খুলনা : বকেয়া পাওনা পরিশোধ দাবিতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৮ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন বন্ধ করে কর্মবিরতি কর্মসূচী পালন করছে। মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে টানা ৫ম দিনে মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে শ্রমিকরা এ কর্মসূচী পালন করে। তবে নওয়াপাড়া অঞ্চলের কার্পেটিং জুট মিল চালু রয়েছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জুট মিল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের ডাকা ১২ দিনের কর্মসূচীর গতকাল শেষ হয়েছে। আগামী ৫ জানুয়ারী ঢাকা বিজেএমসি সিবিএ কার্যালয়ে পরিষদের অস্থায়ী অফিসে এক আলোচনা সভায় কর্মসূচীর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে কর্মবিরতি কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছে।
সূত্র জানায়, পাটজাত পন্য বিক্রি না হওয়া এবং বিজেএমসি অর্থ না দেয়ার কারণে মিল কর্তপক্ষ শ্রমিকদের মজুরী ও কর্মকর্ত- কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে একের পর এক মজুরী-বেতন বকেয়া হয়। খালিশপুর এলাকার প্লাটিনামে ৭ সপ্তাহ মজুরী ও ৩ মাসের বেতন, ক্রিসেন্টে ৮ সপ্তাহ মজুরী, ৩ মাসের বেতন, দৌলতপুরের ৪ সপ্তাহ মজুরী ও ৩ মাসের বেতন, দিঘলিয়ার ষ্টার মিলে ৬ সপ্তাহর মজুরী, ৩ মাসের বেতন, আটরা ইর্ষ্টাণ মিলে ৫ সপ্তাহর মজুরী ও ৩ মাসের, নওয়াপাড়া এলাকার জেজেআই মিলে ১০ সপ্তাহর মজুরী ও ৩ মাসের বেতন রয়েছে। শ্রমিকদের ন্যয্য পাওনা পরিশোধসহ ১১ দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জুট মিল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদ ১২ দিনের কর্মসূচীর ডাক দেন। এই কর্মসূচী অনুযায়ী গত ২৬ নভেম্বর থেকে শ্রমিকরা রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জুট মিল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের ডাকা ১২ দিনের কর্মসূচী শেষ হতে না হতেই গত ২৮ ডিসেম্বর শ্রমিকরা নিজ উদ্যেগে ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, ষ্টার, ইর্ষ্টাণ, আলীম ও জেজেআই এবং ৩০ ডিসেম্বর থেকে খালিশপুর জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে কর্মবিরতি শুরু।
কর্মবিরতির টানা ৫ম দিনে মঙ্গলাবর ভোর ৬টায় খালিশপুরের ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, দিঘলিয়ার ষ্টার, আটরা শিল্প এলাকার আলীম, ইষ্টার্ন এবং নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার জেজেআই, জুট মিলের শ্রমিকরা শ্রমিকরা কারখানার ভিতরে প্রবেশ না করে স্ব স্ব মিল গেটে অবস্থান করে। সেখানে শ্রমিক সমাবেশে অংশ নেয়। পরে শ্রমিকরা খালিশপুর, আটরা ও নওায়াপাড়া শিল্পাঞ্চল এলাকার রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে দফা দফা বিক্ষোভ করে। কর্মসূচী চলাকালে খালিশপুর বিআইডিসি রোড, আটরা ও নওয়াপাড়ার খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা যান বহন চলাচল সম্পূর্ন বন্ধ করে দেয়।
এ সময় দু’পাশের যাত্রীরা চরম দূর্ভোগে পড়ে। সকাল ১০ শ্রমিকরা কারখানার ভিতরে প্রবেশ না করে স্ব স্ব মিল গেটে অবস্থান করে। পরে রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের ডাকে ২৪ ঘন্টা মিল ধর্মঘট সফল করতে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেয়। “আমাদের দাবি, আমাদের দবি, মানতে হবে, মেনে নাও। অবিলম্বে শ্রমিকদের পাওনা দিতে হবে, দিয়ে দাও।’ এভাবেই দফা দফায় চলতে থাকে শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিল। একদিকে ঘরে পরিবারের নিরব কান্নার আহাজারী, অন্যদিকে রাজপথে না খাওয়া শ্রমিকদের বুক ফাটা শ্লোগান। সব কিছু মিলিয়ে ভারী হয়ে ওঠে খালিশপুর, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার আকাশ-বাতাস। পৃথক পৃথক বিক্ষোভ মিছিল বিআইডিসি রোড, নতুন রাস্তা, খুলা-যশোর মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে স্ব স্ব মিল গেটে পথ সভার মাধ্যমে মিছিলটি শেষ হয়।
শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রায়ত্ত্ব জুট মিল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের আহবায়ক সরাদার মোতাহার উদ্দীন, ক্রিসেন্ট মিলের সিবিএ সাধারন সম্পদাক সোহরাব হোসেন, সাবেক সভাপতি দ্বীন ইসলাম, মোঃ আবু জাফর, মোঃ পান্নু মিয়া মোঃ মোল্লা আঃ রশিদ ও বাচ্চু মিয়া, প্লাটিনামের সাবেক সভাপতি কাওসার আলী মৃধা, সাবেক সাধারন সম্পাদক খলিলুর রহমান, সহ- সম্পাদক মনিরুল ইসলাম শিকদার, মোল্লা নাসির ,খালিশপুর জুট মিলের মিজানুর রহামান মানিক, সরদার আলী আহম্মেদ, দিঘলিয়ার ষ্টার মিলের সিবিএ“র সভাপতি মল্লিক বেল্লাল হোসেন, সাবেক সভাপতি গাজী মাসুম, শাহিন গাজী, আবুর কালাম। আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চল এলাকার ইর্ষ্টান, আলীম এবং জেজেধাই জুট মিলের শ্রমিকরা অনুরুপ কর্মসূচী পালন করেছে। স্ব স্ব মিল গেটের শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতা করেন ইর্ষ্টান মিলের সিবিএ’র সভাপতি মোঃ আলাউদ্দীন, সাধারন সম্পাদক সৈয়দ জাকির হোসেন, সহ-সভাপতি আফসার উদ্দীন ও সহ- সম্পাদক আলম সরদার, আলীম মিলের সাইফুল ইসলাম লিঠু , সাধারন সম্পাদক সরাদার আঃ হামিদ সহ সিবিএ নন সিবিএ নেতৃবৃন্দ। এদিকে খুলনা- যশোর অঞ্চলের ৯ পাটকলের মধ্যে শুধু নওয়াপাড়া এলাকার কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা আন্দোলনে অংশ নেইনি। শ্রমিকরা নিজ নিজ কর্মস্থলে তাদের উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে।