অভিযোগ আছে, টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন কমিটিতে নাম অর্ন্তভুক্ত করতেন আনিস। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ইচ্ছেমতো সদস্য পদ দিয়েও আয় করেছেন আনিস। এসব কমিটিতে কে বিএনপি-জামায়াতের আর কে যুদ্ধাপরাধী পরিবারের সন্তান সেটিও বিবেচনায় নেয়া হতো না। আর এসব কিছুতেই প্রচ্ছন্ন সায় ছিল বহিস্কৃত চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের।
শুক্রাবাদের একটি বাড়ির মালিক ছিলেন ফয়সাল খান মুন্না। করতেন যুবলীগ। একসময় বাড়িটি বিক্রি করেন যুবলীগের বহিস্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসের কাছে। পরে, বাড়িটির পুরো দাম না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন ফয়সালের সঙ্গে। গত ৩১ডিসেম্বর আনিসের কাছ থেকে পাওনা টাকা আনতে গিয়ে রাত সাড়ে এগারোটায় রহস্যজনক ভাবে সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ফয়সালের।
এ বিষয়ে ফয়সাল খান মুন্নার স্ত্রী বলেন, ‘আমি কোনো টাকা পাইনি। আমার হাসবেন্ড মারা যাওয়ার পর এখন অনেকেই অনেক কথা বলছে। তবে আমি টাকা পাইনি।’
গেল ১২ বছরে শুধু রাজধানীতেই নামে বেনামে ২০টির বেশি ফ্ল্যাট, একাধিক বাড়ি এবং ৫০টির মত দোকান কিনেছেন আনিস। এছাড়া গ্রামের বাড়িতে পেট্রোল পাম্প, শতাধিক একর জায়গার মালিক হয়েছেন। ময়মনসিংহেও দেড়শো বিঘার ওপর জায়গা রয়েছে আনিসের।
অভিযোগ রয়েছে কমিটি বাণিজ্য ছিল এসব সম্পদ অর্জনের অন্যতম উৎস। কোন নোটিশ ছাড়াই টাকার বিনিময়ে জেলা, উপজেলা কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দিয়ে দিতেন আনিস।
৫ লাখ থেকে শুরু করে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পরিচয়ে কার্ড ছাপার অনুমতি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে আনিসের বিরুদ্ধে। আর এসব টাকা নেয়ার দালালি করতো আনিসের সহযোগি সাবেক ছাত্রদল নেতা চয়ন।
ভুক্তভোগী একজন জানান, ‘চাকরির জন্য ৫ লাখ টাকা নিয়েছিলো সে, কিন্তু চাকরি হয়নি। পরে যুবলীগের সদস্য পদ দিতে চেয়ে বলেছিলো, এই পদ দিয়ে অনেক কিছু করা যাবে।’ অন্য আরেকজন জানান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য বানাতে ৭ লাখ টাকা নেন তিনি।
তার অবৈধ উপার্জনের একটি বড় অংশ যুবলীগের বহিস্কৃত চেয়ারম্যান পেতেন বলে একরকম ওপেন সিক্রেট ছিল নেতাকর্মীদের কাছে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সরদার মোহাম্মদ আলী মিন্টু বলেন, ‘এই অভিযোগ এখন দেখছি ১০০ ভাগ সত্য। সেটা না হলে সে কিভাবে হাজার-১২শ’ কোটি টাকার মালিক হলো। সে যে এত বড় সাহস দেখিয়েছে এর শাস্তি হওয়া উচিৎ।’
ওমর ফারুক, সম্রাট, আনিসের মত নেতাদের কারণে যুবলীগ যে ইমেজ সংকটে পড়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সংগঠনটির নেতৃত্বে স্বচ্ছ কাউকে আনা সময়ের দাবি বলে মন্তব্য যুবলীগ নেতাদের। যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন, ‘সৎ, মেধাবী, উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন নেতৃত্ব আনা গেলে যুবলীগের সুনাম ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’
এদিকে, যুবলীগ চেয়ারম্যানের পদ হারানো ওমর ফারুক চৌধুরীর সব ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের ব্যাংক হিসাবও এই স্থগিতাদেশের আওতায় রয়েছে। পাশাপাশি ওমর ফারুকের দুই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান লেক ভিউ প্রোপার্টিজ এবং রাও কনস্ট্রাকশনের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।