তাপস কুমার বিশ্বাসঃ খুলনা ফুলতলার আইয়ান জুট মিলস এর ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটনার ৪দিনের মাথায় ফের ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে শতভাগ সিআরটি কোয়ালিটি সুতা রপ্তানিকারক এ প্রতিষ্ঠানটি চালুর বাঁশি বাজবে আজ (রোববার)। ইতিমধ্যে বৈদ্যুতিক লাইন পুনঃস্থাপন শেষে চলছে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারনের কাজ। থেমে থেমে জ¦লে উঠা আগুন নিভানোর কাজে এখনও ব্যস্ত রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট। আকস্মিক এ দূর্ঘটনার মধ্যেও কর্মরত ৫সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরী প্রদান করা হবে আজ।
গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে ফুলতলার আইয়ান জুট মিলস এ এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে। কতৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী মিলের ২ ও ৩ নং গোডাউনে রক্ষিত প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ মন কাঁচা পাট ভূস্মিভূতসহ গোডাউন ভবন এবং ১১ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খুলনা অঞ্চলের ৭টি ফায়ার স্টেশনের ১৩টি ইউনিট ৫ ঘন্টা নিরলস প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে গত ৪দিন ধরে পাট গোডাউনে থেমে থেমে আগুন জ¦লতে দেখা যায়। যে কারণে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এখনও মিলে অবস্থান করে আগুন নিয়ন্ত্রনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ দিকে স্কেভেটর মেশিনের পাশাপাশি অন্ততঃ দুই শতাধিক শ্রমিক স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বৈদ্যুতিক লাইন ইতোমধ্যে পুনঃস্থাপন ও চালু হয়েছে। আজ (রোববার) ক বর্তন থেকে (ভোর ৬টা) চালুর সাইরেন বাঁজবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
শতভাগ রপ্তানীযোগ্য সিআরটি/ সিআরএক্স কোয়ালিটি সুতা উৎপাদনকারী এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) অনুপম মিত্র বলেন, গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৩০ হাজার মেট্রিক টন কোয়ালিটি সুতা বিদেশে রপ্তানী করা হয়। এ মিলের উৎপাদিত সুতা তুরষ্কো, জাপান, ইরান, রাশিয়া, ফ্র্যান্স, জার্মান, ইতালী, আমেরিকা, সাউথ আফ্রিকা, চায়না, ইন্ডিয়াসহ প্রায় ৪৫টি দেশে রপ্তানী করা হয়। যার মাধ্যমে প্রায় ২শ’ ৯০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। এ অর্থ বছরে লক্ষমাত্র রয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন কোয়ালিটি সুতা রপ্তানীর। এর জন্য প্রয়োজন প্রায় ১৫ লক্ষ মন সি গ্রেডের কাঁচা পাট। ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমান কাঁচাপাট ক্রয় করা হলেও আগুনে বিনষ্ট হওয়ার পর পাট ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় পাট সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
গত ২০১০ সালে খুলনা-যশোর মহাসড়কের ফুলতলার বেজেরডাঙ্গা-ভাটপাড়া সড়কে ২২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এশিয়ার বৃহত্তম এক ইউনিট বিশিষ্ট সিআরটি/ সিআরএক্স কোয়ালিটি সুতা উৎপাদনকারী আইয়ান জুট মিলের পরিচালক মোঃ জহির উদ্দিন রাজীব বলেন, প্রতিদিন এ মিলে ৮৫ থেকে ৯০টন সুতা উৎপাদন হয়ে থাকে। আগামী ফেব্রুয়ারী মাস নাগাদ দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে ১৪০ থেকে ১৫০ টন উৎপাদন হবে। খুলনা, যশোর ও নড়াইল জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক ৩শিফ্ট এর মাধ্যমে মিলটি ২৪ঘন্টা চালু রেখেছে। এ ছাড়া ২৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। সপ্তাহে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা কর্মচারীদের মজুরী এবং ৩০ থেকে ৩২ লক্ষ টাকা মাসিক বেতন প্রদান করা হয। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের মজুরী প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে বুধবারে অগ্নিকান্ডের কারণে সাপ্তাহিক মজুরী পরিশোধ করা না হলেও আজ (রোববার) সেটি পরিশোধ করা হবে এবং কর্মচারীদের বেতন ৫ তারিখের আগেই পরিশোধ করা হবে। এত বড় দুর্ঘটনার পরও মাত্র ৪দিনের ব্যবধানে আজ ভোর থেকে ফের চালুর বিষয়টি শ্রমিক-কর্মচারীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে তিনি স্বাগত জানান।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একদিকে মিলে অগ্নিকান্ডে ধ্বংসস্তুপ অবসরণে সমন্বিত প্রচেষ্টা অন্যদিকে উৎপাদিত সুতা তুরস্কে রপ্তানীর উদ্দেশ্যে কাভার ভ্যানের মাধ্যমে মংলা বন্দর পাঠানো হচ্ছে। পাট বিভাগ, যান্ত্রিক বিভাগ, বৈদ্যুতিক বিভাগ, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ পুরামাত্রায় কাজ শুরু করেছে। এদিকে সরাসরি সম্পৃক্ত সাড়ে ৫সহস্রাধিক পারিবারের কর্মসংস্থানকৃত এ প্রতিষ্ঠানটি দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার খবর পেয়ে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ শেখ আকরাম হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান গাউসুল আজম হাদি, ইউএনও মাশরুবা ফেরদৌস, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার, শরীফ মোহাম্মাদ ভুইয়া শিপলুসহ এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ব্যক্তিবর্গ সমবেদনা জানাতে আসেন।
এ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পন্য সামগ্রী আমদানী কারকদের পক্ষ থেকে এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর পক্ষ থেকে সমবেদনা জ্ঞাপন এবং সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পুণঃরায় ব্যক্ত করা হয়। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ¦ মোঃ ফেরদাউস ভুইয়া আকস্মিক এ দুর্যোগের সময়ে সমবেদনা জ্ঞাপনকারী বিদেশী বায়ারস, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, এলাকাবাসী ও শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।