকলে সামনে ২০১৮ সাল থেকেই ভর্তির কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নেয়া যেতো, কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। ভবনের অবশিষ্ট কাজের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়াও ঝুলে আছে।
নার্সিং কলেজ অফিস সূত্রে জানা যায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ১০ একর জমির ওপর ১৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায় ২০০৯ সালে। ওই সময় একটি একাডেমিক ভবন, একটি গেস্ট হাউজ, কলেজ ছাত্রীদের জন্য দুইটি হোস্টেল ও ২য় ও ৩য় শ্রেনী পদে কর্মরতদের তিনটি স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ কাজের অধিকাংশ সমপন্ন করা হয়। ২০১১ সালে একাডেমিক ভবন চালুর উদ্যেগ নিয়ে ১৩ জন শিক্ষক পদায়ন করা হলেও বর্তমানে দুই জন প্রভাষকসহ ৬ জন শিক্ষক রয়েছেন কাগজে-কলমে। তারা সবাই এখনো ডেপুটিশনে রয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন প্রভাষক মফিজ উল্লাহ, প্রভাষক রেবা মন্ডল, ডিমোনেস্ট্রেটর টেটোর আছেন শরিফুল ইসলাম, আসমাতুল নেছা, আলেয়া বেগম ও জুথিকা রানী মুখার্জী। এদের মধ্যে আবার শিক্ষা ছুটি এবং বাকীরা প্রেষনে অন্যত্র কর্মরত আছেন। এছাড়া ৩য় শ্রেনীতে ১০ জন কর্মরত আছেন। যার মধ্যে প্রেষনে আছেন ৩ জন। কর্মরত আছেন ৭ জন। এরা হচ্ছে ল্যাব সহকারি ৪ জন, কম্পিউটার অপারেটর ২ জন, স্টোর কিপার ১ জন ও ক্যাশিয়ার ১ জন রয়েছে।
খুমেক হাসপাতালের উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক ও স্বাধীনতা নার্সেস পরিষদের (স্বানাপ) খুলনা মহানগর সভাপতি জেসমিন নাহার বলেন, খুলনায় নার্সিং কলেজ এখনো চালু না হওয়ায় এ অঞ্চলের কর্মরত নার্সদের বাইরে গিয়ে প্রাইভেটভাবে বিএসসি নার্সিং কোর্স করতে হচ্ছে। এতে প্রচুর ব্যয়ের পাশাপাশি অনেকে সংসার, স্বামী-সন্তান রেখে দুই বছর দুরে অবস্থান করছেন। চলতি বছরের খুমেক হাসপাতালে স্বাস্থ্য মন্ত্রী আসলে নার্সিং কলেজ দ্রুত চালুর জন্য আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। মন্ত্রী মহাদ্বয় বিষয়টি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমাদেরকে আস্বস্ত করেন।
কলেজের স্টোর কিপার মোঃ আল মামুন বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে কলেজের জন্য বিভিন্ন আসবাবপত্র আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ড্রেসিং টেবিল ১শ’টি, ডাইনিং চেয়ার ১০৬টি, কাঠের টপ চেয়ার ২০টি, উডেন খাট ১টি, ডাইনিং টেবিল ১১টি, টেবিল ফর পেন্টি ৫টি, টিভি স্ট্যান্ড ১টি, উডেন রাইটিং চেয়ার ২৭৫টি, রিডিং টেবিল (৪ জন বসার) ৪টি, রিডিং টেবিল (৮ জন বসার) ২টি, রিডিং চেয়ার (হাতছাড়া) ১৫টি, উডেন আলমারী ২টি, বুক সেলফ ২টি, ফুল সেক্রেটারিয়েট টেবিল ১৫টি, হাতাযুক্ত কুশন চেয়ার ১১টি, হাতাযুক্ত কাঠের চেয়ার ১৯টি, ডেক্স টেবিল ৫টি, উডেন আলমারী ২টি, সোপাসেট ১টিসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র একে একে আসতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, নতুন আসবাবপত্র আসার পর রাতে বেলায় নার্সিং ইউনিস্টিটিউট থেকে হায়ার করে নাইটগার্ড এনে কাজ চালানো হচ্ছে। দিনে ও রাতে কলেজের জন্য কোন সিকিউরিটি গার্ড নেই। এই সুযোগে কলেজের ভবনের বিভিন্ন গ্রীলের লোহার অংশ চোরেরা খুলে নিয়ে গেছে। টিউবওয়েল অনেক আগেই চোরেরা খুলে নিয়ে গেছে।
খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এইচইডি) সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ১২ একর জমির ওপর ১৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে নার্সিং কলেজ এবং ১৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে আইএইচটি’র নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ কাজের দায়িত্ব পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মুন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজের দুই বছরের মাথায় নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে ৩০ মাসের মধ্যে হোস্টেল ও আবাসিক ভবনগুলো এবং ১৮ মাসের মধ্যে একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কলেজের ৯৫ ভাগ এবং আইএইচটি’র ৪৬ ভাগ শেষ হওয়ার পরও বাকি কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। ২০০৭ সালে নির্মাণ করা হয় একটি গেস্ট হাউজ, অধ্যক্ষের বাসভবন, তিনটি স্টাফ কোয়াটার, একটি একাডেমিক ভবন এবং দুটি হোস্টেল ভবন। কলেজটি চালুর জন্য ২০১১ সালে ১৩ জন শিক্ষক পদায়ন করা হলেও বর্তমানে কাগজ-কলমে মাত্র ৬ জন রয়েছেন।