খুলনায় সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের দ্বিতীয় দফা তদন্ত সম্পন্ন

প্রকাশঃ ২০১৯-০১-২৭ - ২১:০৪

কামরুল হোসেন মনি : খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক এর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের বিষয়ে দ্বিতীয় দফা তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি তদন্ত শেষে প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজি) অফিসের তিন সদস্যের একটি কমিটি খুলনায় তদন্তে আসেন। তদন্ত বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ইতোমধ্যে সিভিল সার্জন বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
জানা গেছে, খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক এর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর পার-টু অধিশাখা-স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ যুগ্ম মহাসচিব এ কে এম ফজলুল হক সাক্ষরিত এক পত্রে উল্লেখ করা হয় (স্মারক নং ৬৬২) ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য খুলনা বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ সুশান্ত কুমার রায়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই পত্রটি গত ১৯ ডিসেম্বর খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসে পৌঁছে। তদন্তে সভাপতি ছিলেন পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ সুশান্ত কুমার রায় ও পরিচালনায় ছিলেন পরিচালক (স্বাস্থ্য) এর দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম জাহাতাব হোসেন। সূত্র মতে, তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা কয়রা ও পাইকগাছায় সরেজমিনে গেলে বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র খুঁজে পান। তদন্ত শেষে প্রতিবেদনটি ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি উল্লিখিত স্মারক বরাবর পাঠিয়ে দেন।
খুলনা বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ সুশান্ত কুমার রায় বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় তদন্ত করে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট কয়রা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মোঃ আলমগীর খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক ও কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুজাত আহম্মেদ এর বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ দায়ের করেন। মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজি) এর লাইন ডাইরেক্টর হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট এর বরাবর অভিযোগপত্রটি প্রেরণ করা হয়। তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, আমরা হাসপাতালের সমস্ত অধিদপ্তরে লাইসেন্স ও সরকারি সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে চলা সত্ত্বেও কয়রায় বেআইনীভাবে যে সমস্ত ক্লিনিক চলছে তাদের মতো আমাকে মাসিক মাসোহারা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। আমি দিতে অস্বীকার করলে সিভিল সার্জনের রোষানলে পরি। আমি এবং আমাকে নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করছেন।
তৎকালীন মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং লাইন ডাইরেক্টর হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট অধ্যাপক ডাঃ কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন উপ-পরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য সহকারী পরিচালক রয়েছেন। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এই তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর তদেন্ত ডিজি অফিসের তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি খুলনায় আসেন। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে শেষের দিকে এই কমিটি খুলনায় অবস্থান করেন। তদন্তে এনডিসি, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, যুগ্ম সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য) ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় (নির্মাণ শাখা) এই সব পদে থাকা তিনজন কর্মকর্তা এ তদন্ত করে ঢাকায় ফিরে যান।
সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে বরাবর দাবি করে আসছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩ জুলাই পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের বেতবুনিয়া গ্রামের ওয়াচকুুরুনীর স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন (২২) সন্তান প্রসবের জন্য কয়রার সাগর নার্সিং হোমে ভর্তি হয়। এখানে অদক্ষ লোকদ্বারা ডেলিভারী করলে প্রসূতির একটি কন্যা সন্তান হয়। পরবর্তীতে সন্তান প্রসবের জটিলতা দেখা দিলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীকে চিকিৎসা প্রদানে ব্যর্থ হয়। এরপর রোগীর স্বজনরা প্রসূতিকে পাইকগাছার নূরজাহান মেমোরিয়াল ক্লিনিকে ভর্তি করলে চিকিৎসার অভাবে সেখানে প্রসূতি আনোয়ারা খাতুন মারা যান। এ অভিযোগের ভিত্তিতে পাইকগাছা ও কয়রার দুটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনায় ডেপুটি সিভিল সার্জনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি তদন্ত শেষে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে রিপোর্টটি জমা দেন।