ডুমুরিয়ায় শিশু কন্যাকে গোয়াল ঘরে আটকে রাখার অভিযোগ : আটক ৩

প্রকাশঃ ২০১৭-১১-০৫ - ০০:১৩

ডুমুরিয়া (খুলনা) : ডুমুরিয়া উপজেলা সদরে সৎ মা, পিতা ও দাদী কর্তৃক লাবনী খান (৬) নামে মাতৃহারা একটি শিশু কন্যাকে একটি গোয়াল ঘরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তার ওপর নানাভাবে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে দীর্ঘদিন ধরেই তাকে ওই ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হত। এদিকে, বিষয়টি জানতে পেরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহায়তায় শনিবার দুপুরে পুলিশ ওই বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। একই সঙ্গে শিশু নির্যাতনের অপরাধে সৎ মা রুপা বেগম (২০), বাবা আফজাল খান (৪৬) এবং দাদী মর্জিনা বেগমকে (৬৫) আটক করা হয়। এ ঘটনায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের (ডুমুরিয়া ইউনিয়ন) মাঠকর্মী আফছার হোসেন বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বিকেলে আদালত আটককৃতদের কারাগারে প্রেরণ এবং উদ্ধারকৃত শিশুটিকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের আইতলা নামক এলাকার বাসিন্দা আফজাল খান বছর খানেক আগে তার প্রথম স্ত্রীকে মানসিক প্রতিবন্দী দাবী করে তালাক দিয়ে রুপা বেগমকে বিয়ে করেন। কিন্তু দু’ সন্তান আব্দুর রহমান (১৫) ও লাবনী খানকে (৬) রেখে স্বামী পরিত্যক্তা প্রথম স্ত্রী শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় ধুকে ধুকে সম্প্রতি মারা যান। এদিকে, আফজাল খান তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঘরে আনার পর শিশু কন্যা লাবনী’র ওপর শারীরকসহ বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন শুরু হয়। এক পর্যায়ে লাবনীকে তারা নিজেদের সঙ্গে না রেখে রাত-দিন বাড়ির একটি পরিত্যাক্ত গোয়াল ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখতে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ পায়। বিষয়টি সমাজসেবা অধিদপ্তর ও পুলিশের দৃষ্টি গোচর হলে শনিবার সমাজসেবা অধিদপ্তর খুলনার প্রবেশন অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলাম পুলিশ নিয়ে শিশু লাবনীকে উদ্ধার করেন। সমাজসেবা অধিদপ্তর খুলনার প্রবেশন অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুটিকে নির্যাতন এবং গোয়াল ঘরে আটকে রাখার বিষয়টি ফেসবুকে দেখে তিনি তাকে উদ্ধারের তৎপরতা শুরু করেন। একই সঙ্গে শিশু নির্যাতনের অপরাধে সৎ মা রুপা বেগম, বাবা আফজাল খান এবং দাদী মর্জিনা বেগমকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় লাবনীর পিতা, সৎ মা ও দাদীকে আসামি করে ডুমুরিয়া থানায় শিশু আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাবিল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক তিনি পুলিশ পাঠিয়ে শিশুটিকে উদ্ধারসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি এসআই কেরামত আলীকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, বিকেলে শিশুটিসহ আটককৃতদের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে (ডুমুরিয়া) হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক রওশন আরা রহমান আটককৃতদের কারাগারে প্রেরণ এবং উদ্ধারকৃত শিশুটিকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। শিশুটিকে বর্তমানে গল্লামারি শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। আজ রোববার এ বিষয়ে আদালতে ফের শুনানির কথা রয়েছে।