বৈঠা থেকে বৈঠাঘাটা-পরবর্তী নাম বটিয়াঘাটা উপজেলা

প্রকাশঃ ২০১৮-০১-২৩ - ১৫:২১

ইন্দ্রজিৎ টিকাদার বটিয়াঘাটা : বটিয়াঘাটা উপজেলার বৈঠাঘাটা থেকে থানার নামকরন হয়। যা পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে বটিয়াঘাটা উপজেলা নামে খ্যাতি লাভ করে। ১৮৬০ সালে নৌ-পুলিশ ক্যাম্প ছিল। পরে ১৮৯২ সালে উক্ত নৌ ক্যাম্পটি থানায় রূপান্তরিত হয়। সাধারনভাবে জানা যায়, তৎকালীন খুলনা থেকে কলকাতায় স্টিমার যোগে যাওয়ার পথে বটিয়াঘাটায় একটি ঘাট ছিল ও ঘাটের অন্তর্গত একটি বাজার ছিল এবং এ বাজারটি সুন্দরবন এলাকায় অন্তর্ভূক্ত ছিল। এ বাজারে সুন্দরবনের সুন্দরী কাঠের তৈরী বৈঠা বিক্রী করার জন্য বিখ্যাত ছিল। পরবর্তীতে বাজারের ঘাটা ও বৈঠা বিক্রীর নাম অনুসারে বৈঠাঘাটা নাম হয়। ১৯৮৩ সালে যার বর্তমান নাম হয় বটিয়াঘাটা উপজেলা। এ উপজেলার ইউনিয়নের সংখ্যা ৭টি। ইউনিয়ন গুলো হলো- জলমা, বটিয়াঘাটা সদর, গঙ্গারামপুর, সুরখালী, ভান্ডারকোট, বালিয়াডাঙ্গা ও আমিরপুর। আয়তনে ২৩৫.৩২ বর্গ কিলোমিটার বা ৫৮,১২৪.১২ একর। ভৌগলিক অবস্থান ২২.৪৬ অক্ষাংশ এবং ৮৯.২৪ দ্রাঘিমাংশ, যাহা জেলা সদর থেকে ১০ কি.মি দূরে অবস্থিত। এ উপজেলার সীমানা-উত্তরে খুলনা সদর ও রূপসা উপজেলা, পূর্বে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট ও রামপাল উপজেলা, দক্ষিনে দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলা এবং পশ্চিমে ডুমুরিয়া উপজেলা অবস্থিত। এ উপজেলার জনসাধারনের শিক্ষার হার ৫৪.৯০%, পেশা কৃষি ও সাংস্কৃতি, দারিদ্রের হার ১০.৪৩%, কুটির শিল্প ও হস্তচালিত সহ শিল্পের সংখ্যা ১০টি। বিভিন্ন সম্পদ রযেছে পর্যটন কেন্দ্র ৩টি, ভূতের বাড়ী পার্ক, গোপালখালী পার্ক(ব্যক্তিগত) এবং সরকারী উদ্যোগে রাসেল স্মৃতি ইকো পার্ক নির্মানাধীন রয়েছে। বনজ সম্পদ ও খনিজ সম্পদ নাই। কৃষি জমি রয়েছে ৪৩.৫০৩ একর ও মৎস্য খামার রয়েছে ৩১৬৫টি এবং কিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারি ডেয়ারী ও পোল্টি ফার্ম রয়েছে। এ উপজেলায় গ্রামের সংখ্যা ১১৭টি, মৌজার সংখ্যা ১৩২, মোট জনসংখ্যা ১,৭১,৬৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৬৬৮৫ ও মহিলা ৮৫০০৬ জন। এ উপজেলার বড় নদী কাজীবাছা, ঝপঝপিয়া, ভদ্রা ও শৈলমারী। মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৯৯টি, এর মধ্যে বেসরকারী কলেজের সংখ্যা ৮টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৯টি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২৪টি, আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা ২টি, কওমী মাদ্রাসার সংখ্যা ৫টি, ইফতাদায়ী মাদ্রাসার সংখ্যা ১৩টি এবং এনজিও পরিচালিত কলেজের সংখ্যা ১৩টি। উ্েলখ্যযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলেজ বটিয়াঘাটা মহাবিদ্যালয়, শহীদ আবুল কাশেম কলেজ, খগেন্দ্রনাথ মহিলা কলেজ ও খারাবাদ বাইনতলা স্কুল এন্ড কলেজ এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় বটিয়াঘাটা থানা হেড কোয়াটার পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চক্রাখালী মাধ্যমিক, বয়ারভাঙ্গা বিশ্বেম্বর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কওমী মাদ্রাসা ফুলবাড়ী আলীম মাদ্রাসা। এ ছাড়া উপজেলায় সরকারী বেসরকারী উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ঠিকরাবাদ পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির অফিস, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা আঞ্চলিক অফিস, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাব-৬ এর হেড অফিস, আবহাওয়া অফিস এবং থানা বটিয়াঘাটা, লবনচরা ও হরিনটানা থানা অবস্থিত। অন্যদিকে বেসরকারী উদ্যোগে বেশ কিছু শিল্প করখানা গড়ে উঠছে। খানজাহান আলী সেতুর বাইপাস সড়ক এ উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এবং রামপাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের লাইন ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি সুন্দরবনের পর্যটন কেন্দ্রের যোগাযোগের নদী ও স্থলপথের অভ’ত পূর্ব উন্নতি সাধিত হওয়ায় দিন দিন পর্যটনদের সংখ্যা বাড়ছে। এতে এ অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বলম্বী হচ্ছে। এছাড়া বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলে অর্থনৈতিকে চাঙ্গা করতে ইতিমধ্যে বটিয়াঘাটা জলমা ইউনিয়নে তেতুলতলা মৌজায় অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। অর্থনৈতিক জোন গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের মানুষ আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈকিভাবে স্বালম্বী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এ ছাড়া এ উপজেলার জলমা, বটিয়াঘাটা সহ বিভিন্ন ইউনিয়নকে ডেভলমেন্ট এলাকা হিসাবে ঘোষনা করেছে। অন্যদিকে এ উপজেলার বাল্য বিবাহ, মাদক, সন্ত্রাস ইফটিজিং, জঙ্গী ও ভূমি সন্ত্রাস রোধে উপজেলার চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশীষ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যানদ্বয় নিতাই চন্দ্র গাইন ও বুলু রায় গাঙ্গুলী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মহিউদ্দীন, থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাম্মেল হক মামুন সহ উপজেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা ব্যাপক কাজ করে চলেছেন।